বর্তমান সময়ে তরুণদের মধ্যে আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলেছে ডায়াবেটিস রোগটি। অসংক্রামক ব্যধিগুলোর মধ্যে অন্যতম মারাত্মক আর কষ্টদায়ক হলো ডায়াবেটিস। আপনার বংশে কারও ডায়াবেটিস না থাকলেও আপনি এ রোগের স্বীকার হতে পারেন। আজ ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবারে ২০২৩ সালে এ দিবসের প্রতিপাদ্য হিসেবে বলা হচ্ছে, 'নো ইয়োর রিসক, নো ইয়োর রেস্পন্স'। অর্থাৎ ঝুঁকিগুলো জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য প্রথমে আসলে ডায়াবেটিস রোগের দিক থেকে আপনি কতটা ঝুঁকিতে আছেন তা জেনে নিতে হবে। এখানে সাধারণভাবে টাইপ টু ডায়াবেটিসের কথাই বলা হচ্ছে।
আমাদের মধ্যে একধরনের মানসিকতা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে ডায়াবেটিস শুধু বয়স্কদেরই হয়ে থাকে। তবে সরকারি ও বেসরকারি পোস্ট কোভিড সেবাদানকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তরুণ-তরুণীদের এক বিশাল অংশ আসছেন ডায়াবেটিস অথবা প্রিডায়াবেটিসের লক্ষণ নিয়ে। উপরন্তু আরও আশঙ্কা ব্যাপার হলো, এই অপেক্ষাকৃত কম বয়সী জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই সচেতনতা ও উপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাবে শনাক্তকরণের বাইরে রয়ে যাচ্ছে। জানা না থাকায় তারা ভেতরে–ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যহানি তো হচ্ছেই, এমনকি উপেক্ষা করা যাচ্ছে না তাদের মৃত্যুঝুঁকিও।
আমরা এখানে আসলে তরুণদের টাইপ টু ডায়াবেটিসের কথাই বলছি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোভিড–পরবর্তী সময়ে কীভাবে অল্প বয়সীদের মধ্যে এভাবে ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়? এ প্রক্রিয়ার আসলে ভিন্ন ভিন্ন রূপ রয়েছে। প্রথমত, এটা হতে পারে যে কারও ডায়াবেটিস হয়েছে কিন্তু তা শনাক্ত হয়নি। আবার কারও হয়তো প্রিডায়াবেটিস বা সর্বোচ্চ সীমারেখার কাছাকাছি সুগার লেভেল রয়েছেন লম্বা সময় ধরে । এ ছাড়া কেউ কেউ হয়তো বংশে ডায়াবেটিসের ইতিহাস, স্থূলতা, ত্রুটিপূর্ণ জীবনযাপনের পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে ছিলেন। এরপর যেকোনো ইনফেকশন হওয়ায় ইনসুলিন প্রতিরোধ প্রবণতা তৈরি হতে পারে অন্য সব হরমোনের মতোই। এর ফলে অবশ্যম্ভাবীভাবেই তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন।
১. ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া।
২. প্রস্রাবের বেগে ঘুম ভেঙে যাওয়া বা দিনেও আগের চেয়ে অনেক বেশিবার মূত্র ত্যাগ করা।
৩. আগের তুলনায় অনেক বেশি তৃষ্ণা পাওয়া।
৪. চোখের দৃষ্টি ঝাপসা অনুভব করা।
৫. শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া বা রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে হারানো ওজন পুনরুদ্ধার করতে না পারা।
৬. ক্ষত সহজে না শুকানো।
৭. অতিরিক্ত ক্লান্তি।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এ ক্ষেত্রে প্রথম কর্তব্য। কারণ, তথ্য বলছে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে প্রিডায়াবেটিক ব্যক্তিদের পুরোপুরিভাবে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে আসে। তবে যদি এমনিতেই শরীর ভেঙে পড়ে, ওজন অতিরিক্ত হ্রাস পায় তবে মাংসপেশি পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্য স্থির করলেও ওজন যেন সেভাবে না বাড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণভাবে বিএমআই ২৫-এর কম থাকাই ভালো।
এরপরই আসে নিয়মিত ব্যায়ামের বিষয়। এর ফলে শরীরে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বজায় থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং বংশগত প্রবণতা থাকলেও টাইপ টু ডায়াবেটিস অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। যেকোনো সাধারণ ব্যায়াম, যেমন নিয়মিত হাঁটাও এ ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।
খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রেও দিতে হবে সমান মনোযোগ। অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। শর্করা গ্রহণ করতে হবে পরিমিত। কোনো রকমের চরম ডায়েট পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে না।
যেকোনো ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে সব বয়সীদেরই উচিত চিকিৎসকের পরামর্শমতে রক্ত ও মূত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াবেটিস আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া। আর যদি প্রিডায়াবেটিস বা ডায়াবেটিস হয়েই যায়, তবে চিকিৎসকের অধীন উপযোগী ডায়েট, ব্যায়াম, নিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে।
সব ধরনের ডায়াবেটিস রোগীদের সপ্তাহে অন্তত একদিন রক্তের গ্লুকোজ মাপা উচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত হাঁটার ও ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ সঠিক খাদ্যাভ্যাস আর ব্যায়ামের মাধ্যমে তরুণদের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল।
ছবি: পেকজেলস ডট কম