সাধারণ আসন, অসাধারণ উপকার!
শেয়ার করুন
ফলো করুন

মেদভুঁড়ি দূর করে, বাড়তি ওজন কমায়

দেহে পেশি যত সক্রিয় থাকবে, মেদ কমাতেও তত সহায়ক হবে। বঙ্গাসনে দেহের পেশি সক্রিয় থাকে বলে অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করে। ফলে মেদ দূর হয়। অতিরিক্ত ওজনও কমানো যায় বঙ্গাসন করে। শরীরে পেশি তৈরি করতে এবং মেদ ঝরাতে টেস্টোস্টেরন ও গ্রোথ হরমোন প্রয়োজন।

জার্নাল অব দ্য স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিংয়ে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা লেগপ্রেস মেশিন ব্যবহার করে ব্যায়াম করেন, তাঁদের তুলনায় বঙ্গাসন করেছেন—এমন ব্যক্তির টেস্টোস্টেরন ১৬ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তা বঙ্গাসন করার সঙ্গে সঙ্গেই!

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, বঙ্গাসন কর্টিসল ও ইনসুলিন-জাতীয় হরমোন উৎপাদনপ্রক্রিয়াকে বেগবান ও ভারসাম্যপূর্ণ করে। এই হরমোনগুলো দৈহিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, যা আপনাকে আরও কর্মক্ষম করবে এবং বেশি ক্যালরি খরচে সাহায্য করবে। ফলে বাড়তি মেদ ঝরিয়ে আপনি হয়ে উঠবেন নীরোগ, সুঠাম ও আকর্ষণীয়!

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘজীবন

নিয়মিত বঙ্গাসনের চর্চায় বাড়বে আয়ু। শারীরিক দুর্বলতার সঙ্গে অধিক মৃত্যুহার সম্পর্কিত, বলছেন বিজ্ঞানীরা। বঙ্গাসনচর্চার মাধ্যমে শরীরকে সবল, প্রাণবন্ত ও চনমনে করার মাধ্যমে আপনি সেই ঝুঁকিই কমাচ্ছেন!

রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে ও ক্যালরি বার্ন আউট করতে
বঙ্গাসন করার সময় কাফ মাসল এবং হিপ ও পেটে টান পরে। ফলে সেখানে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। এতে কমে রক্তের কোলেস্টেরল। কারণ, মাসলগুলো তখন এই কোলেস্টেরলকে বার্ন আউট করে ফেলে। রক্তে কোলেস্টেরল কমার সঙ্গে সঙ্গে কমে যায় হার্ট অ্যাটাক ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।

বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের ক্যালরি বার্নিং এফেক্ট নিয়ে সমীক্ষা চালান একদল গবেষক। এতে দেখা যায়, বঙ্গাসনে প্রতি মিনিটে গড়ে ৩৫ ক্যালরি খরচ হয়, যা পরীক্ষায় করা অন্যান্য ব্যায়ামের মধ্যে সর্বাধিক।

অন্যদিকে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৭০ কেজি ওজনের এক ব্যক্তি ৩০ মিনিট বঙ্গাসন করে প্রায় ২২৩ ক্যালরি খরচ করতে পারেন। ট্রেডমিলে এক মিনিট হাঁটলে যে পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয়, তার তুলনায় বঙ্গাসনে মিনিটে খরচ হয় ৩-৬ গুণ বেশি ক্যালরি!

জগিং বা সাইক্লিংয়ের মতো অ্যারোবিক এক্সারসাইজগুলোতেও বেশ ক্যালরি খরচ হয়, তবে নিয়মিত ও সঠিক ভঙ্গিমায় বঙ্গাসনচর্চায় এমন কিছু ক্যালরি খরচ হয়, যা অন্য কোনো ব্যায়ামে হয় না।

বিজ্ঞাপন

হজম সহজ করে

আমরা যখন চেয়ারে বা সোফায় হেলান দিয়ে বা গা এলিয়ে বসি, তখন দেহের জন্য খাবার প্রক্রিয়াকরণ ও হজম কঠিন হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে বঙ্গাসনে থাকলে দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনেকটাই সমান্তরালে চলে আসে। এতে সহজ হয় খাবার হজম।

নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বাড়ায়
যাঁরা নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে চান, তাঁদের জন্য আদর্শ হলো বঙ্গাসন।

কোনো তরুণী যদি নিয়মিত বঙ্গাসন করেন, তাহলে মা হওয়ার সময় তাঁর নরমাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যায়—গবেষণালব্ধ তথ্য এটা। দেখা গেছে, বঙ্গাসন করতে পারেন—এমন মায়েদের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। এ ছাড়া প্রসববেদনা লাঘবেও এ আসনচর্চা কাজে দেয়।

দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে
টানা ছয় মাস এই আসনচর্চা করেই দেখুন আপনার নিজের ইমিউন সিস্টেম কতটা শক্তিশালী হয়! নিজের শক্তি দেখে আপনি নিজেই বিস্মিত হবেন।

বাতব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে

বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই হিপ থেকে শুরু করে নিচের দিকের অঙ্গগুলোয় ও হাড়ে ব্যথা-বেদনা বাড়তে থাকে। বিশেষত, বয়স ৪০-এর পর এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে বঙ্গাসন। কারণ, বাতের প্রথম আক্রমণই হয় কোমর থেকে হাঁটু ও পায়ে। তাই বজ্রাসন-বঙ্গাসন-দণ্ডাসন—এই ধারাবাহিকতা আপনি যখন অনুসরণ করবেন, তখন আপনার পায়ের এসব অঞ্চলে রক্তসঞ্চালন বেড়ে যাবে। ফলে শক্ত থাকবে আপনার পা, আপনি তত মুক্ত থাকবেন বাতব্যথা থেকে।

