রাত জেগে এই ৪টি বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
শেয়ার করুন
ফলো করুন

বর্তমান প্রজন্ম এগিয়ে গেছে অনেক ক্ষেত্রে। অত্যাধুনিক স্মার্ট ডিভাইস, জীবনমানের উন্নয়ন ও পরিবর্তন সবই হচ্ছে সময়ের সঙ্গে। তবে এসব আধুনিকতার সঙ্গে অভিযোজন করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা খাল কেটে কুমির আনার মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছি। চাকরির ধরনের পরিবর্তন ও ডিভাইস আসক্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দৈনিক রুটিন। কর্মক্ষেত্র গ্লোবাল হওয়ায় বিদেশি ক্লায়েন্টের কাজ করতে গিয়ে রাতের পর রাত জেগে হাজার ডলার ইনকাম করছি আমরা ঘরে বসেই। আবার টিনএজারদের বড় একটি অংশ সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং, কনটেন্ট ক্রিয়েশনের কাজ করে রাত জেগে। এখন তো রাত জাগা যেন স্মার্টনেসের পরিচয়। আজ বন্ধুমহলে বলে দেখুন তো আপনি রাত ১০টায় ঘুমান আর ভোর ৫টায় ওঠেন। কত রকম নেতিবাচক কথা যে শুনতে হবে তার ইয়ত্তা নেই।


সময়ের সঙ্গে এই রাত জাগার অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে উঠছে প্রতিটি পরিবারে। আপনার ঘরের সন্তানটি কিন্তু বড় হয় আপনার আলোতেই। আপনি যদি রাত ২-৩টা পর্যন্ত জেগে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন, সে নিশ্চয়ই রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস তৈরি করবে না। যদি রাত-দিন একই হতো, তাহলে নিশ্চয়ই রাতে ঘুমিয়ে সকালে ওঠার নিয়মই থাকত না।  

বিজ্ঞাপন

প্রতিদিন একটি নির্দির্ষ্ট রুটিন মেনে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠা অনেক বেশি জরুরি। আমাদের শরীরকে যদি আপনি একটি যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে খাওয়া আর ঘুম হচ্ছে এর জ্বালানি। আমরা প্রত্যেকে সারা দিন কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকি। হোক তা ঘরে কিংবা বাইরে। এরপর এই ক্লান্ত শরীরে যদি রাত জাগা হয়, তাহলে যে যন্ত্র সঠিকভাবে চলবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর এই অনিয়ম যদি হয় নিয়মিত, তাহলে শরীরের পক্ষেও সব কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। আসুন জেনে রাখি রাত জেগে কীভাবে নিজের ক্ষতি করছি আমরা নীরবে।

চেহারার সজীবতা হারায়

এত এত সৌন্দর্যবর্ধনকারী পণ্য ব্যবহার করার পরও চোখের চারপাশে কালো দাগ বা ডার্ক সার্কেল, ব্রণ, ত্বকে শুষ্কতার সমস্যায় ভুগছেন? একটু খেয়াল করে দেখবেন আপনার ঘুমের রুটিন ঠিক আছে কি না। দৈনিক কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা পরিপূর্ণ ঘুম আদৌ কি হচ্ছে? নিয়মিত সঠিক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। কেননা অতিরিক্ত রাত জাগা ও পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণেই এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়।


কাজের গতি হারিয়ে যায়

রাতে পরিপূর্ণ ঘুম না হলে ঘুম ঘুম ভাব সারা দিন বিরাজ করে। এমন হলে মস্তিষ্কে চাপ পড়ে। ফলে কাজে উদ্দীপনা থাকে না। কাজে মনোযোগও আসে না। কমে যায় কাজের গতি।

বিজ্ঞাপন

মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে

পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। তখন সব কাজেই বিরক্তি আসে এবং ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে কারও সঙ্গে সহজে ভালো ব্যবহার করা যায় না। এতে বিভিন্ন সম্পর্কের অবনতি হয়, যার প্রভাব পারিবারিক ও মানসিক—উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়। যাঁরা প্রায়ই রাত জাগেন, তাঁদের উদ্বিগ্নতা, অবসাদ ও বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এমনকি রাতে না ঘুমানোর সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতারও সম্পর্ক রয়েছে বলে গবেষকেরা জানান।

বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা

পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় অরুচি বেড়ে যায় রাত জেগে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের অনেকেই অনেক বেশি চা-কফি পান করেন, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আবার অনেকের রাত জাগার সঙ্গী ধূমপান। নিকোটিন শরীরের জন্য কত ক্ষতিকর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না নিশ্চয়ই। ঘুমের সময় ঠিক না থাকলে খাওয়ার সময়ও এলোমেলো হয়। যেমন আপনি যদি রাতের খাবার রাত আটটায় খেয়ে রাত দুইটা-তিনটায় ঘুমাতে যান, অবশ্যই আপনি ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যাবেন। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থেকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করছেন আপনি নিজেই। আবার রাত দুইটা-তিনটায় যদি আপনি খাবার খান, তাহলে হজমপ্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, যার ফলে বদহজম খুব সাধারণ সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। দেহঘড়ির পরিবর্তনের প্রভাব যেমন দৈনন্দিন কাজে পড়ে, তেমনি কিন্তু কমে যায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগের মতো ঝুঁকিপূর্ণ রোগগুলো শরীরে বাসা বাঁধে অনায়াসেই।

বেঁচে থাকতে হলে সুস্থতা খুবই প্রয়োজন। হয়তো রাত জেগে আপনি অনেক ভালো আয় করছেন কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে অসাধারণ সময় পার করছেন। কিন্তু শরীরের হরমোনগুলোর ভারসাম্যহীনতা করছে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি। প্রতিদিন নিয়মমতো পর্যাপ্ত ঘুম আপনার শরীর, মন ভালো রাখবে। আশপাশের সব কাজও সুন্দরভাবে হতে সহায়তা করবে।

সূত্র: ভেরি ওয়েল ফিট

ছবি: পেকজেলস ডট কম

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০: ৫৬
বিজ্ঞাপন