সুস্থ জীবনধারণের সঙ্গে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শারীরিক পরিশ্রম ও নিয়মিত শরীরচর্চা আপনাকে রাখতে পারে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ। তারই ধারাবাহিকতায় হাল ফ্যাশনে থাকে বিভিন্ন পরামর্শ। যাঁরা লম্বা সময় ধরে পিঠের ব্যথায় ভুগছেন এবং পুরো দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন না, তাঁদের জন্য কার্যকর কিছু যোগাসনের বিস্তারিত দেওয়া হলো।
পিঠের ব্যথার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে ভুল ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে সারা দিন অফিসে কাজ করা, সব সময় কুঁজো হয়ে বসে থাকা, একেবারেই শারীরিক পরিশ্রম না করা অন্যতম কারণ। বিশেষ কিছু যোগাসন করলে পিঠের ব্যথা থেকে মিলবে ভালো ফল।
মার্জার অর্থ হলো বিড়াল। বিড়ালের নাম অনুসারে আসনটির নাম হয়েছে মার্জারাসন।
কীভাবে করবেন
প্রথমে বজ্রাসনে বসুন। এখন উভয় হাঁটু ফাঁক করে কাঁধ ও হাতের ওপর ভর দিয়ে ঘোড়ার ভঙ্গিতে বসুন, দুই হাতের তালু এক হাত দূরে রাখুন। বাহু ও পা ৯০ ডিগ্রিতে সোজা অবস্থায় রাখুন। এবার মাথা ওপরে তুলুন এবং শ্বাস নিতে নিতে বুক ফুলিয়ে নিন। শ্বাস ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথাকে নিচে নামিয়ে নিন এবং পিঠ পেছনের দিকে বাঁকিয়ে আনুন, আগের অবস্থানে ফিরে শ্বাস নিন এবং এই অবস্থানে শ্বাস ছাড়ুন। এটা ৪০ থেকে ৬০ সেকেন্ড ধরে করুন। ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।
উপকারিতা
নিতম্বের ব্যথা, কোমরব্যথা, পিঠ ও পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমায়। এ ছাড়া থাইরয়েড, পাইলস, হজমশক্তি বৃদ্ধি, দুর্বলতা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক শান্তির জন্যও মার্জারাসন খুবই উপকারী।
সতর্কতা
ঘাড়ব্যথার ক্ষেত্রে মাথা বা মুখ নিচে না রেখে মাথা সোজা রেখে এই আসন করা যেতে পারে। হাঁটুতে ব্যথা হলে হাঁটুর নিচে নরম কিছু দিয়ে এই আসন করুন।
সোজা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে দুই হাত নিচের দিকে প্রসারিত করুন। পায়ের তালুতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে সামনের দিকে প্রসারিত করুন, যাতে করে নিতম্ব পর্বতের ন্যায় ‘ভি’ আকৃতির হয়ে ওপরের দিকে উত্তোলিত হয়ে থাকে। এভাবে ৩০ সেকেন্ড শ্বাস নিন, পুরো প্রক্রিয়াটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করুন।
উপকারিতা
আধোমুখ স্বনাসন দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথা নিরাময়ে দারুণ একটি আসন। আসনটি হ্যামস্ট্রিং ও পায়ের পেশিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। যাঁরা নিয়মিত দৌড়ান বা ম্যারাথন করেন, তাঁদের জন্য খুব ভালো একটি আসন এটি।
‘ত্রিকোণ’ শব্দের অর্থ হলো তিনকোনা। অর্থাৎ শরীরের ভঙ্গি এমন হবে, যাতে দেখতে অনেকটা ত্রিভুজের মতো লাগে। এই আসন দেহের ভারসাম্য ধরে রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
কীভাবে করবেন
প্রথমে দুটি পা ফাঁক করে সোজা হয়ে দাঁড়ান। হাত দুটি দুপাশে লম্বা করে দিন। এবার বাঁ পাশে শরীরকে বাঁকা করে বাঁ হাত দিয়ে বাঁ পায়ের আঙুল স্পর্শ করুন।
ডান হাতটি ওপরের দিকে একেবারে সোজা করে রাখতে হবে। হাঁটু ভাঙা যাবে না। এভাবে দশ সেকেন্ড থাকুন।
এবার দুই হাত না ভেঙে সোজা হয়ে দাঁড়ান।
একইভাবে ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের আঙুল স্পর্শ করুন। উভয় পাশে তিনবার করে এই আসন পুনরাবৃত্তি করুন।
উপকারিতা
এই আসন করলে পা, পিঠ, কোমরের সঙ্গে ঘাড়, কাঁধের পেশিও মজবুত হয়। হজমসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। অবসাদ, উদ্বেগ, মানসিক চাপজনিত সমস্যা থাকলেও ত্রিকোনাসন অভ্যাস করা যায়। নিয়মিত এই আসন অভ্যাস করলে অস্টিওপোরোসিস, সাইটিকার ব্যথা এবং নারীদের মাসিকসংক্রান্ত ব্যথা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেও তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে ত্রিকোনাসন অভ্যাস করা যায়। এই আসন অভ্যাস করলে কোমর, পিঠের যন্ত্রণায় স্বস্তি পাওয়া যায়।
যাঁরা এই আসন করবেন না
যাঁদের ভার্টিগো বা মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাঁরা এ আসনটি করবেন না। এ ছাড়া রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকলে কিংবা ঘাড়, পিঠ বা কোমরের কোনো সমস্যা থাকলেও ত্রিকোনাসন করা যাবে না।
‘বৃক্ষ’ শব্দের সাধারণ অর্থ হলো গাছ। শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় পায়ের সমস্যা নিরসনে ও মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য বেশ উপকারী একটি আসন বৃক্ষাসন।
যেভাবে করতে হবে
মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ান। দুই পায়ের পাতার মাঝখানে দুই ইঞ্চি দূরত্ব রাখুন। দুই হাত স্বাভাবিকভাবে দুই পাশে রাখুন। বুক ভরে শ্বাস নিন। এবার ধীরে ধীরে নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ডান পা ভাঁজ করে, পায়ের পাতা বাঁ ঊরুর উপরিভাগে স্থাপন করুন। এ ক্ষেত্রে হাতের সাহায্য নিতে পারেন, এরপর বুক ভরে শ্বাস নিতে নিতে দুই হাত ওপরের দিকে প্রসারিত করুন। এ অবস্থায় গভীরভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নিন, মনোযোগ রাখার চেষ্টা করুন, যাতে ভারসাম্য বজায় রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন। কিছুক্ষণ এই অবস্থানে থাকার পর ধীরে ধীরে শ্বাসত্যাগ করতে করতে দুই হাত নিচে নামিয়ে আনুন এবং ডান পা নিচে নামিয়ে আনুন। এরপর বাঁ পা তুলে একইভাবে বৃক্ষাসন করুন। দুবার এই আসনের পুনরাবৃত্তি করুন।
উপকারিতা
হাত–পা কাঁপা, পায়ের মেদ, পায়ের দুর্বলতা, অস্তিসন্ধিতে ব্যথা কমাতে এবং পায়ের জোর ও চলাফেরার ক্ষমতা বাড়াতে এই আসন উপকারী। দেহের ভারসাম্য রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। মনোযোগ বৃদ্ধি করে কাঁধের পেশি সবল করে। পায়ের খিল ধরা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হার্নিয়ার উপশমে উপকারী।
ছবি: হাল ফ্যাশন