যে ৫ পদ্ধতিতে দূর হবে দুশ্চিন্তা
শেয়ার করুন
ফলো করুন

মাঝেমধ্যে বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই অত্যন্ত কষ্টদায়ক অনুভূতিগুলো যদি তীব্রতার সীমা অতিক্রম করে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অবশ্যই একে একটি মনস্তাত্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা এবং এর উপযুক্ত সমাধানের পথ খোঁজা উচিত।

অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তা আমাদের ওপরে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে। যেমন:

১. আমাদের অনুভূতিতে
২. আমাদের চিন্তা -ভাবনায়
৩. আমাদের বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে
৪. ফলাফল স্বরূপ আমাদের আচরণে

দুশ্চিন্তার শারীরিক লক্ষণগুলো

  • হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে যাওয়া

  • অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন

  • মাথা হালকা লাগার অনুভূতি এবং মাথা ঘোরানো

  • মাথাব্যথা

  • বুকে ব্যথা

  • ক্ষুধামান্দ্য

  • প্রচণ্ড ঘাম হওয়া

  • শ্বাসকষ্ট

  • খুব গরম লাগা

  • কাঁপুনি

  • মানসিক অবস্থার পরিবর্তন

  • অত্যন্ত অস্থির ও নার্ভাস লাগা

  • আরাম বা রিল্যাক্স করতে না পারা

  • অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়া

  • হঠাৎ কান্না পাওয়া

  • ঘুমাতে না পারা

  • কোনোকিছুতে মনোযোগ না দিতে পারা

  • সব সময় সব ব্যাপারে সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ পরিণতির আশঙ্কা করা

  • হঠাৎ হঠাৎ প্রায়ই অতীতের কোনো দুর্ঘটনা বা খারাপ স্মৃতি মনে পড়া

  • অবসেসিভ বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই খারাপ কিছু ঘটা, কষ্টের কোনো অনুভূতির ব্যাপারে ভাবতে বাধ্য হওয়া।

বিজ্ঞাপন

দুশ্চিন্তার প্রভাবে আচরণগত পরিবর্তন
● অবসর সময় বা শখের কাজগুলোকে উপভোগ করতে না পারা
● নিজের খেয়াল না রাখা, যত্ন না নেওয়া
● মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে ও সম্পর্কগুলো ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া
● নতুন কিছু শুরু করতে শঙ্কিতবোধ করা। তা হতে পারে কোনো নতুন খাবার বা পোশাকের মতো সাধারণ ব্যাপার।
●কিছু বিশেষ স্থান, মানুষ বা পরিস্থিতিকে খুব সন্তর্পণে এড়িয়ে চলা
●কম্পালসিভ আচরণের পুনরাবৃত্তি করা। যেমন বারবার দেখা যে দরজা লক কি না বা চুলা নেভানো হয়েছে কি না।

দুশ্চিন্তার ধরন

দুশ্চিন্তাকে মোটা দাগে চার ভাগে বিভক্ত করা যায়।

১. জেনারেলাইজড বা সাধারণ অ্যাংজাইটি ডিজ–অর্ডার (জিএডি)

এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি অ্যাংজাইটি ডিজ–অর্ডার। জি এ ডিতে ভুগলে আমরা অতিরিক্ত পরিমাণে, অবাস্তব ও অত্যন্ত ক্ষীণ সম্ভাবনা আছে—এমন সব ব্যাপার নিয়ে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা করতে থাকি।

২. প্যানিক ডিজ–অর্ডার

প্রচণ্ড ভয়, আশঙ্কা ও আসন্ন বিপদের সম্ভাবনা দেখতে পাওয়ার অনুভূতির ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি ঘটে এ ক্ষেত্রে। এই কষ্টদায়ক ও অসহায় অনুভূতি অত্যন্ত তীব্র হয়ে থাকে। এবং এই তীব্রতা দ্রুত চরমে পৌঁছে যায়৷ প্রচণ্ড ঘাম হয়, বুকে ব্যথা হতে পারে, এবং খুব দ্রুত ও অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন দেখা দেয়। অনেক সময়ে দমবন্ধ হয়ে আসে এবং মনে হয় হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

