নিদ্রাহীনতার যত লক্ষণ
শেয়ার করুন
ফলো করুন

গানে আর কবিতায় নতুন প্রেমে পড়া বা বিরহের কারণে ঘুম না হওয়ার কথা লেখা হয়েছে হাজারবার। কিন্তু আজকাল কোনো কারণ ছাড়াই অনেকেরই দুচোখের পাতায় রাতের ঘুম নেই। এদিকে সারা দিন ক্লান্তি ভর করে শরীরে। মনে তো বটেই। বিশেষজ্ঞরা এমন কিছু বিষয়ের কথা বলেন, যেগুলো একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, নিদ্রাহীনতা গ্রাস করছে দেহ-মনকে।

বারবার অসুখে পড়া

ভালো ঘুম না হলে প্রথমেই ত্বকে তার বিরূপ প্রভাব দেখা দেবে। হতে পারে র‍্যাশ, পিম্পল, ব্রণ। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম শরীরের বেশ কিছু হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ইমিউন সিস্টেম ব্যাহত হয়। ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগবালাই আক্রমণ করে সহজে। দেখা যাবে, মাসে মাসেই ঋতুবদলের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল জ্বর, সর্দি-ঠান্ডা, পেটের অসুখ লেগেই আছে।

চোখই বলবে ঘুম হচ্ছে না

চোখে লালচে ও ফোলা ভাব, ডার্ক সার্কেলই বলে দিতে পারে পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে না। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো চোখকেও আরাম দিতে হয়। চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম দিতে হয়। ঘুমবঞ্চিতদের চেহারায় বলিরেখা, ফোলাভাব ও চামড়া ঝুলে যাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। এর কারণ হলো, ঘুম গভীর ও পরিপূর্ণ হলে সে সময় শরীর হরমোন নিয়ন্ত্রণ ও টিস্যু মেরামতের মতো কাজগুলো করতে পারে। তাই যখন ঘুম হয় না, তখন এই সমস্যাগুলো শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

ওজন বেড়ে যাবে দ্রুত

গবেষকেরা বলেন, রাতের ঘুম অত্যন্ত জরুরি। ঘুম যখন পর্যাপ্ত হয়, তখন শরীর গারলিন ও লেপটিন হরমোন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুই হরমোন কেন এত প্রয়োজনীয়। লেপটিন হরমোন চর্বিজাতীয় কোষ দিয়ে তৈরি, যা ঘন ঘন ক্ষুধা পাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে। গারলিন হরমোন সঠিক সময়ে ক্ষুধার অনুভূতির সিগন্যাল দেয় আর পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের মাধ্যমে শরীরের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তাই এ দুটি হরমোন নিয়ন্ত্রণে না থাকলে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়ার তাগিদ অনুভব হবে, যা ওজন বাড়িয়ে দেবে।

অস্বাস্থ্যকর জাংক ফুডে আসক্তি

নিদ্রাহীন রাত কাটলে পরদিন চিজবার্গার, পিৎজা কিংবা ভাজাপোড়া জাংক ফুড খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমবঞ্চিত মস্তিষ্ক অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস ও খাবারের আকাঙ্ক্ষা জাগায়। অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়লে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা হ্রাস পায় বা তা ততটা ফলপ্রসূ হয় না। এমন সময়ে হতাশা থেকেও অস্বাস্থ্যকর অথচ আপাতসুস্বাদু খাদ্য ও পানীয়ের প্রতি আসক্তি আসে।

মাত্রাছাড়া চা-কফি পান

ক্লান্তিভাব কাটাতে কিংবা অবসরে আমরা চা-কফি পান করে থাকি। কিন্তু ঘুম না হওয়ার একটি বড় কারণ এটিই হতে পারে। বলা যায়, অনিদ্রার জন্য অনেকাংশে ক্যাফেইন দায়ী। কফি বা চায়ের কাপটি কিছুক্ষণের জন্য চনমনে ভাব জাগিয়ে তুলতে পারে তবে অনিদ্রার সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সব সময় মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন সেবন করলে এটিই উল্টো অনিদ্রা বা মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

ঘুমের অভাবে বিরক্তি

কারণে-অকারণে বিরক্তি ঘুমের অভাবের একটি বড় লক্ষণ। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, চারজন মানুষকে এক সপ্তাহের জন্য রাতে এক বা দুই ঘণ্টা ঘুমাতে দেওয়া হয়। ফলে তাঁদের আচরণে রগচটা, অত্যধিক দুশ্চিন্তা আর মানসিকভাবে ক্লান্ত দেখা যায়। এরপর যখন তাঁরা আগের স্বাভাবিক ঘুমের সময়সূচিতে ফিরে আসেন, তখন তাঁরা মানসিকভাবে অনেকটা ভালো অনুভব করেন।

হতাশা গ্রাস করবে নিজেকে

হতাশা ও অপরিমিত ঘুম একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। বলা যায়, এটা বৃত্তাকারে চলা এক দুষ্টচক্র; অর্থাৎ হতাশার কারণে ঘুম হয় না, আবার ঘুম ভালো হয় না বলে হতাশায় ভোগে মানুষ।

ফোকাস আর স্মৃতিশক্তির ক্ষয়

ঘুমের অভাব আমাদের যখন-তখন ক্ষুধার অনুভূতি দিতে পারে এবং স্মৃতিশক্তিকেও প্রভাবিত করতে পারে। অপরিমিত ঘুম কর্মক্ষেত্রের কার্যকারিতা ও দক্ষতা কমায়।

তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, ওয়েবএমডি

ইলাস্ট্রেশন: আরাফাত করিম

ছবি: সাইফুল ইসলাম ও পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৩, ১৪: ৫৩
বিজ্ঞাপন