স্ট্রোক হওয়ার আগেই যে লক্ষণগুলো দেখা দেয়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের বেঁচে থাকার জন্য রক্তের (Blood) প্রয়োজন হয়। কিন্তু শরীরের কোথাও রক্ত চলাচল সম্ভব না হলে দেখা দিতে পারে মারাত্মক সমস্যা। সেক্ষেত্রে সেই অংশের কোষগুলি প্রাণ হারাতে শুরু করে। শীরের যে কোন অংশে এমনকি মস্তিষ্কেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। আর তখনই স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় মানুষ।

মাথার রক্তনালিতে কোনো কারণে রক্ত জমাট বাঁধলে বা কোলেস্টেরল জমলে সেই অংশে রক্ত চলাচল ঠিকমতো হয় না। তখন মস্তিষ্কের সেই অংশের কোষ মারা যেতে শুরু করে। এই কারণেই আগে থেকে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই বিষয়গুলি নিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন বা আক্রান্ত হতে যাচ্ছেন?

১। এক বা উভয় চোখে হঠাৎ ঝাপসা দেখা।
২। হঠাৎ কথা বলতে অসুবিধা
৩। হাঁটাচলা এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা
৪। বমি বা অজ্ঞান হয়ে হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা
৫। আকস্মিকভাবে একটি হাত বা পা এবং মুখের অসারতা, হাসির সময় ঠোঁট একপাশে নিচু হয়ে যাওয়া
৬। হঠাৎ মাথা ব্যথা

বিজ্ঞাপন

এ রকম লক্ষণগুলো দেখা গেলে আমরা একটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝতে পারি যে এটি আসলেই স্ট্রোক কিনা। পরীক্ষাটির নাম হচ্ছে ফাস্ট (FAST) টেস্ট। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ফাস্ট (FAST) টেস্ট একটি সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যা স্ট্রোকের লক্ষণ দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

ফাস্ট (FAST) শব্দটি চারটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ:

F - Face Drooping (মুখ বেঁকে যাওয়া) স্ট্রোকের সময় একজন ব্যক্তির মুখের একটি অংশ ঝুলে যেতে পারে। হাসার সময় মুখের এক দিক যদি ঝুলে যায় বা মুখের কোনো এক দিক স্থির থাকে, তাহলে সেটি স্ট্রোকের একটি সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে।

A - Arm Weakness (হাতের দুর্বলতা) স্ট্রোকের কারণে হাত বা বাহুর এক দিক দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যদি ব্যক্তিকে উভয় হাত ওঠাতে বলা হয় এবং দেখা যায় একটি হাত নেমে যাচ্ছে বা শক্তি ধরে রাখতে পারছে না, তাহলে এটি স্ট্রোকের ইঙ্গিত হতে পারে।

S - Speech Difficulty (কথা বলার সমস্যা) স্ট্রোকের সময় ব্যক্তির কথা অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে, এমনকি, কথা বলা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যদি কথা বলায় সমস্যার সম্মুখীন হন বা বাক্য গঠন করতে না পারেন, তাহলে এটি স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।

T - Time to Call Emergency (জরুরি সাহায্য নেওয়া) স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবিলম্বে ইমার্জেন্সি নম্বরে ফোন করা উচিত। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাড়াতাড়ি চিকিৎসা পেলে মস্তিষ্কের ক্ষতি কম হয় এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। স্ট্রোকের ফাস্ট (FAST) টেস্ট করা সহজ এবং দ্রুততার সঙ্গে লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে পারলে জীবন বাঁচানো সম্ভব।

নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে স্ট্রোকের ঝুঁকি পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন:

১। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা।
২। অতিরিক্ত তেলচর্বি ও চিনি-লবণযুক্ত খাবার, ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে পুষ্টিকর ডায়েট মেনে চলা।
৩। ধূমপান, জর্দা-তামাক, মাদক সেবন, মদপান এড়িয়ে চলা।
৪। প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম।
৫। শরীরচর্চা বা নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম করা। ওজন ঠিক রাখা।
৬। প্রতি ছয় মাস অন্তর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা

ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন