শীতকাল ঘনিয়ে এলেই কি আপনি ডিপ্রেশনে চলে যান
শেয়ার করুন
ফলো করুন

সারা বছর গরম আবহাওয়া আর বৃষ্টির আধিপত্য শেষে এখন ঘনিয়ে আসছে শীতকাল। এখনো ঠান্ডা না পড়লেও চলে এসেছে নভেম্বর মাস। এ সময়টা কেমন যেন এক অস্বস্তির অনুভূতি দেয় আমাদের অনেককেই। ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসা, দিনের আলোর স্বল্পতা, শুষ্ক আবহাওয়া আর প্রকৃতির ল্যান্ডস্কেপের পরিবর্তন অনেকেরই শরীর ও মনে ফেলে বিরূপ প্রভাব। হতে পারে আপনি এ সময়টায় অজানা এক বিষণ্নতায় ভোগেন।

শুষ্ক আবহাওয়া আর প্রকৃতির ল্যান্ডস্কেপের পরিবর্তন অনেকেরই শরীর ও মনে ফেলে বিরূপ প্রভাব
শুষ্ক আবহাওয়া আর প্রকৃতির ল্যান্ডস্কেপের পরিবর্তন অনেকেরই শরীর ও মনে ফেলে বিরূপ প্রভাব

কোনো কাজেই বেশি সময় মনঃসংযোগ করা সম্ভব হয় না। নিজের প্রতি উদাসীনতা লক্ষ করা যায় আপনার দিনযাপনে। জেনে নিন, আপনি একা নন। শীতকালীন এই মন খারাপকে ইংরেজিতে বলা হয় উইন্টার ডিপ্রেশন কিংবা উইন্টার ব্লুজ। শীতের আগমনধ্বনি পেলেই তৈরি হওয়া এই মানসিক অবসাদকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার।

বিজ্ঞাপন

কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা না থাকলেও বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা সবাই সচেতন। এ ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, এই শীতকালীন বিষণ্নতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। এই রোগের উৎপত্তি হয়েছিল শীতপ্রধান দেশগুলোতে।

শীতকালীন বিষণ্নতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়
শীতকালীন বিষণ্নতায় ভোগা রোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়

সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত থাকা, সেই সঙ্গে কখনোবা তুষারপাত কখনো আবার সারা দিনের ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, সব মিলিয়ে দীর্ঘ শীতকালীন এ সময়ে অবসাদে ভোগেন অনেকেই। তবে, এটা নিদির্ষ্ট কোনো ভৌগোলিক সীমারেখায় সীমাবদ্ধ, তা ভেবে একে অবহেলা করার কোনো অবকাশ নেই।

এই রোগের প্রধান উপসর্গ হচ্ছে সারাক্ষণ ক্লান্তিতে ভোগা, ঘন ঘন মুড সুইং, সারাক্ষণ চোখে ঘুম ঘুম লেগে থাকা, সবকিছু থেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রাখা, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, দ্রুত ওজন বৃদ্ধি এবং যাবতীয় কাজ নিয়ে হতাশায় ভোগাসহ ঠান্ডাজনিত অন্যান্য রোগে ভোগা।

বিজ্ঞাপন

বলা হয়ে থাকে, এই রোগে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের এই সিজনাল অ্যাফেক্টটিভ ডিজঅর্ডার খুবই সাধারণ ব্যাপার। অনেক সময় ভিটামিন ডির ঘাটতি হলেও বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দেয়।মূলত স্যাঁতসেঁতে, সূর্যের আলো কম প্রবেশ করে, ঠান্ডার আধিক্য বেশি—এমন পরিবেশে যাদের বসবাস, তাদের এই রোগে বেশি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা শীতই হচ্ছে এই রোগের আসল মৌসুম।

এই রোগে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন
এই রোগে নারীরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন

এই রোগ নিয়ে বেশি আতঙ্কিত বোধ করার কিছু নেই। ঋতুর আবর্তনে এর উপসর্গ কমতে শুরু করে। এ মৌসুমের শুরু থেকেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শীতকালীন এই অবসাদ। এ সময়টা নিজেকে গুটিয়ে না রেখে কাছের মানুষ, বন্ধুদের সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটান। সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যম থেকে নিজেকে কিছুটা ছুটি দিয়ে চলে যান প্রিয় কোনো মানুষের কাছে। শীতের এ সময় নানান উৎসবের আয়োজন কোথাও না কোথাও লেগেই থাকে। সময় মিলিয়ে চলে যান সেখানে। নিজেকে সচল ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় কমই হয়। সেই সঙ্গে নিজের প্রতি আরও একটু যত্ন নিতে চলতে পারে নিজের মতো করে নিয়মিত কিছু ব্যায়াম। সকালটা শুরু হতে পারে গৃহকোণের পছন্দের কোনো জায়গায় একটু হেঁটে বেড়িয়ে। প্রকৃতি এ সময়টা একটু ধূসর হয়ে পড়ে। এ জন্য ঘরের ভেতরটা চাইলেই একটু রঙিন করে রাখতে পারেন এ সময়। এতে মন ও শরীর—দুটোই চাঙা হয়ে উঠবে।

এ সময় সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতিও একটু বেশি নজরদারির প্রয়োজন এমন সময়ে। তবে পরিস্থিতি ভেদে কারও কারও ডিপ্রেশন অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন।

ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন
ডাক্তারের পরামর্শ মেনেই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন

বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। শীতের স্বল্পকালীন এ সময়টা সবার কাছেই উপভোগ্য হবে এমন ধারণা পোষণ করে অন্যকে মানসিক যাতনায় ফেলে দেওয়া বিশ্বায়নের এ সময়ে সত্যি অমানবিকতা। আপনার অজান্তেই হয়তো এমন কেউ আছেন, যাঁকে এ সময়টাতে কোনো কিছুতেই পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করে বরং তাঁর প্রতি যত্নশীল হোন; তাহলেই অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনা থেকেই মুক্ত থাকবে আপনার চারপাশ।

তথ্যসূত্র: ভেরি ওয়েল মাইন্ড

ছবি: পেকজেলস ডট কম

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ১৮
বিজ্ঞাপন