আমাদের প্রাত্যহিক খাদ্যদ্রব্যে বিভিন্নভাবে চিনির ব্যবহার তো রয়েছেই। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকি, ওজন হ্রাস, ডায়াবেটিসসহ নানা কারণে অনেকেরই কিন্তু এড়িয়ে চলতে হয় চিনি। কিন্তু এমন বেশ কিছু মিষ্টিজাতীয় খাবার রয়েছে, যেগুলো চিনি ছাড়া কল্পনা করা যায় না। তাই অনেকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নেন কৃত্রিম চিনি। কারণ, এটি একই সঙ্গে খাবারে মিষ্টতা যোগ করে এবং এতে ক্যালরির পরিমাণও থাকে কম। বর্তমানে এফডিএ অনুমোদিত ছয় ধরনের কৃত্রিম চিনি বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো হলো
১.স্যাকারিন
২. অ্যাস্পার্টাম
৩. সুক্রালোজ
৪. অ্যাসিসালফেম পটাশিয়াম
৫. নিওটামে
৬. অ্যাডভান্টামে
এই কৃত্রিম চিনি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। এমনকি বিজ্ঞানীদের মধ্যেও এটি নিয়ে দুই ধরনের মন্তব্য রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, অ্যাস্পার্টামে ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। তবে গত ১৪ জুলাই, ২০২৩–এ প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্টে বলা হয়, অ্যাস্পার্টাম অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে এটির পক্ষে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এটিকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য পরবর্তী গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
কৃত্রিম চিনিতে ক্যানসারের ঝুঁকি নিয়ে নানামুখী বিতর্ক থাকলেও স্বাস্থ্যে এর যে কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব নেই, তা একেবারেই বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এর ছয়টি মারাত্মক ক্ষতি সম্পর্কে জানা গেছে।
১. ক্ষুধা ও ওজন বৃদ্ধি
অনেকেই মনে করে থাকেন, ওজন হ্রাসের জন্য কৃত্রিম চিনি বেশ উপকারী একটি বিকল্প। তবে এই ধারণাটি মোটেও ঠিক নয়। বরং কৃত্রিম চিনি আপনার মস্তিষ্কে ক্ষুধার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রকৃত চিনির তুলনায় অ্যাস্পার্টাম ক্যালরি গ্রহণ, ক্ষুধা এবং চিনি গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে পারে। তাই এটি ওজন হ্রাস করতে মোটেও কোনো ভূমিকা রাখে না। এ ছাড়া ডায়েট সোডাজাতীয় পানীয়গুলোতে যে কৃত্রিম চিনি থাকে, সেটিও কিন্তু ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
২. রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া
যদিও কৃত্রিম চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না, তবে এটি রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে। মিষ্টি স্বাদের কারণে অগ্ন্যাশয় এটিকে চিনি হিসেবে ধরে নেয়। যার ফলে ইনসুলিনের উৎপাদন বেড়ে যায়। যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ কৃত্রিম চিনি রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট করে।
৩. অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন
অন্ত্রে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়াগুলো প্রকৃত চিনির তুলনায় কৃত্রিম চিনির ক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা প্রতিক্রিয়া জানায়। স্যাকারিন ও সুক্রোজকে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম পরিবর্তন করতে দেখা গেছে। ফলে অন্ত্রে ভালো ও খারাপ ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতা হয়। এর ফলে শরীরে ফোলাভাব, অন্ত্রের চারপাশের পর্দা পাতলা হয়ে যাওয়া, মাইগ্রেন, অটোইমিউন রোগ, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, বিরক্তি ও দুশ্চিন্তার মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে।
৪. স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের করা একটি সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, বয়স্ক ও মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে কৃত্রিমভাবে চিনিযুক্ত পানীয়গুলো স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকির বাড়াতে পারে। তবে এটি নিয়েও আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
৫. মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি বাড়ায়
মেটাবলিক সিনড্রোম বলতে মূলত বেশ কয়েকটি ঝুঁকির কারণগুলোকে একই সঙ্গে বোঝানো হয়ে থাকে। অর্থাৎ যেসব কারণে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের মতো বড় স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো দেখা দেয়। যেমন কোমরের চারপাশে চর্বি, উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড স্তর, কম এইচডিএল কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র:হেলথলাইন
ছবি: পেকজেলস ডট কম