দিন দিন মানুষের জীবনে কর্মব্যস্ততা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে কাজের চাপ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে মানুষকে হয়ে উঠতে হচ্ছে মাল্টিটাস্কার। অনেক কাজের চাপ সামাল দিতে গিয়ে এর প্রভাব পড়ছে আমাদের মগজে। ফলে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা। দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে মানুষের স্মৃতিশক্তি।
মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের রয়েছে পরীক্ষিত সম্পর্ক। ফলে কর্মজীবনের মধ্যবয়সে এসে পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়। শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক যত্নও কিন্তু খুব জরুরি। একে অবহেলা করলে হতে পারে বিশাল বিপদ। তাই সময় থাকতেই স্মৃতিশক্তির যত্নে মন দিতে হবে।
কিন্তু সবার আগে আমাদের জানতে হবে স্মৃতিশক্তি কমে কেন? কোন প্রক্রিয়া আমাদের স্মৃতিশক্তি বিকাশে বাধা দেয়? এটি মূলত মস্তিষ্কের কিছু রোগ ও কিছু বাহ্যিক চাপের কারণে ঘটে থাকে। স্মৃতিশক্তি হ্রাসের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রেন ইনফেকশন, টিউমার ও স্ট্রোকের মতো রোগ। এ ছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে অক্সিজেনের ঘাটতি, পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব, ঘুমের অভাব, মানসিক চাপ ও বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
কীভাবে বুঝবেন যে আপনার স্মৃতিশক্তি দিন দিন লোপ পাচ্ছে
স্মৃতিশক্তি লোপ পেলে বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যা কিছুটা পর্যবেক্ষণ করলেই ধরতে পারবেন আপনার সমস্যা। তারপরও কিছু পরীক্ষিত লক্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন তথ্য গ্রহণ করতে না পারা, এক জায়গার জিনিস অন্যত্র রেখে ভুলে যাওয়া, সহজ সমস্যা সমাধানেও অসুবিধা হওয়া, হঠাৎ পরিচিত মানুষের চেহারা শনাক্ত করতে বা নাম মনে করতে না পারা ইত্যাদি।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায়
সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি চাইলে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করেই বাড়াতে পারেন আপনার স্মৃতিশক্তি। এই উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে—
চিনি–জাতীয় খাবার পরিহার করা
এক গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার মস্তিষ্কের ক্ষমতা হ্রাস করে। উচ্চ চিনি–জাতীয় খাবার মস্তিষ্ককে সংকুচিত করে ফেলে। তাই যথাসম্ভব পরিমিত পরিমাণে এসব খাবার গ্রহণ করতে হবে।
পর্যাপ্ত ঘুম
মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্ষমতার জন্য ঘুমের প্রভাব অনস্বীকার্য। প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। আপনি যদি পর্যাপ্ত না ঘুমান, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
চাপ মোকাবিলায় কৌশল অবলম্বন
কর্মক্ষেত্রে বাড়তি কাজ ও দায়িত্ব আমাদের মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘস্থায়ী চাপ পরবর্তী সময়ে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। চাপের সময় মেডিটেশন, ধ্যান, গভীর শ্বাস বা যোগব্যায়ামের মতো জিনিসগুলো এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন
নিয়মিত শারীরিক অ্যাকটিভিটি একটি সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ বাড়ায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা বা সাইকেল চালানোর মতো ব্যায়ামগুলো মস্তিষ্কের ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি কমাতে পারে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক খাবার খান
কিছু খাবার রয়েছে, যা আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার সহজেই ভুলে যাওয়ার সমস্যা থাকলে এসব খাবার গ্রহণ করে দেখতে পারেন। স্যামন, ট্রাউট ও সার্ডিনের মতো চর্বিযুক্ত মাছ খেতে পারেন। এসব মাছ ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, বিশেষ করে ডিএইচএ–সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও স্মৃতিশক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালের একটি পর্যালোচনা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ওমেগা–থ্রি মস্তিষ্কের ক্ষয়কে ধীর করে দেয়। এ ছাড়া গ্রিন টি, বাদাম ও ডার্ক চকলেটের মতো খাবারও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
সূত্র: ওয়েলনেস মামা ডটকম
ছবি: পেকজেলসডট