
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য হঠাৎ ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়া যেমন অত্যন্ত বিপজ্জনক, তেমনি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলেও হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। ঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নিলে হতে পারে মৃত্যুও। একে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া। এই অবস্থা তখনই হয়, যখন রক্তে শর্করার মাত্রা ৭০মিগ্রা/ডিএল-এর নিচে নেমে যায়। এমন হলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে কিছু খাবার ও পানীয় দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়াতে সাহায্য করে এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ কমায়।

ডায়াবেটিক রোগীরা হঠাৎ ব্লাড সুগার নেমে গিয়েছে এমন লক্ষণ টের পেলে মিষ্টি চকলেট জাতীয় কিছু খেয়ে থাকেন সে সময়। এতে কি লাভ হয়? এ নিয়ে কথা হলো বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানিয়া নাসরীনের সঙ্গে। ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা দিনজুড়ে ওঠানামা করে। ড. তানিয়া বললেন, ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করা খুব বেশি বেড়ে যাওয়া যেমন ক্ষতিকর, তেমনি কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়াও অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। এটি বিভিন্ন অস্বস্তিকর উপসর্গ সৃষ্টি করে এবং চিকিৎসা না করলে গুরুতর জটিলতা ঘটাতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস নেই, তাদের ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসেমিয়া সাধারণত দেখা যায় না। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে পারে যদি ইনসুলিন, ঔষধ গ্রহণ করা হয় ও খাওয়ার সময়সূচী না মেনে চলা হয়। তাই হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ চিনে রাখা খুব জরুরি, যাতে আপনি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারেন।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার সম্ভাব্য ও কমন লক্ষণগুলো
হাত কাঁপা
মাথা ঘোরা
দ্রুত হার্টবিট
বিভ্রান্তি
ঘুমঘুম ভাব
ঘাম হওয়া
মাথাব্যথা

যদি এই উপসর্গগুলো দেখা দেয়, সম্ভব হলে রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করুন। যদি তা সম্ভব না হয় বা আপনি খুব অসুস্থ অনুভব করেন অপেক্ষা না করে দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ানোর চেষ্টা করুন। দেরি করলে অবস্থার অবনতি হতে পারে। রক্তে শর্করা কমে গেলে গ্লুকোজ গুলিয়ে খেলেই সবচেয়ে কার্যকর হয় তা। তবে সামনে না পেলে দ্রুত কাজ করে এমন কার্বোহাইড্রেট (fast-acting carbohydrates)খাওয়া বা পান করা উচিত। এজন্য “১৫-১৫ নিয়ম” অনুসরণ করা হয়:
১. ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট দিতে পারে এমন খাবার খান বা পানীয় পান করুন,
২. ১৫ মিনিট পর রক্তে শর্করা মেপে দেখুন,
৩. যদি এখনও ৭০ মিগ্রা/ডিএল-এর নিচে থাকে, পুরো প্রক্রিয়া পুনরাবৃত্তি করুন
রক্তে শর্করা স্বাভাবিক হলে জটিল কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খান, যাতে তা আবার না কমে যায়।
এবারে কিছু খাবার আর পানীয়র কথা জেনে নিন যেগুলো এমন অবস্থায় উপকারী হতে পারে।
১. ফলের রস
ফলের রসে থাকে প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুকটোজ), যা দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায়। প্রায় আধা কাপ (৪ আউন্স) ফলের রস পান করুন। কম-চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি দেওয়া রস এড়িয়ে চলুন। কিডনি সমস্যা থাকলে কমলালেবুর রস না খাওয়াই ভালো।

২. কোমল পানীয়
সাধারণত সোডা জাতীয় কোমল পানীয় স্বাস্থ্যকর নয়, কিন্তু হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় এটি দ্রুত কাজ করে। ৪ থেকে ৬ আউন্স সোডা পান করুন। তবে ডায়েট বা কম-ক্যালোরির সোডা নয়।
৩. মধু
মধুতে ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ থাকে, যা দ্রুত রক্তে শর্করা বাড়ায়। ১ টেবিলচামচ মধু (১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট) যথেষ্ট। এটি প্যাকেট বা ছোট স্টিক সঙ্গে রাখা যায়।
৪. শুকনো ফল যেমন খেজুর
শুকনো ফলে প্রতি কামড়ে তাজা ফলের চেয়ে বেশি চিনি থাকে। কিশমিশ, শুকনো খেজুর, এপ্রিকট বা ক্র্যানবেরি ভালো বিকল্প। প্যাকেটের লেবেলে দেখে নিন কতটা খেলে ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট পাবেন।


৫.মিষ্টি চকলেট
মিষ্টি লজেন্স বা চকলেটে থাকে প্রচুর চিনি, তাই অল্প খেলেই যথেষ্ট। সঙ্গে রাখার জন্য এটি ভালো অপশন। তাই প্রচলিত এই টোটকাটি আসলেই উপকার দেয়।
কীভাবে রক্তে শর্করা কমে যাওয়া রোধ করবেন
নিয়মিত গ্লুকোমিটার বা কন্টিনিউয়াস গ্লুকোজ মনিটর দিয়ে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করুন।
কখন ও কী পরিমাণ ওষুধ নিচ্ছেন তা লিখে রাখুন।
সঠিক পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খান, খাবার বাদ দেবেন না।
ব্যায়াম, অসুস্থতা বা উপবাসের সময় চিকিৎসকের পরামর্শে ডায়েট সামঞ্জস্য করুন।

কখন চিকিৎসা নিতে হবে
হাইপোগ্লাইসেমিয়া গুরুতর ও প্রাণঘাতী হতে পারে। নিচের যেকোনো অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসা নিন
৩ বার ১৫-১৫ নিয়ম অনুসরণ করার পরও রক্তে শর্করা ৭০ মিগ্রা/ডিএল-এর নিচে থাকে।
আপনি খেতে বা পান করতে পারছেন না।
আপনি দুর্বল বা বিভ্রান্ত।
হাঁটতে বা কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া বিপজ্জনক হতে পারে। উপসর্গ চিনে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিন — ১৫ গ্রাম দ্রুত কার্বোহাইড্রেট খান, ১৫ মিনিট পর আবার রক্তে শর্করা পরীক্ষা করুন, এবং প্রয়োজনে পুনরাবৃত্তি করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন।
সূত্র: হেলথলাইন, গুড আরএক্স
ছবি: জেমিনাই এআই