চা স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জন্য আশার আলো। কারণ, সবুজ চায়ে ইজিসিজি নামক একধরনের উপাদান পাওয়া যায়, যা রক্তের প্লাটিলেট নিয়ন্ত্রণ করে। প্লাটিলেট রক্ত পরিসঞ্চালনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি মাংসপেশির গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখ। ইজিসিজি শুধু প্লাটিলেট নিয়ন্ত্রণই নয়, বরং টিউমার, কিডনি, লিভারের রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। এ জন্য ভারতের ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকেরা চায়ের নাম দিয়েছেন ‘মহৌষধ’।
রক্ত চলাচল নিয়মিত এবং অব্যাহত রাখার জন্য দিনে ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা দরকার। এর ফলে কিডনি ভালোভাবে কাজ করবে, প্রস্রাবের মধ্য দিয়ে দেহের বিষ নিঃসৃত হবে এবং প্রস্রাব পরিষ্কার হবে। যখন রক্তের বিষাক্ত পদার্থ কিডনির মাধ্যমে বের করে দেওয়া যায় না, তখন সেসব বর্জ্য সেখানেই জমতে থাকে এবং কিডনির ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। আরও অধিক বিষাক্ত পদার্থ জমে উঠলে রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই কিডনি ও মূত্রনালি ঠিক রাখতে গ্রিন টি ও ব্ল্যাক টি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কালো চা তৈরির উপায়: ১ চা–চামচ যেকোনো চায়ের পাতা ১ কাপ পানিতে দিয়ে অর্ধেক কাপ হওয়া অবধি ফুটিয়ে নিতে হবে। এবার ছেঁকে নিয়ে অর্ধেক কাপ পানিতে (ফ্রিজের নয়) মেশাতে হবে। অন্তত ১৫ দিন ধরে এই গরম গরম পান করতে হবে।
মানসিক চাপ ঝেড়ে ফেলে তরতাজা হয়ে উঠতে চায়ের জুড়ি নেই। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) ডিপার্টমেন্ট অব এপিডেমিওলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথের একদল গবেষক দেখেছেন, যাঁরা ছয় সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন চার কাপ করে ব্ল্যাক টি খান, তাঁদের দেহে মানসিক চাপের জন্য দায়ী হরমোনের নিঃসরণ অনেক কম। এমনকি জটিল সব কাজের পরও খুব দ্রুত তাঁরা সজীব হয়ে ওঠেন। গবেষক দলের সদস্য এন্ড্রু স্টেপটো জানান, ধারাবাহিক মানসিক চাপ অবসাদ এবং হৃদ্রোগের জন্য দায়ী। মানসিক চাপের কারণ যে হরমোন সেটির মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে চা কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত জাপানি বিশেষজ্ঞদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে সবুজ চা পান অন্তত এক-চতুর্থাংশ হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় বলে দাবি করা হয়েছে। জাপানের তোহোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ৪০ হাজারের বেশি লোকের ওপর গবেষণা করে এ তথ্য তাঁরা দিয়েছেন। যাঁদের ওপর গবেষণা করা হয়েছে, তাঁদের বয়স ৪০ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ৫৩০ জন বয়স্ক লোক পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই ১১ বছরে নানা কারণে তাঁদের মধ্য থেকে মোট ৪ হাজার ২০৯ জন লোক মৃত্যুবরণ করেছেন। ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে সিভিডিতে (কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ) মারা গেছে ৮৯২ জন এবং ক্যানসারে মারা গেছে ১ হাজার ১৩৪ জন।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন ১ কাপ চা পান করেন, তাঁদের চেয়ে দিনে ৫ কাপ চা পানকারীদের মারাত্মক অসুস্থতজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি ১৬ শতাংশ কম। পাশাপাশি দিনে ৫ কাপ চা পানকারীর হৃদ্রোগজনিত মৃত্যুর আশঙ্কা ২৬ শতাংশ কম। এ গবেষণায় আরও বলা হয়, সবুজ চা পান পুরুষদের তুলনায় নারীদের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। দিনে ৫ কাপ চা পানকারী নারীরা দিনে ১ কাপ চা পান কারী নারীদের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম ঝুঁকিতে রয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক দাবি করেছেন, দিনে ৩ কাপের বেশি চা পান করলে তা পানির চেয়েও বেশি উপকারী। তাঁরা জানিয়েছেন, চা পানির মতোই শরীরের তরলের স্বল্পতা পূরণ করতে পারে। পাশাপাশি হৃদ্রোগ ও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে রোধ করতে পারে। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন জার্নাল–এ প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটি পানি খুব একটা পান করেন না এবং যাঁরা নিয়মিত দৈনিক তিন বা তারও অধিক কাপ চা পান করেন, এমন একদল স্বেচ্ছাসেবীর ওপর চালানো গবেষণার ফলাফল।
গবেষক কেরি রুক্সটনের মতে, চা পানে শরীরে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট জুগিয়ে শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে। তিনি ডেইলি মেইলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে আরও জানান, অনেকেই ভাবে প্রতিদিন চা পান করলে তাদের শরীরে পানি শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে তৃষ্ণার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে, যা একদমই ভ্রান্ত ধারণা।
মনে রাখতে হবে, কনডেন্সড মিল্ক অথবা গুঁড়া দুধ মিশ্রিত শরবত চা আর এখানে বর্ণনা করা চা এক নয়। সাধারণ চা পাতা গরম পানিতে চিনি ছাড়া তৈরি ও ব্ল্যাক টি আর গ্রিন টি নিয়ে আলেচনা করা হয়েছে৷
লেখক: খাদ্যপথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