
জেনোমিক টেস্টিং আসলে কী
এই পরীক্ষায় একজন মানুষের জেনেটিক ডেটা বিশ্লেষণ করা হয়। জিনের ভেতর লুকিয়ে থাকে নানা তথ্য-কে কীভাবে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন বা ফ্যাট হজম করবে, কার শরীরে কোন ভিটামিনের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, কিংবা ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি কতটা। ফলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে জানা সম্ভব হয় কোন ধরনের খাবার আপনার শরীরের জন্য সবচেয়ে উপযোগী, আর কোনগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।

চিকিৎসকদের মতে, নির্দিষ্ট কিছু জিন আমাদের বিপাকক্রিয়া বা মেটাবলিজমে প্রভাব ফেলে। যেমন কারও জিনের কারণে কার্বোহাইড্রেট সঠিকভাবে হজম হয় না, আবার কারও শরীর দ্রুত ফ্যাট জমাতে থাকে। এমন মানুষ যদি সাধারণ ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করেন, তা কার্যকর হয় না। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট জানিয়ে দেয় কোন ধরনের খাবারে গুরুত্ব দিতে হবে এবং কীভাবে জীবনযাত্রা পরিবর্তন করলে শরীর সুস্থ থাকবে।

তবে এই পরীক্ষা এখনো শতভাগ নির্ভরযোগ্য নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু জিন যেমন FTO, MC4R, PPARG, APOA2, TCF7L2 স্থূলতা বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও, এগুলো সব ব্যাখ্যা করতে পারে না। বর্তমানে ডিএনএ টেস্ট শুধু ৮-১০ শতাংশ ক্ষেত্রে স্থূলতার কারণ ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। তাই একে এখনো সম্পূর্ণ চিকিৎসা-নির্ভর সমাধান হিসেবে দেখা যাচ্ছে না।

তবুও এর বড় সুবিধা হলো, ডিএনএ টেস্ট শুধু বর্তমান সমস্যার সমাধান নয়, ভবিষ্যতের ঝুঁকিও জানিয়ে দেয়। যেমন-কেউ হয়তো এখন সুস্থ, কিন্তু টেস্ট জানাল সে ভবিষ্যতে ভিটামিন বি১২ শোষণে সমস্যায় পড়তে পারে। এমন ক্ষেত্রে আগে থেকেই খাবারে প্রাণীজ উৎসের ভিটামিন বি১২ বা সাপ্লিমেন্ট যুক্ত করা যায়।

তবে এখানে রয়েছে কিছু নৈতিক বিষয়ও। চিকিৎসকেরা বলছেন, যেহেতু এখনো বড় কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই, তাই এ ধরনের টেস্ট করার আগে রোগীকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে যে এর ফল শতভাগ নিশ্চিত নয়। পাশাপাশি, জেনেটিক ডেটা নিরাপদে রাখা এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করাও জরুরি।
ডিএনএ টেস্ট একেবারে অবিশ্বাস্য কিছু নয়। এটি এক ধরনের স্বাস্থ্য কম্পাস-যা আপনাকে শরীরের ভেতরের দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং খাবার-ব্যায়ামের ক্ষেত্রে স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তবে শুধু জিন নয়, জীবনযাত্রা, ঘুম, ব্যায়াম ও মানসিক চাপও সমানভাবে প্রভাব ফেলে। তাই ডিএনএ টেস্টের পরও ডাক্তার ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
সূত্র: বিবিসি লাইফস্টাইল
ছবি: পেকজেলসডটকম ও ফ্রিপিক