বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস: এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষ শিশুরা প্রতিবছর যাচ্ছে মূলধারার স্কুলে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বিশেষ শিশু বলি আর দাপ্তরিক ভাষায় প্রতিবন্ধী, এই বাচ্চাদের মা–বাবার জীবনযুদ্ধের কথা বলে বা লিখে বোঝানোর নয়। আর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো আছে আমাদের সমাজে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বিদ্যমান কুসংস্কার, অজ্ঞানতা ও অসংবেদনশীলতা। আর এই সবকিছুর মাঝে শিশুটির বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য উপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবের বিষয়টি আরও কষ্ট দেয় তার মা–বাবাকে। বেশির ভাগ সময় এমন শিশুদের মায়েরা নিজের পেশা ত্যাগ করেন। আর এ জায়গাতেই আপত্তি জান্নাতুল ফেরদৌসের। তিনি বাংলাদেশের প্রথম স্নাতক পর্যায়ের স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট। ২০০৯ সাল থেকে এ পেশায় আছেন।

তিনি অন্তরের তাগিদ ও পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই সিএস কেয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন ২০১২ তে এসে। খুবই স্বল্প পরিসরে শুরু করা এই সংস্থা সময়ের ধারাবাহিকতায় আজ স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, ফিজিওথেরাপি, ভয়েস থেরাপি, বিহেভিয়ার থেরাপি, সাইকোথেরাপি, প্রি–স্কুল ট্রেনিং, এবিএ থেরাপি, স্পেশাল-স্কুল,অটিজম কেয়ারসহ সব সেবা দিচ্ছে। প্রতিটি থেরাপি সেবার জন্য রয়েছে এখানে বিশেষজ্ঞ থেরাপিস্ট।

বিজ্ঞাপন

জান্নাত এই সিএস কেয়ারের অঙ্গ সংস্থা এসএস কেয়ার বা স্কুল ফর স্পেশাল কেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন ২০১৬ সালে। মাত্র ৪ জন অটিজম ও অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজ-অর্ডারের শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ শুরু করেন তাঁরা। এখন সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০ এবং প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত ১:১।  


আজ ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। এবারের প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্মিলিত অংশগ্রহণই নিশ্চিত করবে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই লক্ষ্য অর্জন। জান্নাতুল ফেরদৌসের কাছ থেকে জানা গেল, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিগত বছরগুলোতে তাঁদের অনেক শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্কুলে, শিশুরা প্রি ও প্লে স্কুলে আর বয়স্ক ব্যক্তিরা বিভিন্ন পর্যায়ের মূলধারার শিক্ষাক্রমে অংশগ্রহণ করছে। তোতলামি সমস্যা সমাধান করে অফিসে কাজ করছেন কেউ। গলার স্বরের সমস্যা সমাধান করে নিজ পেশায় ফেরত গেছেন অনেকে। প্রি-স্কুল থেকে সামাজিক যোগাযোগে পারদর্শী হয়েছে অনেক শিশু। নির্বাক শিশু কথা বলে অবাক করেছে অভিভাবকসহ সবাইকে। প্রতিষ্ঠানের সবার প্রচেষ্টায় বিশেষ শিশুদের কথা ও ভাষাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে এখানে কাজ করছে এক দল নিবেদিতপ্রাণ স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট।

বিজ্ঞাপন

জান্নাতুল ফেরদৌসের স্বপ্নের কথা জানা গেল তাঁর কাছ থেকেই। জান্নাত অটিজম, নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার, সেরিব্রাল পালসি, স্ট্রোকসহ সব মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য একটি প্রতিবন্ধীবান্ধব হাসপাতালের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্বচ্ছন্দে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।

কাজ করতে গিয়ে কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন আর হচ্ছেন তিনি। বললেন দক্ষ ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন থেরাপিস্ট, যত্নবান এবং সহমর্মী মানসিকতাসম্পন্ন স্পেশাল এডুকেটরের অপ্রতুলতার কথা। যাতায়াত সমস্যা আর যোগাযোগ সমস্যাও রয়েছে। তবু সব সীমাবদ্ধতার মাঝে জান্নাতুল ফেরদৌসের এই কর্মযজ্ঞের কল্যাণে অনেক বিশেষ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবনে প্রবেশ করছেন। এখানেই আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের সার্থকতা।

ছবি: জান্নাতুল ফেরদৌস ও রোয়েনা রাসনাত

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮: ১৬
বিজ্ঞাপন