মশার কামড় থেকে যে রোগগুলো হয়, তার ধারণা আমাদের থাকলেও, মশার কয়েল থেকে কী কী ক্ষতি হতে পারে, তা অনেকেই জানেন না। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, মশার কয়েলে যে পরিমাণ রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তা নির্ধারিত মাত্রার থেকে বেশি। মশার কয়েলে ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। সেগুলোই আমাদের নাকে ঢোকে। আরও একটি বিষয়, কয়েলে থাকা কিছু রাসায়নিক পদার্থ ত্বকের মাধ্যমে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এই সমস্যা সব থেকে বেশি হয় নবজাতক শিশুদের। কারণ, তাদের মধ্যে তখনো রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভালো করে গড়ে ওঠে না।
মশার কয়েলে পাইরেথ্রয়েডের মতো রাসায়নিক রয়েছে, যা থেকে শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা ও ত্বকের জ্বালা হতে পারে—যদি বেশি পরিমাণে বা দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাস নেওয়া হয়। সম্প্রতি জার্মানির ল্যুরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা জানান, কয়েল তৈরিতে কাঠের গুঁড়া ও নারকেলের মালার গুঁড়া ব্যবহার করা হয়। এর ধোঁয়া এতোটাই সূক্ষ্ম যে তা সহজেই আমাদের শ্বাসনালি ও ফুসফুসের বায়ুথলির মধ্যে পৌঁছে সেখানে জমা হতে পারে। আর খুব সূক্ষ্ম হওয়ার জন্য কণাগুলো বাতাসেও কয়েক দিন ভাসমান অবস্থায় থাকতে পারে। অর্থাৎ মশার কয়েল নেভার বহুক্ষণ পরেও ঘরে অবস্থানকারী মানুষের শ্বাসনালিতে কয়েলের ধোঁয়ার কণা ঢুকতে পারে। এর ফলে ফুসফুসের বায়ুথলির কণায় রক্ত জমে যাওয়া থেকে নানা ক্ষতি হতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, একটি সম্পূর্ণ মশার কয়েলে যে পরিমাণ ধোঁয়া উৎপন্ন করে, তা ১০০টি সিগারেটের ধোঁয়ার সমান। আবার যদি আপনি কোনো বদ্ধ ঘরে ৮ ঘণ্টা কয়েল জ্বালিয়ে রাখেন, তাহলে ১৪০টি সিগারেট ঐ বদ্ধ ঘরে জ্বালালে যে ধোঁয়া তৈরি হয়, তার সমান ক্ষতিকর ধোঁয়া উৎপন্ন হয়।
তাই যতটা পারবেন, মশার এই কয়েল থেকে দূরে থাকুন। কয়েল ব্যবহার কমিয়ে মশা তাড়ানোর জন্য মশারি, প্রাকৃতিক তেল বা বৈদ্যুতিক মশা তাড়ানোর যন্ত্র ব্যবহার করে এই স্বাস্থ্য-ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
তাই যতটা পারবেন, এই মশা নিধনের কয়েল থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। আর কয়েল ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ মিনিট, তার থেকে বেশি নয়। আর যদি হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট থাকে, তাহলে কয়েল না ব্যবহার করাই শ্রেয়।