উপকারী ফ্যাটে ভরপুর নারকেলও যে একটি সুপারফুড, জানতেন কি?
শেয়ার করুন
ফলো করুন

চিয়া সিড, তিসি, সূর্যমুখীর বীজের মতো অনেক সুপারফুডের কথা আমরা জানি। অথচ নারকেলের কথা আমরা মনেই রাখি না। নারকেল হচ্ছে সেই সুপারফুড, যার মধ্যে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার সমন্বয়। নারকেল তেল মস্তিষ্কের কার্যক্রম ভালো রাখে এবং বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশি নিউট্রিশনিস্ট, নিউট্রিশন থেরাপিস্ট, কিনিসিওলজিস্ট ও ট্রমা রিলিজ প্র্যাকটিশনার শাহমিকা আগুনের সঙ্গে কথা বলেই সুপারফুড নারকেলের বিস্তারিত জানানো হলো।

নারকেল

কোকোনাট শব্দটি এসেছে পর্তুগিজ থেকে। স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা এই নাম দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। আরবদের দেওয়া নাম ‘জাওজহাত আল-হিন্দ’, মানে ‘ভারতের আখরোট’। বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথি ও সাহিত্যে নারকেলের উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণ ও শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর আগে ভারতীয় উপমহাদেশে নারকেলের উপস্থিতি ছিল। আরব্য রজনীর বিখ্যাত ‘সিন্দবাদে’ও নারকেল বিক্রির উল্লেখ আছে। ভেনিসিয়ান অভিযাত্রী মার্কো পোলো ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মিসরে নারকেলগাছ দেখেন এবং নারকেলকে ‘ফেরাউনের বাদাম’ বলে অভিহিত করেন। নারকেল নিয়ে শ্রীলঙ্কা ও ভারতে বিভিন্ন উপকথা ছড়িয়ে আছে। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনিও আছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে নারকেল পবিত্র ফল।

বিজ্ঞাপন

নারকেলের নানা ব্যবহার

নারকেলগাছকে বলা হয় জীবনের গাছ। কেননা, এর ফল, কাণ্ড সবই কাজে লাগে। নারকেলের শাঁস দিয়ে নানা স্বাদের পিঠা ও মিষ্টান্ন তৈরি হয়। নারকেলের সুস্বাদু রেসিপিও আছে বিভিন্ন দেশে। নারকেল থেকে তৈরি হয় তেল। এ ছাড়া নারকেলের পানিও অত্যন্ত পুষ্টিকর; এর মধ্যে আছে প্রচুর পটাশিয়াম। নারকেলে আছে ফাইবার এবং ভিটামিন সি, ই, বি১, বি৩, বি৫ ও বি৬। আছে লোহা, তামা, সেলেনিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, জিংকসহ বিভিন্ন খনিজ উপাদান।  প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইটিক বৈশিষ্ট্যের জন্য ক্রীড়াবিদেরা নারকেলের পানি পান করে থাকেন। খুব ক্লান্ত লাগলে, প্রচণ্ড রোদে পরিশ্রান্ত হলে পান করুন নারকেলের পানি। নিমেষেই দূর হয়ে যাবে ক্লান্তি।

নারকেল শুধু খাবার হিসেবে নয়, প্রসাধনশিল্পেও গুরুত্বপূর্ণ। সাবান, শ্যাম্পু ও অন্যান্য প্রসাধনী তৈরিতে নারকেলের ব্যবহার করা হয়। নারকেলের তেল বের করার পর থেকে যাওয়া অংশ পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

নারকেলের উপকারিতা

নারকেলে বেশি ক্যালরি থাকায় দ্রুত শরীরে শক্তি জোগায়। তাই কাজের মাঝখানে ক্লান্তি এলে বা হালকা খিদে পেলে নারকেল খেলে তাৎক্ষণিক শক্তি বাড়বে।
হৃদ্‌যন্ত্র ভালো রাখে নারকেল। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদ্‌রোগের হওয়ার ঝুঁকি কমায়। নারকেলে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল বাড়ায় না; বরং আর্থারোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি কমিয়ে হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে সহায়তা করে।
নারকেল রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরাও পরিমিত নারকেল খেতে পারেন।

নারকেল হাড়ের জন্য ভালো। এতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকায় হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। একই সঙ্গে অস্টিওপোরেসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও যেকোনো হাড়ের ব্যাধি সারায়।

হজমপ্রক্রিয়ায় সহায়তা করে নারকেল। এতে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যামিনো অ্যাসিড হজমক্ষমতা বাড়ায়।

এ ছাড়া নারকেল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

নারকেলের দুধ লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। একই সঙ্গে হেপাটাইটিস সি, জন্ডিস ও লিভারের বিভিন্ন অসুখ সারাতে নারকেলের দুধ কার্যকর। যাঁদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, দুগ্ধজাত খাদ্য খেতে পারেন না, তাঁরা নারকেলের দুধ খেতে পারেন।

নিয়মিত নারকেল খেলে স্তন ক্যানসার, কোলন ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্যানসারেরও ঝুঁকি কমে।

ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে নারকেল। নিয়মিত নারকেল খেলে ত্বক কোমল ও সুন্দর হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, নারকেল খেলে ত্বকে বলিরেখা পড়া প্রলম্বিত হয়।

চুল ভালো রাখতেও সাহায্য করে নারকেল। নিয়মিত নারকেল খেলে মাথায় খুশকি ও শুষ্কতা দূর হয়। এ ছাড়া নারকেল তেল ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়।

নিয়মিত নারকেল খাওয়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ, এতে অনেক ফাইবার থাকে, যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। তবে অতিরিক্ত নারকেল খেলে আবার ওজন বাড়তেও পারে। কারণ, এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।

আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে নারকেল সবচেয়ে সহজলভ্য সুপারফুড। নারকেল তেল হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র ভোজ্যতেল, যা দিয়ে রান্না করার পরও গুণাবলি অটুট থাকে। শিশুদের মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের বিকাশে নারকেলের তেল খুবই কার্যকর। এ প্রসঙ্গে শাহমিকা আগুন বলেন, অটিস্টিক শিশুদের এই তেল ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে দেওয়া হয়, যা খুব ভালো কাজ করে।

সূত্র: হেলথলাইন

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন