শীত বিদায় নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা ফিরে আসছে। ধীরে ধীরে বাড়ছে গরম। এই অবস্থায় ঘাম হওয়াটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে ঘামের সঙ্গে দুর্গন্ধ হওয়াটা খুবই অস্বস্তি ও বিরক্তির বিষয়। আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। তবে কোনো কাঠখড় না পুড়িয়ে কিন্তু সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
ঘামে দুর্গন্ধ হওয়ার আসল কারণ
অ্যাক্রাইন, অ্যাপোক্রিন ও সিবেশাস—তিনটি গ্রন্থির জন্য শরীরে ঘাম উৎপন্ন হয়। অনেকের ধারণা ঘাম দুর্গন্ধ ছড়ায়। কিন্তু সত্যি বলতে এর নিজস্ব কোনো গন্ধ নেই। ঘাম যখন ত্বকে থাকা মাইক্রোবায়োটা, সহজ ভাষায় ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে বিপাক করে, তখনই দুর্গন্ধ হয়। সাধারণত অ্যাক্রাইন ও সিবেশাস গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত ঘামে দুর্গন্ধ হয় না। শরীরের গন্ধ প্রাথমিকভাবে অ্যাপোক্রিন গ্রন্থি দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই গ্রন্থি বয়ঃসন্ধির সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে। এটি বগল, যৌনাঙ্গ ও মাথার ত্বকের মতো লোমশ অঞ্চলে বিকাশ লাভ করে, যেখানে তারা প্রোটিন, লিপিড ও স্টেরয়েড সমন্বিত তৈলাক্ত তরল নিঃসরণ করে। ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়া ঘামের প্রোটিনকে ভেঙে প্রপানয়িক অ্যাসিড তৈরি করে। এই অ্যাসিডের জন্যই দুর্গন্ধ হয়।
লিঙ্গ, জিন, বয়স, ডায়েট ও বিশেষ কিছু রোগ যেমন থাইরয়েড বা অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ডায়াবেটিস, দেহে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের অভাব, মানসিক চাপ বা উদ্বেগ ইত্যাদি একজন ব্যক্তির শরীর থেকে নির্গত গন্ধের ধরনকে প্রভাবিত করতে পারে। আঙুলের ছাপের মতো, প্রতিটি ব্যক্তির শরীরের গন্ধ অনন্য ও আংশিকভাবে জিন দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে। অন্যদিকে পুরুষের নারীদের তুলনায় বেশি ঘাম হয়।
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ দূর বা প্রতিরোধ করা এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। কয়েকটি দিকে বিশেষভাবে যত্ন নিলেই চলবে। এতে খুব একটা সময়ও লাগে না।
সবার আগে বগলের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। গরমের সময় প্রতিদিন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে শরীরের এসব অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত বগলের লোম শেভ বা ওয়াক্স করুন। কারণ, এই লোম ঘামকে সহজে বাষ্পীভূত হতে দেয় না। দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া তাই এখানে খুব সহজে বাস করতে পারে।
ডায়েটের দিকে নজর দিন। যাঁদের ঘামে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ হয়, তাঁদের কিছু খাবার কম পরিমাণে বা সম্ভব হলে একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। যেমন ক্রুসিফেরাস সবজি (ফুলকপি, বাঁধাকপি), পেঁয়াজ, রসুন, লাল মাংস, মাছ ইত্যাদি। কিছু খাবারের জন্য ঘাম বেশি হয়। যেমন এমএসজি বা টেস্টিং সল্ট, ক্যাফেইন, অতিরিক্ত ঝাল বা মসলাজাতীয় খাবার, অ্যালকোহল। এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
গরমে আরামদায়ক, ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরতে হবে। জামাকাপড় ঘামে ভিজে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ভালো মানের অ্যান্টিপাসপারেন্ট ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করতে হবে।
ঘরোয়া টোটকা
চাইলেই ঘামের দুর্গন্ধ কমাতে ঘরে থাকা কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে পারেন।
লেবুর সঙ্গে মধুর মিশ্রণ ঘামের দুর্গন্ধ প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান ঘরোয়া উপায়। একটি বাটিতে হালকা গরম পানি নিন, তাতে ২ টেবিল চামচ মধু ও ৩ টেবিল চামচ লেবুর রস নিন। বগল ও শরীরের ভাঁজে যেখানে ঘাম বেশি হয়, সেখানে মিশ্রণটি লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এরপর শুকনা তোয়াল দিয়ে মুছে ফেলুন। লেবু শরীরে ঘামের পরিমাণ কমিয়ে আনে।
অন্যদিকে মধু অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে।
২ টেবিল চামচ আপেল সাইডার ভিনেগার ১৫০ মিলিলিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে ফেলুন। মিশ্রণটি ঘরে থাকলে বা রাতে ঘুমানোর আগে বগলে স্প্রে করে নিন। আপেল সাইডার ভিনেগার ঘামের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া নিষ্ক্রিয় করতে সহায়তা করে।