৩. সামাজিক অ্যাংজাইটি ডিজ–অর্ডার

একে সোশ্যাল ফোবিয়াও বলা হয়৷ প্রাত্যহিক সামাজিক পরিস্থিতি যখন কারো মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক অতিসচেতনতা তৈরি করে, সেটাই সামাজিক বা সোশ্যাল অ্যাংজাইটি। এক্ষেত্রে আমরা ধরেই নেই যে সবাই আমাদের সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ও আমাদের ব্যাপারে মতামত দিচ্ছে। এ ছাড়া সবাই আমাদের নিয়ে কৌতুক করছে, এ রকম ভেবে প্রচণ্ড বিব্রত হওয়ার অনুভূতি হতে পারে।

৪. নির্দিষ্ট ব্যাপারে আতঙ্ক বা ফোবিয়া

এ ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ বিষয়ে প্রচণ্ড ভয় ও শঙ্কা অনুভূত হয়৷ হতে পারে তা বেশি উচ্চতায় ওঠা, উড়োজাহাজে চড়া অথবা কোনো বিশেষ প্রাণী ও কীটপতঙ্গ। এই ভয় একেবারে খুবই তীব্র হতে পারে এবং তখন আমরা খুব সাধারণ অবস্থা বা পরিস্থিতিও এড়িয়ে চলি।

বিজ্ঞাপন

দুশ্চিন্তা বা দুশ্চিন্তা কমানোর উপায়

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাজনিত কারণে যদি স্ট্রেস একেবারে সীমার বাইরে চলে যেতে থাকে, তখন দেখা যায় আমরা দ্রুত ও ছোট ছোট শ্বাস-প্রশ্বাস নেই ও ছাড়ি। হৃৎস্পন্দনও যায় বেড়ে। এই সিগন্যাল পেলেই সচেতনভাবে ধীরস্থির হয়ে, সময় নিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

এর জন্য নিচের দুই ধাপের পদ্ধতিটি অনুসরণ করা যেতে পারে

১. ডিপ বেলি ব্রিদিং এক্সারসাইজ

১-২-৩ গুনে প্রশ্বাস নিতে হবে এবং এরপর ৪-৫ গুনে নিশ্বাস ছাড়তে হবে। পেটে বাম হাত ও বুকে ডান হাত রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বাম হাত বেশি স্থানান্তরিত হয় ডান হাতের চেয়ে। এভাবে শ্বাস নেওয়াকে বেলি ব্রিদিং বলা হয় এবং এটি রিল্যাক্স করার উপায় হিসেবে বেশ কার্যকর। তীব্র দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় কারও সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ানো উচিত নয়। অন্যদের কোনো কথা বা কাজের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগে নিজের ওপরে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। নিজের মানসিক সুস্থতাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে বেলি ব্রিদিংয়ের মাধ্যমে প্রশ্বাস-নিশাসের চক্রটি চালু রাখতে হবে অন্তত পাঁচ মিনিট।

২. বর্তমান সময়ের দিকে ফোকাস করা

সাধারণত আমাদের অমূলক বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগুলো অতীত বা ভবিষ্যৎকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। তাই এই ব্রিদিংয়ের সময়ে বর্তমান সময়ের কিছু ব্যাপারের দিকে ফোকাস করতে হবে।

● পাঁচটি জিনিস যা দেখা যায়
● চারটি জিনিস যা স্পর্শ করা যায়
● তিনটি বিশেষ শব্দ বা সাউন্ড যা শোনা যায়
● দুটি বিশেষ ঘ্রাণ

একটি বিশেষ স্বাদের কোনো খাবার বা বস্তু

এভাবে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং দৃষ্টি, স্পর্শ, শ্রবণ, ঘ্রাণ ও স্বাদের অনুভূতিগুলোর দিকে মনোনিবেশ করে অতিরিক্ত ও অমূলক দুশ্চিন্তা বা অ্যাংজাইটি ডিজ–অর্ডার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু এই দুশ্চিন্তার ক্রনিক ও মাত্রাতিরিক্ত হলে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা আসলে বা নিজের ও অপরের ক্ষতি সাধনের সম্ভাবনা থাকলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন