খাওয়ার পরে পেট ফেঁপে যাওয়া খুবই সাধারণ সমস্যা। যদিও পেট ফাঁপার অনেক কারণ থাকতে পারে; সাধারণভাবে আপনার পেটে আইবিএসজনিত সমস্যা নেই; কিন্তু কিছু খাওয়ার পরে পেটে গ্যাস জমে ফুলে উঠে শরীরে অস্বস্তি দেখা দেয়, অস্থিরতা বাড়তে থাকে। এমন সমস্যা হলে একটি এলাচিই হতে পারে প্রাকৃতিক নিদান।
এলাচ বা এলাচি (ইলেট্টারিয়া কার্ডামম)। এর অন্যান্য নাম হচ্ছে কার্ডামম, মালাবার কার্ডামম, সিলন কার্ডামম। মসলা হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। এটি একটি সুগন্ধি গাছ। এলাচি সুগন্ধিযুক্ত একটি মসলা। এলাচিকে বলা হয় মসলার রানি। খাবারে স্বাদ বাড়ানোর জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এলাচিতে রয়েছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট, মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটসহ কিছু ঔষধি গুণ, যা সেবনে মানবদেহের অনেক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম এই ছোট মসলা। এলাচির মধ্যে কালো এলাচি বেশি কার্যকর। আমাদের দেশে যে এলাচি পাওয়া যায়, তাতেও কাজ হবে।
খাদ্য–অসহিষ্ণুতা: অনেকের ল্যাকটোজ (দুধে থাকা চিনি), গ্লুটেন (গমে থাকা প্রোটিন) বা অন্যান্য খাবারের উপাদানের প্রতি অসহিষ্ণুতা থাকে। এসব খাবার খেলে পেটে গ্যাস জমে ও ফুলে যায়। সাধারণত গমের আটায় তৈরি বিস্কুট, পরোটা, রুটি, বার্গার ও পিৎজা খেলে পেট ফুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস): যাদের এই সমস্যা আছে, তাদের এই দীর্ঘস্থায়ী রোগে পেট ফোলা, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে।
অতিরিক্ত গ্যাস: কার্বনেটেড পানীয়, ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাবার, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি খেলে বা খুব দ্রুত খেলে পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমতে পারে।
খাওয়ার অভ্যাস: খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া, খাওয়ার সময় কথা বলা, ঠিকমতো না চিবিয়ে গিলে ফেলা ইত্যাদি অভ্যাস পেট ফোলার কারণ হতে পারে।
অন্যান্য কারণ: ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, নানা ধরনের ওষুধে পেট ফুলে উঠতে পারে। যার দরুন কিছু ওষুধের সঙ্গে পেটে গ্যাস কমানোর জন্য অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়া হয়; কিন্তু সবার ওষুধ সহ্য হয় না। এর কারণেও সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া হরমোনের পরিবর্তনও পেট ফোলার কারণ হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী পেট ফোলার সমস্যা থাকলে অন্ত্রের গুরুতর রোগে হতে পারে। অন্ত্রের রোগে চিকিৎসার চেয়ে খাদ্য বিষয়ে মনোযোগী হলে সমাধানের দিকে যেতে পারা সহজ হবে। নয়তো পেটের অস্বস্তি আপনার জীবনের অংশ হয়ে উঠবে।
সবচেয়ে ভালো হচ্ছে খাওয়ার কিছু সময়ের পর এলাচির একটি দানা আস্তে আস্তে চিবিয়ে খান। এতে ৫ থেকে ১০ মিনিটে পেট ফোলার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সেই সঙ্গে কিছু নিয়ম মেনে চলুন যাতে সমস্যাটা রোগে রূপান্তর না হয়। খাওয়ার পরে পেট ফুলে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও দীর্ঘস্থায়ী বা ঘন ঘন হলে এটি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
• ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার ধীরে ধীরে খাওয়া: আপেল, পেয়ারা, গাজর ইত্যাদি ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার হজমে সাহায্য করে। তবে একবারে অনেক ফাইবার খেলে পেট ফুলতে পারে, তাই ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়াতে হবে।
• গ্যাস তৈরি করে এমন খাবার এড়িয়ে চলা: কার্বনেটেড পানীয়, ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাবার, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি খাবার গ্যাস তৈরি করে।
• দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য: যদি ল্যাকটোজ–অসহিষ্ণুতা থাকে, তাহলে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এড়িয়ে চলা বা ল্যাকটোজমুক্ত বিকল্প খাবার খাওয়া।
• খাওয়ার সময় পানি পান না করা: খাওয়ার সময় পানি পান করলে পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমতে পারে।
এলাচি ছাড়াও প্রাকৃতিক কিছু উপাদান আছে যা আপনার পেটকে স্বস্তি দিতে পারে। যেমন: আদা পেটের গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। পুদিনা চা পেটের ব্যথা ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে। মৌরি হজমে সাহায্য করে। তাই পেট ফোলা নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন না করে প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসরণ করলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র।
ছবি: উইকিপিডিয়া ও পেকজেলসডটকম