'প্রিবায়োটিক' আর 'প্রোবায়োটিক' যেভাবে আমাদের শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখে
শেয়ার করুন
ফলো করুন

অণুজীবের নাম শুনলেই একটা আতঙ্ক ভর করে বসে। ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস ইত্যাদিকে আমরা মাইক্রো–অর্গানিজম বা অণুজীব হিসেবে চিনি। আমাদের শরীরে তাদের প্রভাব কতটা খারাপ, কমবেশি আমরা সবাই জানি। ব্যাকটেরিয়া মূলত একক কোষে গঠিত অণুজীব। নিউমোনিয়া, কলেরা, জন্ডিস, শ্বসনতন্ত্রে প্রদাহ, ফুড পয়জনিং, ধনুষ্টংকার, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ অসংখ্য রোগের জন্য দায়ী এই ব্যাকটেরিয়া। অনেকে মনে করেন, ব্যাকটেরিয়া মানবশরীর এমনকি পশুপাখির জন্য শুধুই ক্ষতিকর। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, কিছু ব্যাকটেরিয়া শুধু উপকারী নয়, দরকারিও বটে।

কেমিক্যাল, প্রিজারভেটিভ আর অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এসব জরুরি আর উপকারী ব্যাকটেরিয়া উজাড় হয়ে যাচ্ছে
কেমিক্যাল, প্রিজারভেটিভ আর অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এসব জরুরি আর উপকারী ব্যাকটেরিয়া উজাড় হয়ে যাচ্ছে


আমাদের অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট, ভাইরাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির অণুজীবের সমন্বয়ে গঠিত হয় মাইক্রোবায়োটা। আমার দেহের জন্য এই মাইক্রোবায়োটা অত্যন্ত প্রয়োজন। মানুষের পরিপাকতন্ত্রে ১০০ ট্রিলিয়নের বেশি অণুজীব পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের খাদ্যবস্তুতে থাকা অসহনীয় রকমের কেমিক্যাল, প্রিজারভেটিভ আর অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এসব জরুরি আর উপকারী ব্যাকটেরিয়া উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে আমাদের হজমে সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা থেকে শুরু করে আরও জটিল সব সমস্যা এমনকি যকৃৎ ও পিত্তথলির রোগ হতে পারে। এ প্রসঙ্গে প্রিবায়োটিক আর প্রোবায়োটিক নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হলেও আমরা অনেকেই জানি না যে এ দুটি কাজ করে একেবারে ভিন্নভাবে।

বিজ্ঞাপন

প্রিবায়োটিক হচ্ছে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার। এ খাবারগুলোকে সাধারণত আমাদের পরিপাকতন্ত্রের পাচক রস সরাসরি হজম করতে পারে না। অথচ তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পুষ্টির ঘাটতি পূরণে ও শারীরিক প্রতিরক্ষায় অত্যন্ত প্রয়োজন। কিছু ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে এ খাবারগুলো আমাদের শরীরে পুষ্টি জোগায়। এসব ব্যাকটেরিয়া প্রোবায়োটিক নামে পরিচিত, যেমন ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া। এই প্রোবায়োটিকের খাদ্যই হচ্ছে প্রিবায়োটিক, যা আমাদের উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার হজমে সাহায্য করে। এবার জেনে নেওয়া যাক মানবদেহে এই প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিকের কিছু উপকারী বৈশিষ্ট্য।

প্রোবায়োটিকের উপকারিতা

১. হজমপ্রক্রিয়ায় সাহায্য করে
২. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে
৩. পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখে

প্রোবায়োটিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমায়

তা ছাড়া গবেষণায় জানা গেছে, প্রোবায়োটিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমায়, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, একজিমার মতো রোগের বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহায্য করে। আরও অনেক ক্ষেত্রেই তাদের ভূমিকা আছে।

প্রিবায়োটিকের উপকারিতা

১. শরীরে ক্যালসিয়াম গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায়
২. প্রোবায়োটিকের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে
৩. পরিপাকতন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখে

বিজ্ঞাপন

প্রোবায়োটিকের একমাত্র খাদ্য হচ্ছে প্রিবায়োটিক। সুতরাং প্রোবায়োটিকের কার্যকারিতা সঠিক রাখতে প্রিবায়োটিক অত্যন্ত প্রয়োজন।

যেসব খাদ্যে প্রিবায়োটিক পর্যাপ্ত রয়েছে

১. টক দই               ৬. রসুন          ১১. ফুলকপি
২. কেফির             ৭. ওটস         ১২. গাজর
৩. বাটারমিল্ক          ৮. মিসো        ১৩. কিমচি
৪. চিজ বা পনির      ৯. শসা
৫. জলপাই            ১০. সবুজ শিম

প্রোবায়োটিকের একমাত্র খাদ্য হচ্ছে প্রিবায়োটিক
প্রোবায়োটিকের একমাত্র খাদ্য হচ্ছে প্রিবায়োটিক

সুস্থ দেহ আমাদের সবার কাম্য। দেহে রোগের সংক্রমণ রুখতে ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো দরকার। আর দরকার পুষ্টির। গবেষকদের মতে, রোগ প্রতিরোধে এই প্রোবায়োটিক আর প্রিবায়োটিকের উপস্থিতি শরীরের জন্য দরকার। বিশেষজ্ঞরা প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক নিয়ে আরও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে নতুন তথ্যগুলো আসলেই অবাক করার মতো। মানবদেহে ব্যাকটেরিয়ার মতো অণুজীবের বসবাস ও উপকারী ভূমিকা, অর্থাৎ জৈবিক মিথস্ক্রিয়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত এই প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিক।

তথ্যসূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন

ছবি: পেকজেলস ডট কম

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০২: ১০
বিজ্ঞাপন