হাইপোথাইরয়েডিজম কী
হাইপোথাইরয়েডিজম ঘটে যখন থাইরয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি করে না। এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
একজন থাইরয়েড রোগগ্রস্ত ব্যক্তির বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যেতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত, থাইরয়েড রোগের অবস্থার লক্ষণগুলির সঙ্গে অন্যান্য অনেক রোগের খুব মিল। তার ফলে লক্ষণগুলি থাইরয়েড সমস্যা বা অন্য কিছুর সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা তা জানা কঠিন হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, থাইরয়েড রোগের লক্ষণগুলিকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা যেতে পারে – যা খুব বেশি থাইরয়েড হরমোন (হাইপারথাইরয়েডিজম) এবং খুব কম থাইরয়েড হরমোন (হাইপোথাইরয়েডিজম) থাকার ফলে দেখা দেয়।
হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ
১. ক্লান্তি
২.ওজন বৃদ্ধি
৩.অনিয়মিত মাসিক
৪.শুষ্ক ত্বক
৫.পেশীর দুর্বলতা
৬.ডিপ্রেশন
৭.অতিরিক্ত শুষ্ক চুল
৮.কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়ে যাওয়া
৯.ঠান্ডা সহ্য করার ক্ষমতা না থাকা
হাইপারথাইরয়েডিজম কী
অন্যদিকে, হাইপারথাইরয়েডিজম ঘটে যখন থাইরয়েড গ্রন্থি অনেক বেশি হরমোন তৈরি করে। এই অতিরিক্ত উৎপাদন শরীরের বিপাক মাত্রার বাইরে ত্বরান্বিত করতে পারে।
হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণ
হাইপারথাইরয়েডিজমের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে আছে
১.দ্রুত হৃদস্পন্দন
২.ওজন হ্রাস
৩.তাপের প্রতি অসহনশীলতা
৪.উদ্বেগ
৫. হাত পা কাঁপা
৬.অতিরিক্ত ক্ষুধা
কাদের থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত সবার সম্ভাবনা বেশি
থাইরয়েড রোগ যে কোন ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। তিনি হতে পারেন পুরুষ, মহিলা, শিশু, কিশোর বা বয়স্ক। হয়তো জন্মের সময় হতে পারে যা সাধারণত হাইপোথাইরয়েডিজম ধরনের। এটি আপনার বয়সের সঙ্গে বাড়তে পারে। নারীদের মেনোপজের পরে এমন হয়।
থাইরয়েড রোগ খুবই সাধারণ। গবেষণায় জানা গেছে যে, নারীরা পুরুষদের তুলনায় থাইরয়েড রোগে বেশি আক্রান্ত হন। তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় পাঁচ থেকে আট গুণ বেশি।
যেসব কারণ থাকলে থাইরয়েড রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি হতে পারে
১.থাইরয়েড রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে অর্থাৎ রোগটি উত্তারাধিকার সূত্রে পাবার সম্ভাবনা আছে।
২. কিছু মেডিকেল কনডিশন যেমন: রক্তাল্পতা, টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস, লুপাস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, সজোগ্রেনের সিন্ড্রোম ও টার্নার সিনড্রোম।
৩. বেশি আয়োডিন আছে এমন ওষুধ সেবন যেমন:অ্যামিওডারোন।
৪. আপনি ষাটোর্ধ্ব মহিলা
৫. অতীতের থাইরয়েড অবস্থা বা ক্যান্সারের (থাইরয়েডেক্টমি বা রেডিয়েশন) জন্য চিকিৎসা করা হয়েছে।
থাইরয়েড রোগের কী কী উপসর্গ দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ
নিম্নলিখিত থাইরয়েড লক্ষণগুলি দেখা দিলে একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্টের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করা উচিত
১.গলার ভয়েস বক্সের দুইদিকে ফোলা পিন্ডের মতো অনুভব করলে।
২. হতাশা, নার্ভাস অনুভব করা, ডিপ্রেশন, অথবা মেজাজ পরিবর্তন।
৩. অনেকক্ষণ ধরে গরম অথবা শীত অনুভূত করলে।
৪. খুব বেশি শ্রান্তি অনুভব করলে।
৫. হঠাৎ ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি হলে।
থাইরয়েড রোগ নির্ণয়
থাইরয়েড রোগ নির্ণয় করা হয় শারীরিক পরীক্ষা, চিকিৎসা ইতিহাস এবং ল্যাব টেস্টের সমন্বয়ে। TSH ও T4 মাত্রা সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। থাইরয়েড আল্ট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং পরীক্ষা হাইপোকোইক নড্যুলসের মতো সমস্যা শনাক্ত করতেও সহায়তা করতে পারে।
থাইরয়েড চিকিৎসা
হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় সাধারণত থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকে। সবচেয়ে সাধারণ ওষুধ হল লেভোথাইরক্সিন, যা হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
হাইপারথাইরয়েডিজম চিকিৎসা
হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে করা যেতে পারে, যার মধ্যে আছে
হরমোন উৎপাদন কমাতে অ্যান্টি থাইরয়েড ওষুধ
থাইরয়েড গ্রন্থি সঙ্কুচিত করার জন্য তেজস্ক্রিয় আয়োডিন থেরাপি
থাইরয়েড গ্রন্থি অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার
উপযুক্ত চিকিৎসার ধরন আসলে রোগের তীব্রতা ও রোগীর সাধারণ স্বাস্থ্য দেখেই নির্ধারণ করা হয়।
১. প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে চলুন
প্রক্রিয়াজাত খাবারের অনেক রাসায়নিক থাইরয়েড হরমোন তৈরীকে প্রভাবিত করতে পারে। যেকোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে। এই সমস্ত খাবারে লবণ, চিনি ও তেলের পরিমাণ বেশি থাকে, যা ওজন দ্রুত বাড়াতে পারে।
২. ক্রুসিফেরাস সবজি কম খাওয়া
থাইরয়েড থাকলে ফুলকপি, বাঁধাকপি ,ব্রকলি আর পালং শাক একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এই শাকসবজিতে গয়ট্রোজেন থাকে, যা থাইরয়েড গ্রন্থির আয়োডিন শোষণে বাধা দেয় এবং হাইপারথাইরয়েডিজমকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
৩. ধূমপান বন্ধ করুন
ধূমপানের সময় নির্গত টক্সিন থাইরয়েড গ্রন্থিকে বেশি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে, যা থাইরয়েড রোগের কারণ হতে পারে।
৪. মানসিক চাপ কমান
থাইরয়েড রোগসহ অনেক অসুখেই মানসিক চাপ অন্যতম প্রধান কারণ। তাই সক্রিয় হোন, ধ্যান করুন, যোগব্যায়াম করতে চেষ্টা করুন এবং যথেষ্ট পরিমাণ ঘুমান।