শীত আসছে, তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। শীত মানেই গ্রামবাংলার উৎসব। এই উৎসব যদি উপভোগ করতে চান তাহলে শরীরটাকে ঠিক রাখতেই হবে। কিন্তু শীত এলে আমাদের শরীরে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে থাকে। বিশেষ করে শীতের সঙ্গে আমাদের শরীরে একটা শীতল প্রভাব পড়তে থাকে। একই সঙ্গে শরীরের অগ্নি কমতে থাকে, অগ্নি কমলে হজমক্ষমতা কমতে থাকে, আর হজমক্ষমতা কমলে সারা শরীরে এর প্রভাব পড়তে থাকে। ফলে ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা এসব তো স্বাভাবিক, এর সঙ্গে অন্যান্য ব্যথা, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা ছাড়াও আরো কিছু সমস্যা হতে পারে। শ্বাসকষ্ট যাঁদের আছে, তাঁদের এই মৌসুমে কষ্টটা বেড়ে যায়।
শীতে ভালো থাকতে অনেকে অনেক কিছু করে থাকেন। ঘরে ঘরে হিটার যোগ হয়, দরজা–জানালা আটকে রাখা হয়! কিন্তু শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক না থাকলে দরজা–জানালা আটকে রেখেও কাজ হয় না; কারণ আপনাকে বাইরে বের হতেই হবে। আর শীতল বাতাস, দূষণ নাক দিয়ে প্রবেশ করবেই।
এই শীতটা উপভোগ্য করতে চাইলে প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে চললে আপনার শারীরিক সমস্যা হবে না। এর মধ্যে কুসুম গরম পানি হতে পারে এক ম্যাজিক থেরাপি। এই থেরাপি এমনই যে আপনার বাসায় নিজে নিজেই করতে পারবেন। এর জন্য ঘটা করে কোনো কিছুর আয়োজন করার দরকার নেই। এই শীতে আপনি ভালো থাকতে পারবেন নিয়মিত কুসুম গরম পানি পান করে।
১. সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করবেন।
২. খাবার খাওয়ার আগে বা পরে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করবেন।
৩. সারা দিনে প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর কুসুম গরম পানি পান করবেন।
• দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: শীতকালে শরীরকে গরম রাখতে এবং গ্রীষ্মকালে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে কুসুম গরম পানি সাহায্য করে। এটি দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
• হজমশক্তি বাড়ায়: শীতে হজমশক্তি কমতে থাকে, পেটের অগ্নি কমে যায় তাই কুসুম গরম পানি পান করলে হজমপ্রক্রিয়া সহজ হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়। এটি খাবার হজমে সাহায্য করে এবং পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
• বিষাক্ত পদার্থ বের করে: কুসুম গরম পানি পান করলে শরীরে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। কিডনি ও লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
• রক্ত পরিষ্কার করে: কুসুম গরম পানি রক্ত পরিষ্কার করে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। এটি ত্বকের জন্যও উপকারী, ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে তোলে।
• ওজন কমাতে সাহায্য করে: কুসুম গরম পানি পান করলে মেটাবলিজম বাড়ে এবং ক্যালরি বার্ন হয়। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
• শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে কুসুম গরম পানি খুবই উপকারী। এটি শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করে।
• দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখে: শীতে দাঁতের সমস্যা বাড়ে, তাই কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলি করলে দাঁত ও মাড়ির সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।
• মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে: শীতে মাথাব্যথা বাড়ে, নাক বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় কুসুম গরম পানি পান করলে উপকার পাবেন।
• গলাব্যথা কমায়: শীতে গলাব্যথা একটি সাধারণ বিষয়। এ সময় কুসুম গরম পানি পান করা ও গরম পানিতে অল্প লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে গলাব্যথা থাকবেই না। বিশেষ করে গার্গল করার সময় দেখা যাবে মুখ দিয়ে ঘন লালা বের হবে, যত লালা বের করতে পারবেন তত দ্রুত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
এই কুসুম গরম পানি তখনই ম্যাজিক থেরাপি হবে, যখন নিয়ম করে পানি পান করতে পারবেন। দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। তবে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এ পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। সেই সঙ্গে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান, কমলালেবু, লেবু, আমলকী, পেয়ারা ইত্যাদি খাওয়া উচিত। এতে শীতকাল আনন্দদায়ক হবে, শীত উপভোগ করতে পারবেন। পিঠাপুলি খাওয়ার জন্য গ্রামে ঘুরে আসুন শুধু ম্যাজিক থেরাপি নিয়ে।
লেখক: খাদ্য ও পথ্য বিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: পেকজেলসডটকম ও চ্যাটজিপিটি