
প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দ্রুত হাঁটেন, তারা ধীরে হাঁটার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দিন বাঁচেন। সেই মানুষটির ওজন যেমনই হোক না কেন। এই গবেষণাটি করেছেন আমেরিকার ফিটনেস কোচ টেইলর জোনাথন ইয়েটস ও তাঁর সহকর্মীরা। যা প্রকাশিত হয়েছে মায়ো ক্লিনিক্যাল প্রসিডিংস জার্নালে।

গবেষকদের মতে, দ্রুত হাঁটা হলো শরীরের সামগ্রিক ফিটনেসের সরাসরি চিহ্ন। এটি ইঙ্গিত করে আপনার হৃদ্যন্ত্র কতটা সুস্থ, ফুসফুস কতটা শক্তিশালী, দেহ কতটা সহনশীল ও পেশি ও স্নায়ুতন্ত্র কতটা সক্রিয়। অর্থাৎ দ্রুত হাঁটতে পারা মানে শরীরের ভেতরের ‘ইঞ্জিন’ ভালো চলছে। গবেষণা বলছে দ্রুত হাঁটার অভ্যাস আয়ু ১৫ বছর পর্যন্ত বাড়াতে পারে। ওজন কম-বেশি বিষয় নয়, আসল বিষয় হলো হাঁটার গতি। বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন শরীরের ওজনই সুস্থতার প্রধান মাপকাঠি। কিন্তু গবেষণা বলছে, ধীরে হাঁটা একজন কম ওজনের মানুষের ঝুঁকিও দ্রুত হাঁটা একজন বেশি ওজনের মানুষের তুলনায় বেশি হতে পারে। অর্থাৎ শরীর পাতলা হলেই আপনি বেশি সুস্থ এ ধারণা আর ঠিক নয়। যারা দ্রুত হাঁটেন, তারা ধীরে হাঁটাদের তুলনায় গড়ে ১৫ বছর বেশি বাঁচেন, শরীরের ওজন যাই হোক না কেন।

এই গবেষণা প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে যে সুস্থতার প্রধান মাপকাঠি হলো ওজন বা বিএমআই (BMI)।
কারণ এতে দেখা গেছে—
ওজন বেশি হলেও যারা দ্রুত হাঁটেন, তাদের আয়ু বেশি
ওজন কম হলেও যারা ধীরে হাঁটেন, তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি
অর্থাৎ হাঁটার গতি বিএমআই (BMI) এর চেয়েও শক্তিশালী স্বাস্থ্যসূচক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষণার সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হলো মোটা হওয়া সত্ত্বেও দ্রুত হাঁটেন তাহলে আপনার আয়ু ধীর গতির হাঁটাহাঁটিকারীর তুলনায় বেশি। এই ব্যাপারটি সব ওজন শ্রেণিতে একই রকম পাওয়া গেছে। অর্থাৎ স্বাস্থ্য শুধু ওজনের ওপরে নির্ভর করে না বরং আপনি কীভাবে চলাফেরা করেন, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সহজভাবে দ্রুত হাঁটা বলতে এমন গতি যেখানে আপনি হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে পারবেন, কিন্তু গান গাওয়া কঠিন মনে হবে। সাধারণভাবে ঘন্টায় ৪.৮-৬.৪ কিলোমিটার। প্রতি মিনিটে ১১৫-১২০ স্টেপ । আপনি চাইলে মোবাইল অ্যাপ বা স্মার্ট ওয়াচ ব্যবহার করে নিজের হাঁটার গতি মাপতে পারেন।

হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
ওজন কমাতে কার্যকর
মনোযোগ ও ব্রেন-হেলথ উন্নত করে
দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা বাড়ায়

যদি আপনি ধীরে হাঁটেন, তাহলে ধীরে ধীরে গতি বাড়ান—
প্রথম সপ্তাহ: ১০ মিনিট দ্রুত হাঁটার চেষ্টা
দ্বিতীয় সপ্তাহ: ২০ মিনিট
তৃতীয় সপ্তাহ: ৩০ মিনিট
এরপর প্রতিদিন ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটার লক্ষ্য স্থির করুন। এভাবেই শরীর সহজে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য মানে শুধু শরীরের ওজন নয়। স্বাস্থ্য মানে আপনি কত দ্রুত হাঁটতে পারেন। তাই আজ থেকে প্রতিদিনের হাঁটায় একটু গতি বাড়ান। হাঁটার গতি বাড়লে আয়ুও বাড়তে পারে এটাই বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার ।
সূত্র: ভেরি ওয়েল ফিট
ছবি: এআই