দাঁত নিয়ে চিন্তা আর না! চলমান গবেষণা সফল হলে দাঁত নিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান হবে। কারণ, গবেষকদের দাবি, ওষুধটি প্রাকৃতিকভাবে মাড়িতে দাঁত গজাতে সাহায্য করে। এর ফলে ভবিষ্যতে ডেঞ্চার বা দাঁতের ইমপ্লান্টের প্রয়োজনীয়তা না–ও থাকতে পারে।
এই ওষুধের কার্যকারিতার মূল চাবিকাঠি হলো ইউটেরাইন সেনসিটাইজেশন-অ্যাসোসিয়েটেড জিন-১ (USAG-1) নামের একটি প্রোটিন। ফিজিক্যাল অ্যানাটমিতে এই প্রোটিন দাঁত গঠনের প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়; অর্থাৎ দাঁত তৈরি হওয়া থেকে শরীরকে বিরত রাখে। গবেষকেরা খুঁজে পেয়েছেন, এই প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করলে শরীর আবার দাঁত গজানোর সংকেত পায় এবং দাঁতের কোষ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইউটেরাইন সেনসিটাইজেশন-অ্যাসোসিয়েটেড জিন-১ প্রোটিনকে নিষ্ক্রিয় করে, যাতে দাঁত তৈরি হওয়ার স্বাভাবিক জিনগত সংকেত আবার সক্রিয় হয় এবং নতুন দাঁত গজাতে শুরু করে।
এই প্রোটিন ইঁদুর ও কুকুরের ওপর গবেষণায় সফল হওয়ার পর, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম মানব–নিরীক্ষা শুরু করে জাপান।
এই পরীক্ষার জন্য অংশগ্রহণকারী হিসেবে নেওয়া হয়েছে এমন প্রাপ্তবয়স্কদের, যাঁরা অন্তত একটি করে মোলার (চিবানোর দাঁত বা চর্বণ দন্ত) হারিয়েছেন। এই ধাপে মূলত ওষুধটি নিরাপদ কি না এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরবর্তী ধাপে এই ট্রায়াল বিস্তৃত হবে ২ থেকে ৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে, যাদের জন্মগতভাবে কিছু দাঁত গঠিত হয়নি। এটাকে দন্তবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয়: congenital tooth agenesis। পাশাপাশি বয়সজনিত কারণে বা দুর্ঘটনায় দাঁত হারানো প্রাপ্তবয়স্কদের ওপরও পরীক্ষা চালানো হবে।
গবেষকেরা আশা করছেন, যদি সব ট্রায়াল সফল হয় এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অনুমোদন দেয়, তাহলে এই ওষুধ ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সাধারণ মানুষের জন্য সুলভ হতে পারে। এই চিকিৎসাপদ্ধতি চালু হলে তা দাঁতের চিকিৎসায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে। এখন পর্যন্ত দাঁত হারালে মানুষকে ভরসা রাখতে হতো কৃত্রিম দাঁত (ডেঞ্চার), দাঁতের ইমপ্লান্ট বা ব্রিজ অথবা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদি সার্জারিতে। কিন্তু এই নতুন ওষুধের মাধ্যমে নিজে থেকে মাড়িতে দাঁত গজানো সম্ভব হবে; যা একেবারে প্রাকৃতিক, কম ঝুঁকিপূর্ণ, সাশ্রয়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
জন্মগতভাবে দাঁত না থাকা শিশুদের জন্য যেমন এটি এক নতুন আশার আলো, তেমনি দুর্ঘটনায় দাঁত হারানো বা বার্ধক্যজনিত কারণে দাঁতের ঘাটতিতে ভোগা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও এটি হবে এক যুগান্তকারী চিকিৎসা। গবেষকদের মতে, এই চিকিৎসার ফলে ভবিষ্যতে মানুষের আবার দাঁত উঠবে। সেটা প্রয়োজনে এবং যেকোনো বয়সেই। সেটাও কোনো অস্ত্রোপচার ছাড়াই, শুধু একটি ওষুধ প্রয়োগেই।
ছবি: পেকজেলসডটকম