ভালো থাকার জন্য বর্তমান সময়ে প্রচুর অলটারনেটিভ ওয়েলবিইং টেকনিকের প্রচলন বাড়ছে। তবে এগুলো মেনে চলার আগে দেখতে হবে, পদ্ধতিগুলোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কতটুকু মজবুত। যুগ যুগ ধরেই খালি পায়ে মাটিতে হাঁটার ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। আর এর বিভিন্ন যুক্তিযুক্ত সুফলের কথা জানতে পেরেই বিশেষজ্ঞরা এভাবে বা অন্য কোনো উপায়ে পৃথিবীপৃষ্ঠের সঙ্গে আমাদের দেহের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে আর্থিং বা গ্রাউন্ডিং করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
আর্থিং বা গ্রাউন্ডিং-এর ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হলো, মুক্ত ইলেকট্রনের প্রাচুর্যের কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠ ঋণাত্মক চার্জ বহন করে। যখন মানবদেহ পৃথিবীপৃষ্ঠের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়, তখন এই ইলেকট্রনগুলো শরীরে প্রবাহিত হয়ে মানবদেহের ধনাত্মক ফ্রি রেডিক্যালগুলোকে নিরপেক্ষ করে, যা বিভিন্ন রোগে অবদান রাখতে পারে। পৃথিবীর মধ্যে বিদ্যমান বৈদ্যুতিক পরিবাহিতার সংস্পর্শ মানবদেহে অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের মতো কাজ করে যা ইমিউন সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, গ্রাউন্ডিং বা আর্থিংয়ের মাধ্যমে শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার বা আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।
কীভাবে গ্রাউন্ডিং বা আর্থিংয়ের অনুশীলন করা যেতে পারে
* খালি পায়ে হাঁটা
* মাটিতে বা ঘাসে শুয়ে থাকা
* পুকুর, নদী বা সমুদ্রের পানিতে সাতার কাটা
* বিভিন্ন প্রকার গ্রাউন্ডিং সরঞ্জাম ব্যবহার করা। যেমন, গ্রাউন্ডিং ম্যাট, গ্রাউন্ডিং কম্বল, গ্রাউন্ডিং মোজা ইত্যাদি।
গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং অনুশীলনের উপকারিতা
‘দ্য জার্নাল অব অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন’ ২০১৭ সালে কতিপয় মানুষের ওপর গ্রাউন্ডিং অনুশীলন করে নিম্নোক্ত উপকারিতার কথা প্রকাশ করেন।
১। দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
২। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা উপশম করে।
৩। উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কাটাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
৪। ঘুমের সমস্যা অনেকাংশে দূর করে।
৫। হৃদ্রোগজনিত সমস্যা উপশম করে।
৬। করটিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে ভূমিকা রাখে।
আধুনিক শিল্পায়নের যুগে মানুষের সরাসরি মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া খুবই দুর্লভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে শারীরিক অসুস্থতাসহ মৃত্যুহার অনেক বেশি। তাই আমরা এই যান্ত্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে একটু সময় বের করে কিছুটা সময় পৃথিবীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত তো হতেই পারি।
ছবি: ফ্রিপিক