লোয়ার ব্যাকপেইন লাঘব করে
সামনে ঝুঁকে সাইকেল চালানো কিংবা ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপের সামনে ঝুঁকে লম্বা সময় কাজের অভ্যাস আছে অনেকেরই। ঝুঁকে করা এমন সব কাজে পিঠের নিচের অংশ দীর্ঘ সময় বেঁকে থাকার ফলে লোয়ার ব্যাকপেইনে ভোগেন তাঁরা। এই ভোগান্তি নিরসনের উত্তম দাওয়াই হলো বঙ্গাসন! কারণ, এ আসন করলে পিঠের নিম্নভাগ প্রসারিত হয়, যা টান খাওয়া পেশিকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে।
এ ছাড়া এ সময় ওই সব অংশে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। এতে টান খাওয়া মাসলগুলো শিথিল হয় এবং ব্যথা উপশম হয়।

বাড়ায় দেহের সার্বিক সক্ষমতা
বঙ্গাসনে তলপেটের পেশি, হিপ মাসল (গ্লুটস), ঊরুর পেশি (কোয়াড্রিসেপস ও হ্যামস্ট্রিংস), কাফ মাসল, পিঠের পেশি ইত্যাদি সঞ্চালনের ফলে সেগুলো মজবুত হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে পুরো দেহের শক্তিমত্তা বেড়ে যায় এ আসনচর্চায়। কাজেই ক্রীড়াবিদদের মধ্যে যাঁরা দুর্বল টিস্যু ও লিগামেন্টের কারণে ঘন ঘন আহত হন, তাঁরা এ আসনচর্চা করে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।

শরীর করে হালকা, ঝরঝরে ও প্রাণবন্ত
আপনার কি শরীর খুব ভারী ভারী লাগে? দেহজুড়ে অনুভব করেন অবসাদগ্রস্ততা? তাহলে বসে যান বঙ্গাসনে! কারণ, আপনি যখন এ আসনে বসছেন, তখন আপনার পেশিগুলো নমনীয় ও শিথিল হচ্ছে। ফলে অবারিত হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রক্ত চলাচল। আর এতে সচল হচ্ছে দেহের নিজস্ব নিরাময়প্রক্রিয়া, যা আলস্য-অবসাদ কাটিয়ে দেহে আনে চনমনে অনুভূতি।

দেহের গড়নকে সুন্দর করে
বঙ্গাসনে পেট, নিতম্ব, ঊরু ও পায়ের পেশির স্থূলতা দূর হয়। এতে অঙ্গগুলো হয় টানটান ও সুঠাম। ফলে শরীর হয় আকর্ষণীয়, মজবুত ও শক্তিশালী।

আসলে দেহের গঠন কতটা আকর্ষণীয় হবে, তা নির্ভর করে শরীরে বিদ্যমান পেশি ও চর্বির আনুপাতিক হারের ওপর। ধরুন, সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতা ও ৬০ কেজি ওজনের দুজন মানুষ, যাঁদের শরীরে চর্বির পরিমাণ যথাক্রমে ১৫ ও ৩০ শতাংশ। সমান ওজন ও উচ্চতাবিশিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয়জনকেই বেশি মোটা দেখাবে।
কাজেই সুন্দর দেহকাঠামোর অধিকারী হতে ওজন কমানোর চেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে মেদ-চর্বি কমানোর দিকে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে সহায়তা করবে বঙ্গাসন।

বঙ্গাসন করার নিয়ম
হাতে কাজ নেই? বঙ্গাসনে বসে থাকুন! এই বসে থাকা স্রেফ ‘টাইমপাস’ হবে না, হবে দুর্দান্ত কাজের! এ আসনের সুবিধা হলো, এর জন্য আপনাকে বিশেষ কোনো প্রস্তুতি নিতে হবে না। এমনকি ভরাপেটেও করা যায় এ আসন!

নিয়মিত আপনি বঙ্গাসন করতে পারেন। প্রতিদিনের যোগাসনের জন্য নির্ধারিত সময়ের বাইরেও এভাবে বসা অভ্যাসে পরিণত করুন। কাজের পরিবেশকেও এমন করে নিন, যাতে বঙ্গাসনে বসে করতে পারেন। তবে শুরুতেই এ আসনে হয়তো বেশিক্ষণ থাকতে পারবেন না। প্রথমবার চেষ্টা করলে হয়তো মিনিটখানেক থাকতেই কষ্ট হবে। একটু একটু করে সময় বাড়ান।

প্রথমে ২০ সেকেন্ড, তারপর ৪০ সেকেন্ড; আস্তে আস্তে ১ মিনিট, ২ মিনিট, ৩ মিনিট।
বঙ্গাসন করতে গিয়ে অসুবিধা হলে এরপর করবেন বজ্রাসন। সবশেষে দণ্ডাসন।
এভাবে দিনে অন্তত ১৫ মিনিট বঙ্গাসন-বজ্রাসন-দণ্ডাসন করুন পর্যায়ক্রমে।

ছবি: সংগৃহীত

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৬: ৩০
বিজ্ঞাপন