কোরবানির ঈদ এলেই বাঙালি ঘরে ঘরে মাংসের উৎসব চলে। কিন্তু অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়া, হজমের সমস্যা, কোলেস্টেরলসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি হয়। এই প্রসঙ্গে পরামর্শ দিয়েছেন মাল্টি জিম প্রিমিয়াম ও আর জিম মোহাম্মদপুরের ফিটনেস ট্রেইনার নাহিয়ান রানা।
যারা নিয়মিত ওয়ার্কআউট করেন, বিশেষ করে যারা ওয়েট ট্রেনিং করেন বা নিয়মিত যেকোন ধরনের শরীরচর্চা, তাঁদের জন্য ঈদের সময় অতিরিক্ত মাংস খাওয়াটা সমস্যা তৈরি করতে পারে। কারণ এতে ওজন হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।কীভাবে মাংস খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে?নাহিয়ান রানা বলেন, 'প্রথমত আমাদের এখানকার এখানে খাদ্যাভাস অনুযায়ী প্রচুর তেল আর অনেক বেশি মসলা দিয়ে রান্না করা মাংস ভাত কিংবা পোলাও দিয়ে খেতে ভালোবাসে সবাই।
এই রন্ধন পদ্ধতিতে থেকে বের হয়ে আসতে হবে। চেষ্টা করতে হবে ফ্যাট ছাড়া রেড মিট খাওয়ার। বিকল্প হিসেবে তিনি এই পদ্ধতিতে রান্না করেত বলেন-
মাংস সেদ্ধ বা গ্রিল করা
কিমা বানিয়ে রান্না করা
হালকা তেলে তৈরি করা
চর্বি ছাড়া মাংস বেছে নেওয়া
সঙ্গে অবশ্যই সালাদ, দই ও কাঁচা আদা রাখার পরামর্শ দেন তিনি। কারণ হিসেবে জানান, মেটাবলিজম ঠিক রাখতে হলে দই ও সালাদ খাওয়া জরুরি। কাঁচা আদাও রাখতে হবে। এগুলো হজমে সাহায্য করে, বাড়তি ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে”।তিনি আরও বলেন, যাদের ওজন অপেক্ষাকৃত বেশি তারাও লাল মাংস খেতে পারেন, তবে সপ্তাহে দুই-একবারের বেশি না। যদি খুব বেশি পরিমাণে খান, তবে ক্যালরি বাড়বেই।
ঈদের ছুটিতে জিম বন্ধ থাকে বা অনেকেই জিমে যান না বা ছুটিতে থাকেন। তাদের জন্য নাহিয়ান রানা বলেন, বাসায় থেকেই স্কোয়াট, প্ল্যাঙ্ক, পুশ-আপ, এমনকি রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড দিয়ে এক্সারসাইজ করা যায়। দুই-তিন মাস পর পর সপ্তাহ খানেকের বিরতি মাসেল রিকাভারি ও এনার্জি রিগেইনে সহায়তা করে, যা খুবই বিজ্ঞানসম্মত। ৫-৭ দিন রেস্ট নিলে কোন সমস্যা নেই। এটা এক ধরনের রিকভারি ফেজ।
ভাতের সঙ্গে মাংস খেলে ওজন বাড়ে। এমনিতেই গরুর মাংসে চর্বি থাকে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ভাত খাওয়া সমস্যা নয় যদি তা পরিমিত হয়। কিন্তু গরুর চর্বি ও সয়াবিন তেল মিশে গেলে তখন সমস্যা হয়। ডাবল ক্যালরি হয়ে যায়। তাই চেষ্টা করুন চর্বি ছাড়া মাংস খেতে।শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে শসা, আদা ও সালাদ অত্যন্ত কার্যকর। কোরবানির সময় রান্না মাংসের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে এগুলো গ্রহণ করুন। ওজন না কমলেও বাড়বেনা এটা নিশ্চিত। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কথা উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, যখন হাই ক্যালরি ও হাই ফাইবারযুক্ত গরুর মাংস খাওয়া হয়, তখন হজমের জন্য শরীরকে অনেক এনার্জি ব্যয় করতে হয়। তাই একসঙ্গে সব খেয়ে ফেলা উচিত না। বরং মাংসের সঙ্গে পর্যাপ্ত শাকসবজি রাখলে হজম সহজ হয়।
খাসি ও গরু দুইটির মধ্যে কোনটি উপকারী?
ছোট খাসির মাংসে গরুর তুলনায় কম ফ্যাট থাকে। তাই যারা কম ক্যালোরি চান, তারা এমন খাসির মাংস বেছে নিতে পারেন। খাসির মাংসে সরল ধরনের মাসল ফাইবার থাকে। এটা শরীরে কম ফ্যাট দেয়।
কোরবানির ঈদের আনন্দ উপভোগ করতেই হবে, কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মাথায় রেখে। পরিমিত খাওয়া, ফ্যাট বর্জন এবং হালকা এক্সারসাইজ এই তিনে মিলে ঈদের উৎসব হবে ফিট ও হেলদি!