লবণ, চিনি বা বিভিন্ন মসলা আমাদের খাবারের তালিকার নিত্যসঙ্গী। খাদ্য হিসেবে আমরা যে লবণ গ্রহণ করি, তা মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ সোডিয়াম থাকে ও বাকি ৬০ শতাংশ ক্লোরাইড থাকে। যেকোনো খাবার যদি বেশি খাওয়া হয়, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যদি কম খাওয়া হয়, তাহলেও কিন্তু ক্ষতির কারণ হতে পারে। লবণের ক্ষেত্রেও তা–ই। লবণ খাওয়া নিয়ে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কিছু মারাত্মক খারাপ প্রভাব রয়েছে। অতিরিক্ত লবণ খেলে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি মানুষই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করে। পূর্ণ বয়স্ক একজন মানুষ দিনে প্রায় ৪৩১০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করেন। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মানুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ২০০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম বা ৫ গ্রামের কম লবণ খাওয়া উচিত। শিশুদের ক্ষেত্রে এর পরিমাণ আরও কম। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ বছরের বেশি বয়সী এবং গর্ভবতী নারীরা প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম খেতে পারেন।
সংস্থাটি বলছে, বেশি মাত্রায় লবণ খাওয়ার কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ১৮ লাখ ৯০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এনএইচএস জানিয়েছে, অতিরিক্ত লবণ খেলে উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি মারাত্মক হারে বেড়ে যায়। এতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়, এমনকি হাড় থেকেও ক্যালসিয়াম শুষেও নিতে পারে।
আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে পেশি দুর্বলতা অনুভব করেন, তবে এটি শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়ামের লক্ষণ হতে পারে। এগুলো ছাড়াও উচ্চ সোডিয়াম লেভেলের অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘন ঘন তৃষ্ণা, বেশির ভাগ সময় হালকা মাথাব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব, শরীর ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
আবার অন্যদিকে অতিরিক্ত কম লবণ খাওয়ারও কিছু ক্ষতিকর দিক আছে। আমাদের শরীরে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে লবণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদি আমরা সেই পরিমাণ লবণ না খাই, তাহলে স্বাস্থ্যে উপকারী উপাদানের ভারসাম্য বজায় থাকে না। লবণ কম খাওয়ার ফলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়তে পারে। আর এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়ে। টাইপ টু ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে কম লবণ খাওয়ার ফলে।
লবণে থাকে সোডিয়াম। আর সঠিক পরিমাণ সোডিয়াম শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয়। তা রক্তচাপ বজায় রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ আচমকা কমে গেলে এর ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া শরীরে শক্তির অভাব দেখা দেয় কম লবণ ব্যবহারের ফলে। এমন হলে সারাক্ষণই ক্লান্তভাব দেখা দেয়। তাই সঠিক পরিমাণ লবণ গ্রহণ আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ছবি: পেকজেলসডটকম
লেখক: মেডিকেল অফিসার, জয়নুল হক সিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল