
শীতের সন্ধ্যায় পাড়ায় পাড়ায় নেট লাগিয়ে শীতের মৌসুমে জমে ওঠে ব্যাডমিন্টন খেলা। নব্বই দশকের অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও ব্যাডমিন্টন এখনো টিকে আছে। ছোট বড় সবাই অংশ নেয় এই খেলায়। নস্টালজিক এই খেলা এবার পেলও ভিন্ন মাত্রা। নিছক আনন্দের জন্য নয় এবার বিজ্ঞান বলছে এই খেলা বাড়াবে আপনার আয়ু।

ব্যাডমিন্টন এমন একটি খেলা, যেখানে হঠাৎ দ্রুত নড়াচড়া আর ধারাবাহিক কার্ডিও অ্যাক্টিভিটি একসঙ্গে কাজ করে। এই দুইয়ের সমন্বয় হৃদ্যন্ত্রকে শক্তিশালী করে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমায়। এই ধরনের ক্রনিক রোগগুলো আমাদের আয়ু কমিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী।

এই খেলাটি শরীরের সমন্বয়, ভারসাম্য ও রিফ্লেক্স উন্নত করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব দক্ষতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ভালো ব্যালান্স ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমায়, আঘাত এড়াতে সাহায্য করে এবং মানুষকে দীর্ঘ সময় সক্রিয় থাকতে সক্ষম করে যা দীর্ঘায়ুর জন্য অত্যন্ত জরুরি।
ব্যাডমিন্টন শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কও সক্রিয় রাখে। কর্ক কোথায় যাবে তা অনুমান করা, প্রতিপক্ষের নড়াচড়া বোঝা এবং মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া এসবই মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এই মন-শরীরের সংযোগ স্মৃতিশক্তি ও মানসিক তীক্ষ্ণতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং বয়সজনিত মানসিক অবক্ষয় ধীর করতে পারে।

এই খেলাটির আরেকটি বড় শক্তি হলো এর সামাজিক দিক। ব্যাডমিন্টন সাধারণত সঙ্গী বা দলের সঙ্গে খেলা হয়, যা সামাজিক যোগাযোগ বাড়ায়। গবেষণায় বারবার প্রমাণিত হয়েছে নিয়মিত সামাজিক মেলামেশা মানসিক চাপ কমায়, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এবং জীবনকাল বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাডমিন্টন টেকসই একটি অভ্যাস। এটি আনন্দদায়ক, সহজলভ্য এবং বিভিন্ন বয়স ও ফিটনেস প্রেমী মানুষের সঙ্গেও মানিয়ে যায়। যখন ব্যায়াম আনন্দের হয়ে ওঠে, তখন সেটি আর চাপ নয় বরং জীবনের অংশ হয়ে যায়। আর সেই ধারাবাহিকতাই ধীরে ধীরে গড়ে তোলে দীর্ঘ, সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবন।

এই শীতে পরিবারের সবার সঙ্গে কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ছোটখাটো ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট হয়ে যেতেই পারে। কিছু সময়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে বেরিয়ে র্যাকেট হাতে নামুন কোর্টে। হাসি, আড্ডা আর খেলাধুলার ভেতরেই লুকিয়ে আছে শীতের সবচেয়ে নির্মল আনন্দ।
ছবি: এআই