মৌমাছি। ক্ষুদ্র একটি প্রাণী। অথচ শরীরে ঠিক কতটুকু বিষ নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে সে! যে মৌমাছি ফুলে ফুলে উড়ে মধু আহরণ করে বেড়ায়, সেই মৌমাছিই কিনা হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। সম্প্রতি মৌমাছি গিলে ফেলে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কারিশমা কাপুরের সাবেক স্বামী সঞ্জয় কাপুরের। কিন্তু মৌমাছি গিলে ফেললে কী হয়, যার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মৌমাছি গলার ভেতর ঢুকে কামড়ালে প্রাণহানি হতে পারে। দেখা দিতে পারে কাউনিস সিনড্রোম। এই সিনড্রোমে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী প্রধান রক্তনালি করোনারি আর্টারিতে সমস্যা দেখা যায়। রক্ত সঞ্চালনের হার একধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। যার কারণে শুরু হয় প্রদাহ। আর এ থেকেই শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ সময় গেলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
অন্য একটি গবেষণা বলছে, মৌমাছির হুলে যে বিষ থাকে তার কারণে শরীরে অ্যালার্জি দেখা যায়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে অ্যানাফিল্যাক্সিস বলে। এতে আচমকা রক্তচাপ কমে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়। গলার ভেতরে ঢুকে মাত্র একবার মৌমাছি কামড়ালেও এমন ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন যে কেউ।
মৌমাছি বিষ ছড়ানোর জন্য তাদের হুলে থাকা বিষ ব্যবহার করে। এই বিষে এমন উপাদান থাকে, যা ব্যথা, জ্বালাপোড়া, ফোলাভাব বা অ্যালার্জির মতো প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
আত্মরক্ষা বা আক্রমণের জন্য মৌমাছি যখন হুল ফোটায়, তখন তাদের বিষথলি থেকে বিষ মাংসপেশিতে প্রবেশ করে। এই বিষে মেলিটিন, অ্যাপামিন ও ফসফোলিপেজ এ২ নামক উপাদান থাকে। এই উপাদানগুলো শরীরের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং স্নায়ুকে প্রভাবিত করে বলে ব্যথা হয়। মানুষের ক্ষেত্রে মৌমাছির বিষে হতে পারে মারাত্মক অ্যালার্জি।
বর্তমানে হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। বয়স ৩০ পার হলেই এ ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত। কিছু উপসর্গ দেখলে তাই সাবধান হয়ে যেতে হবে আগেই। যেমন বুকে অস্বস্তি, বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে সমস্যা, হুটহাট ঠান্ডা লাগা, বমি বমি ভাব, অত্যধিক ক্লান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার মাত্রা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চর্বিজাতীয় খাবার যত কম খাওয়া যায় তত ভালো। নিয়মিত সবজি ও ফল খেতে হবে। শারীরিক চর্চা করতে হবে। ঘুমাতে হবে পর্যাপ্ত।
হার্ট অ্যাটাক কখন হবে সে অপেক্ষায় না থেকে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। শরীরের যেকোনো সমস্যায় লক্ষণগুলোকে ছোট করে না দেখে আগে থেকেই বরং এগুলোকে প্রতিরোধ করতে হবে। সেই সঙ্গে যে যখন যেভাবেই আছি, কী খাচ্ছি, কোন পরিবেশে আছি, সেখানে কোনো ক্ষতিকর পোকামাকড় রয়েছে কি না, সেগুলোর দিকেও নজর রাখতে হবে সর্বক্ষণ। কখন কোথা থেকে বিপদ এসে জীবনটুকুও কেড়ে নিয়ে চলে যাবে, সেটাও বুঝে উঠতে পারব না।
ছবি: পেকজেলসডটকম ও ইনস্টাগ্রাম