আমাদের মধ্যে অনেকে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার যেমন দই, ঘোল খেতে পারেন না;খেলেই পেটের সমস্যা হয়, অস্বস্তি হতে থাকে। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা বলে। এটি খুবই কষ্টদায়ক ও অস্বস্তিকর। রোজার দিনে দুধভাত,দইচিড়ার মতো খাবার রোজকার মেনুতে থাকায় প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের এ সমস্যা থাকলে তা প্রকট রূপ নেয়। গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের প্রায় ৬৫ শতাংশের শৈশবকালের পর ল্যাকটোজ হজম করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।
ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা দুধের অ্যালার্জির মতো নয়। এটি ইমিউন সিস্টেমের অতি-প্রতিক্রিয়ার চেয়ে বেশি অস্বস্তিকর। ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার লক্ষণগুলোর মধ্যে সাধারণত পেট ফোলাভাব,গ্যাস, ডায়রিয়া ও অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা হয়ে থাকে। তবে নির্দিষ্ট কিছু ডায়েট পালন করে ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতাকে কমিয়ে ফেলা সম্ভব এবং এমনকি কিছু ক্ষেত্রে দূর করাও সম্ভব।
ল্যাকটোজ হলো একধরনের শর্করা, যা দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া যায়। এই চিনিরূপী শর্করাকে সঠিকভাবে হজম করার জন্য, ক্ষুদ্রান্ত্রকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ল্যাকটেজ নামের এনজাইম তৈরি করতে হবে। সেটা না করতে পারলেই সমস্যা হয়ে যায়। ল্যাকটেজের মাধ্যমে ল্যাকটোজকে গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজে ভাঙার পরেই শরীর এটি শোষণ করতে পারে। যখন শরীরের ল্যাকটেজ তৈরির ক্ষমতা হ্রাস পায়, তখন ফলাফল হয় ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা।
ডায়রিয়া
গ্যাস
পেট ফেঁপে যাওয়া
পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্পিং
বমি বমি ভাব
মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন
ব্রণ
ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার লক্ষণ শুরু হয় দুগ্ধজাত দ্রব্য খাওয়ার ৩০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে। সেটা যেকোনো জায়গায় দেখা দিতে পারে এবং হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে। বেশির ভাগ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, শরীরে ল্যাকটোজ হজম করার জন্য এনজাইম না থাকার কারণে ঘটে, যার কারণে অন্ত্রগুলো সংকুচিত হয়। তবে হজমের সমস্যা ছাড়াও হতে পারে চরম মাথাব্যথা, মাইগ্রেন বা ফোলাভাব। আসলে এই অপাচ্য কণাগুলোকে শরীরে প্রবেশ করার ফলে দুই দিন পর্যন্ত নানা বিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। আবার অন্ত্রে কোন ফুটো বা ক্ষত তথা আলসার থেকে থাকলে এই সমস্যা আরও বেশি ভোগায়।
পারিবারিক ইতিহাস
ল্যাকটেজ তৈরি করতে অক্ষমতা কখনো জন্মগত হতে পারে। ল্যাকটেজ অসহিষ্ণুতার সঙ্গে জেনেটিক লিংক রয়েছে, যা কিশোর বয়সে উপসর্গ রূপে দেখা দেয়। একেবারে ছোট শিশুদেরও জেনেটিক কারণে ল্যাকটোজে সমস্যা হতে পারে।
বার্ধক্য
বয়স বাড়ার সঙ্গে ল্যাকটেজের উৎপাদন হ্রাস পায়। এর পরে বার্ধক্যের কারণে অসহিষ্ণুতার দিকে যেতে থাকে। দেখা যায় হয়তো আগে তার কখনো ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার প্রকাশ্য লক্ষণ ছিল না।
অসুস্থতা ও মানসিক চাপ
কিছু ক্ষেত্রে ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা অস্ত্রোপচার, আঘাত, অসুস্থতা, এমনকি নির্দিষ্ট ধরণের চিকিৎসার কারণেও হতে পারে। গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস, আইবিএস, ক্রোনস ডিজিজ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, সিলিয়াক ডিজিজ, ক্যান্ডিডার অতিরিক্ত বৃদ্ধি ও অন্ত্রে ছিদ্রসহ পাচনতন্ত্রের নানা জটিল অবস্থাএর জন্য দায়ী হতে পারে।
ডায়েট
বর্তমানে ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতার কোনো স্থায়ী নিরাময় নেই; কারণ কোনো চিকিৎসাই অন্ত্রে তৈরি ল্যাকটেজের পরিমাণ বাড়াতে পারে না। কিন্তু কিছু খাবার, বিশেষ করে প্রোবায়োটিক এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
এর মধ্যে আছে কেফির, যা এক ধরণের টক দই। রাশিয়ান অঞ্চলে এর প্রচলন বেশ। এখন পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। কেফির একটি দুগ্ধজাত পণ্য, যার গাজনপ্রক্রিয়া প্রাকৃতিকভাবে ঘটে। এতে ল্যাকটোজ ভেঙে যায়, যা শরীরের পক্ষে হজম করা এবং শোষণ করা সহজ।
ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতায় সাধারণত দুধ এড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এর অন্তর্নিহিত কারণগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য একটি সমন্বিত খাদ্যসূচি অনুসরণ করা প্রয়োজন। সব ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য, যেমন ল্যাকটোজ, ঘোল, দই, দুধের উপজাত প্রাথমিক পর্যায়ে এড়িয়ে চলতে হবে।
ছবি: পেকজেলস ডট কম