রসায়নের ভাষায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হলো এমন কিছু উপাদান যা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। মানুষের দেহের কোষ গুলোয় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম রাসায়নিক বিক্রিয়া চলছে। এসব বিক্রিয়ার কারণে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরি হয় ও দেহে জমা হতে থাকে। সামান্য পরিমাণ এসব পদার্থ হয়তোবা তেমন ক্ষতিকর না-ও হতে পারে। তবে যখন বয়স বাড়ে এবং বেশি পরিমাণ ফ্রি র্যাডিক্যাল জমা হয় দেহে, তখন সেগুলো দেহ কোষের ধ্বংস বা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পর্যাপ্ত থাকলে সেগুলো এসব ক্ষতিকর পদার্থ থেকে কোষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। মানুষের দেহের অভ্যন্তরেও ফ্রি র্যাডিক্যাল নিষ্ক্রিয় করার মতো বিলিরুবিন ও গ্লুটাথিন থাকে। আবার বিটা ক্যারোটিন ‘সি’ ও ভিটামিন ‘ই’ সমৃদ্ধ খাদ্য থেকেও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেই সহজলভ্য যে ৬টি পানীয় থেকে আমরা সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেতে পারি
চা পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয়। বিভিন্ন চায়ের প্রতিযোগিতায় স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে গ্রিন টির আবেদন আলাদা। এই চায়ে পলিফেনলস ও ফ্ল্যাভোনেয়েড নামের দুটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যা চা তৈরির পরও অক্ষুণ্ন থাকে। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্ত করে। রক্তে চিনি কমায়, স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে রাখে ও ক্যানসার বিরোধী শক্তি হিসেবে কাজ করে। তবে গ্রিন টি ঠান্ডা অথবা গরম যে কোনো তাপমাত্রাতেই আপনার খেতে ভালো লাগুক, একটুকরো লেবু দিতে ভুলবেন না যেন। লেবুর ভিটামিন সি, গ্রিন টির গুণাগুণকে আরও সমৃদ্ধ করে।
শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পলিফেনলস আছে টকটকে লাল রঙের এই ফলে। আঙুরের জুস ও গ্রিন টিয়ের চেয়েও বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে বেদানার জুসে। হৃদ্যন্ত্র, কিডনি ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেদানার জুড়ি মেলা ভার। গবেষণা বলছে প্রতিদিন এক কাপ করে বেদানার রস, টানা তিন মাস খেলে হার্টের পেশিতে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। তবে পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে এই জুসে কোনো বাড়তি চিনি যোগ না করাই শ্রেয়।
আঙুরের জুসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এর সঙ্গে আছে পর্যাপ্ত অ্যান্টিইনফামিটরি উপাদানও। যা শরীরকে ভেতর থেকে শীতল রাখে। আঙুরের বীজ ও খোসায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্য রোধে কাজ করে। শুধু তাই নয়, এ ফলও হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালিগুলোকে সতেজ রাখে। আঙুর থেকে তৈরি রেড ওয়াইন একই কারণে বিশ্ব জুড়ে সমাদৃত। সবাই যেহেতু অ্যালকোহল পছন্দ করেন না, তাদের জন্য বিকল্প হলো সতেজ আঙুরের জুস।
চকলেট প্রেমীদের জন্য আনন্দের খবর এই যে কোকোয়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। যত বেশি অনুপাতের কোকোয়া আপনি গ্রহণ করছেন, শরীর তত বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাচ্ছে। চকলেটে উপস্থিত ফ্ল্যাভানয়েড কোষগুলোর বয়স বৃদ্ধিতে বাধা দেয় ও রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে।
প্রতিদিনের ডায়েট সবচেয়ে বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সরবরাহ করে থাকে এই জনপ্রিয় পানীয়টি। কফি ছাড়া যাদের দিনের শুরু হয় না, তাদের জন্য এটি সুখবর বটে। দিন শুরু করা এই পানীয়টিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকে। পাশাপাশি কোষের বয়স কমাতে ও চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তবে এ ক্ষেত্রে চিনি মেশানো কফির চেয়ে অ্যামেরিকানো ও এক্সপ্রেসো ধরনের কফি বেশি উপকারী হবে।
কমলার রস অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েড এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের একটি চমৎকার উৎস। কমলার রসে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হেস্পেরিডিনও রয়েছে। এই উপাদানের রয়েছে প্রদাহ-বিরোধী এবং ক্যানসার বিরোধী বৈশিষ্ট্য। বেশির ভাগ হেস্পেরিডিন কমলার খোসা এবং ঝিল্লিতে পাওয়া যায়। যখন কমলার রস তৈরি করতে চাপ দেওয়া হয়, তখন খোসা ও ঝিল্লি থেকে হেস্পেরিডিন বের হয়।
সূত্র: হেলথলাইন
ছবি: পেকজেলসডটকম