অসহনীয় গরমের কারণে প্রতিদিন গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে, এমনকি মারাও যাচ্ছে দেশের মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে গরমে থাকলে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে আমাদের শরীরে ঘটতে পারে নানা রকমের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এগুলোর লক্ষণ ও প্রাথমিক প্রতিকার জেনে নিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে বাঁচানো যাবে অমূল্য জীবন। এবার এই অসুস্থতার ধরনগুলো জেনে নেওয়া যাক।
একটানা রোদে বা চুলার পাশে থাকার কারণে ত্বকে হিট র্যাশ বের হতে পারে। এতে ত্বকে লালচে বর্ণ ধারণ করা, র্যাশ, পিম্পল বা ব্রণ, ফোসকা, চুলকানিসহ জ্বালাপোড়া হতে পারে।
ভেজা কাপড় বা পাতলা কাপড়ে মোড়ানো বরফ বা আইস প্যাক ত্বকে লাগালে কিছুটা আরাম পাওয়া যাবে। ধীরে ধীরে, চাপ দিয়ে দিয়ে, সময় নিয়ে ত্বকে লাগাতে হবে। নখ দিয়ে চুলকানো যাবে না। না বুঝে যেকোনো সুগন্ধি বা কেমিক্যালযুক্ত পাউডার বা ক্রিম ব্যবহার করা উচিত হবে না।
গরমে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। শরীর থেকে পানি কমে যাওয়ায় ও লবণের তারতম্য হওয়ার ফলে বেদনাদায়ক ক্র্যাম্প তৈরি হয়, যা হিট ক্র্যাম্প নামে পরিচিত। হাত ও পায়ে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
হিট ক্র্যাম্প হলে আক্রান্ত স্থানকে বিশ্রাম দেওয়া ও কোনো রকম চাপ প্রয়োগ না করা। ইলেকট্রোলাইটসমৃদ্ধ পানীয়, যেমন ওরস্যালাইন ও ডাবের পানি পান করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে। আস্তে আস্তে সহনীয় পর্যায়ে স্ট্রেচ বা ম্যাসাজ করা যেতে পারে৷ তবে যতক্ষণ পর্যন্ত টান লাগা ভাব দূর না হয়, সেই মাংসপেশিতে জোর প্রয়োগ বা টানাটানি করা ঠিক হবে না।
টানা রোদে থাকার কারণে শরীরের ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়াকে হিট সিনকোপ বলা হয়। এ ছাড়া ডিহাইড্রেশনের ফলেও হিট সিনকোপ হতে পারে। হিট সিনকোপে মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছায়াযুক্ত শীতল স্থানে নিয়ে যেতে হবে। এরপরও অবস্থার উন্নতি না হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
অত্যধিক ঘামের কারণে লবণ ও পানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় এই অবস্থা হতে পারে। হিট এগজশনের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, তৃষ্ণা, মাথা ঘোরা, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, মাথাব্যথা ইত্যাদি।
ঠান্ডা স্থানে বিশ্রাম নেওয়া। পর্যাপ্ত পানি পান করা। শরীরকে ঠান্ডা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া। গোসল করা বা শরীরে ঠান্ডা ভেজা তোয়ালে দিয়ে মোছা। ভারী পোশাক কমিয়ে ফেলা ও ঢিলে করে দেওয়া।
এই গরমে এসব অসুস্থতা এড়াতে কিছু জিনিস আমাদের মাথায় রেখে সেগুলো প্রাত্যহিক চর্চায় পরিণত করা জরুরি। যেমন—
—যতটা সম্ভব শীতল জায়গায় থাকা।
—অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে না যাওয়া।
—বাড়ির বাইরে গেলেও ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার করা।
—ঢিলেঢালা, পাতলা পোশাক পরা।
—সারা দিন যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা।
—সহজপাচ্য খাবার, বিশেষ করে তরলজাতীয় খাবার খাওয়া।
—ভাজাপোড়া ও গুরুপাক খাবার না খাওয়া।
—দীর্ঘ সময় একটানা ভারী শারীরিক ব্যায়াম না করা, ব্যায়ামের মাঝখানে প্রয়োজনমতো বিরতি দেওয়া ও পানি পান করা।
—চুলার পাশে দীর্ঘক্ষণ থাকতে হলে সতর্ক থাকা।
এরপরও গরমে নিজে বা পাশের কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে মাথা ঠান্ডা রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে আমরা হিট স্ট্রোকের মতো মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারি। প্রাথমিক পরিচর্যা বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও উন্নতি না হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে।
লেখক: মেডিকেল অফিসার, কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, গাজীপুর
ছবি: পেকজেলসডটকম