মানুষ স্বপ্নবিলাসী। স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। আর পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে ঢুকলে সেই পালে আরেকটু হাওয়া লাগে। স্বপ্ন দেখেন মনের মতো বাড়ি। কারো চাই পছন্দের বাইক বা গাড়ি। কারো স্বপ্ন বিশ্বভ্রমণ । কেউ শুরু করতে চান নতুন ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান। এ সব কিছুতেই প্রয়োজন পর্যাপ্ত টাকা । অন্যদিকে বয়স আর খরচের সম্পর্ক সমান্তরাল। দিন যত যায় জীবনযাপনের খরচ ততই বাড়ে । এক সময় গিয়ে মোটা অংকের টাকা দিয়ে স্বপ্নগুলো পূরণ করা একটু কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই চাকরি জীবনের শুরু থেকেই সঞ্চয় করা জরুরী। কারণ সঞ্চয় যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, ভবিষ্যতে জরুরি অনেক প্রয়োজনে তা তখন কাজে লাগে।
শুধু স্বপ্নপূরণ নয়, নিয়মিত সঞ্চয়ের আছে আরও কিছু সুবিধা। চলুন একনজরে দেখে নিই সেগুলো:
আর্থিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা
বাবা-মায়ের অসুস্থতা, চাকরি হারানো কিংবা জীবনে অপ্রত্যাশিত অন্য কোনো খরচ আসতেই পারে । সঞ্চয় থাকলে এই ধরনের পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ কমে । আর পরিস্থিতি সামাল দেওয়াও অনেকটা সহজ হয়।
ঋণ কমানো
সঞ্চয় থাকলে উচ্চসুদে ঋণ নেওয়া থেকে বেঁচে থাকা যায়। আবার আগের কোনো থাকলে তা শোধ করাও সহজ হয়ে যায়। তাই সঞ্চয় ঋণের ফাঁদ থেকে আপনাকে দূরে রাখতে পারে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা
হাতে যখন পর্যাপ্ত সঞ্চয় থাকে, তখন আর্থিক সিদ্ধান্তগুলো স্বাধীনভাবে নেওয়া যায় । চাকরির ক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত জীবনে কোনো পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হলেও হাতে যথেষ্ট বিকল্প থাকে।
লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা
বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, বিয়ের প্রস্তুতি, সন্তানের শিক্ষা, নিজের ব্যবসা শুরু করা, ড্রিম ডেস্টিনেশনে ঘুরতে যাওয়া বা অবসর পরিকল্পনা– এই ধরনের বড় স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। নিয়মিত সঞ্চয় এই লক্ষ্যগুলো ধাপে ধাপে অর্জনে সাহায্য করে।
বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি
সঞ্চিত অর্থ পরবর্তীতে বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করে আরও অর্থ উপার্জনের সুযোগ তৈরি করা যায়। স্টক মার্কেট, বন্ড ও রিয়েল এস্টেটের মতো বিনিয়োগ আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক সুবিধা দিতে পারে।
মানসিক প্রশান্তি
আর্থিক অনিশ্চয়তা মানুষের মনে উদ্বেগ বাড়ায়। পর্যাপ্ত সঞ্চয় থাকলে এই উদ্বেগ অনেকাংশে কমে যায়। আর জীবনযাপন সহজ হয়ে ওঠে।
এবার দেখে নেয়া যাক কোথায় শুরু করতে পারেন জীবনের প্রথম সঞ্চয়।
যাপনের সব কিছুকেই সহজ করেছে আধুনিক প্রযুক্তি। সঞ্চয়ের ধারাও এসেছে পরিবর্তন। এখন কাজের মাঝে যানজট পেরিয়ে সশরীরে ব্যাংকে উপস্থিত হতে হয় না। কষ্টে উপার্জিত অর্থ নিরাপদে সঞ্চয় করা যায় মুঠোফোনেই। আর সেই সুযোগটি করে দিয়েছে দেশের সুপরিচিত ফিন্যানশিয়াল বিজনেস কোম্পানি বিকাশ । এখন ডিজিটাল সঞ্চয় মানেই বিকাশ অ্যাপ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয়। বিকাশ অ্যাপে সঞ্চয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখান থেকেই দেখে নেয়া যায় বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপিএস রেট। আর ডিপিএস খোলাও খুব সোজা। তাই ডিপিএস সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যাটি নেহাত কম নয়। ৪৫ থেকে ৫০ লাখ প্রায়।
নতুন ডিপিএস খুলতে বিকাশ অ্যাকাউন্টে প্রয়োজনীয় অর্থ রেখে অ্যাপের হোমস্ক্রিনে 'সেভিংস' আইকনে ট্যাপ করে 'নতুন সেভিংস খুলুন'-এ ক্লিক করতে হবে। সেভিংসের ধরন থেকে 'ডিপিএস' বা 'ইসলামিক ডিপিএস' বেছে নিয়ে ডিপিএস টাইপ থেকে 'সাপ্তাহিক' বা 'মাসিক' বেছে নিয়ে সুবিধা মেয়াদ (ডিপিএসের ধরন অনুযায়ী ৬ মাস থেকে ৪ বছর) বাছাই করতে হবে। তারপর, প্রতি সপ্তাহে বা মাসে যে পরিমাণ টাকা জমাতে ইচ্ছুক (২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০০ টাকা পর্যন্ত) নির্বাচন করতে হবে। পরের ধাপে আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করতে হবে। ব্যাংকের তালিকা থেকে পছন্দ অনুযায়ী আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, বা সিটি ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে।
এরপর নমিনি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ডিপিএস-এর বিস্তারিত দেখে , নিয়ম ও শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ে ও বুঝে সম্মতি দিতে হবে। সবশেষে বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নাম্বার দিয়ে স্ক্রিনের নিচের অংশ ট্যাপ করে ধরে রাখলেই ডিপিএস-এর আবেদন সম্পন্ন হয়ে যাবে । বিকাশ ও ব্যাংক থেকে ফোনে চলে আসবে নিশ্চিতকরণ ম্যাসেজ। উল্লেখ্য, বিকাশ অ্যাপ থেকে যেকোনো গ্রাহক চাইলে একাধিক ডিপিএস খুলতে পারেন।
প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিপিএস-এর টাকা জমা নেয়া হয়। ডিপিএস-এর মেয়াদপূর্ণ হয়ে যাবার পর ইন্টারেস্টসহ মূল টাকা চলে আসে বিকাশ অ্যাকাউন্টে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো কোনো খরচ ছাড়াই ক্যাশ আউট করা যায় এই সঞ্চয় । অন্যদিকে জরুরি প্রয়োজনে মেয়াদপূর্তীর আগেই সেভিংস সেবা বন্ধ করতে চাইলে গ্রাহক তা অ্যাপ থেকেই করতে পারবেন। কাগজপত্র নিয়ে কোথাও দৌড়-ঝাপ করার ঝামেলা ছাড়াই।
তরুণ পেশাজীবী যারা প্রথমবারের মতো সেভিংস করতে চান তাদের জন্য বিকাশ-এ ডিপিএস খোলার অভিজ্ঞতা বেশ সুখকর। ডব্লিউ-থ্রি ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের জুনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নাফিয়া হোসেন জানান তার অভিজ্ঞতার কথা। জানান বিকাশ কীভাবে তার ব্যস্ত জীবনকে সহজ করে তুলেছে। তিনি বলেন, 'চাকরি শুরু করার পর থেকেই চিন্তা করছিলাম একটি ফোন কেনার জন্য প্রতিমাসে কিছু টাকা জমাবো। তবে দৈনন্দিন ব্যস্ততার কারণে হয়ে উঠছিলো না। পরে এক বন্ধুর কাছে শুনে বিকাশ অ্যাপ থেকে একটা ব্যাংকে মাত্র কয়েক মিনিটে ছয়মাস মেয়াদী একটা ডিপিএস খুলে ফেলি। জীবনের প্রথম সেভিংস করার জন্য কোথাও যেতেও হয়নি, আবার কোনো পেপারওয়ার্কও লাগেনি। এই ডিপিএস-এর মেয়াদপূর্ণ হলেই পছন্দের ফোনটি কিনে ফেলবো।'
এদিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে এফসিপিএস পার্ট-২ এর ট্রেনিং করছেন ডা. নাজিয়া হোসেন মীম। তিনিও সম্প্রতি একটি ডিপিএস খুলেছেন বিকাশ অ্যাপ থেকে। অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মেডিকেল ডিগ্রিগুলোর জন্য পরীক্ষা দেওয়া বেশ ব্যয়বহুল। এফসিপিএস পার্ট-২ ট্রেনিং-এর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে স্বীকৃত এমআরসিএস পার্ট-২ এর জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছি। আর ব্যয়বহুল এই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিমাসে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে টাকা জমাচ্ছি। সবকিছু ঠিক থাকলে সামনের বছর ডিপিএস-এ জমানো টাকা দিয়েই এই পরীক্ষার জন্য রেজিট্রেশন করতে পারবো বলে আশা করছি।'
বিকাশের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, 'বিকাশ যেকোনো শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবনকেই গুছিয়ে দিতে পারে সেভিংস বা সঞ্চয়ের মাধ্যমে। নতুন চাকরি শুরু করা মানেই জীবনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ। অর্থের ম্যানেজমেন্ট রপ্ত করতে পারাটা তখন খুব জরুরী। আর তারই একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে- বেতনটা হাতে পেয়ে ডিপিএস খুলে মাসিক বা সাপ্তাহিক সেভিংস করা। কর্মজীবনের শুরুতে সেই কাজটাকেই সহজ করে দিয়েছে বিকাশ অ্যাপ, যা দিয়ে ঘরে বসেই পছন্দের ব্যাংকে ডিপিএস শুরু করা যায়। একবার কেবল শুরু করে দিলেই হল, বাকী কাজটা এগিয়ে নেবে আপনার বিকাশ অ্যাপটাই।'
ছবি: ইন্সটাগ্রাম