বিদেশি আপেল নয়, পুষ্টিগুণে দেশি পেয়ারাই বেশি ভালো
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আমাদের সমাজে অসুস্থ হলেই বিদেশে ফলের কদর বেড়ে যায়। কোনো অসুস্থ মানুষকে দেখতে গেলে আমরা আপেল, আঙুর, মাল্টা নিয়ে যাই। আমরা কখনো ভাবি না, কী কারণে তিনি অসুস্থ আর কোন ফল তাঁর জন্য এ সময় বেশি উপকারী। আমার রোগী দেখাতে পেয়ারা নিতে হীনম্মন্যতায় ভুগি। কারণ, আমাদের মনে একটি প্রশ্ন থাকেই যায়, কী ভাববে সস্তা ফল নিয়ে রোগী দেখতে গেলে; অথচ পুষ্টিগুণে আপেলের চেয়ে শ্রেয় হলো পেয়ার।

পেয়ারা আমাদের দেশি ফল, কোনো রাসায়নিক প্রভাব নেই; তাজা পাওয়া যায়। দামেও সাশ্রয়ী।

আপেল আর পেয়ারার মধ্যে ভিটামিন ও মিনারেলের আনুপাতিক তুলনা নিচে দেওয়া হলো। এ তথ্য উভয় ফলের প্রতি ১০০ গ্রামে আনুপাতিক হিসাব; যা ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এবং অন্যান্য নির্ভরযোগ্য পুষ্টি ডেটাবেজের ভিত্তিতে সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মানুষের জন্য কোনটি বেশি উপকারী তা বিশ্লেষণ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

পুষ্টিগুণ

Sk. Saifur Rahman

• ভিটামিন সি: পেয়ারা আপেলের তুলনায় অনেক বেশি ভিটামিন সি ধারণ করে। ১০০ গ্রাম পেয়ারায় ২২৮.৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা দৈনিক চাহিদার ২৫৪ শতাংশ পূরণ করে, যেখানে আপেলে থাকে মাত্র ৪.৬ মি.গ্রা. (৫ শতাংশ)। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, ত্বকের স্বাস্থ্য এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
• অন্যান্য ভিটামিন: পেয়ারায় ফোলেট এবং ভিটামিন এ বেশি থাকে, যা গর্ভবতী নারীদের জন্য এবং দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী। আপেলে এই ভিটামিনগুলোর পরিমাণ কম।
• মিনারেল: পেয়ারায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আপেলের তুলনায় বেশি। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃৎপিণ্ডের সঠিকমাত্রায় রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে।
• আঁশ: পেয়ারায় আঁশের পরিমাণ (৫.৪ গ্রাম) আপেলের (২.৪ গ্রাম) তুলনায় বেশি, যা হজমশক্তি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মানুষের জন্য কোনটি ভালো?

আমাদের দেশি ফল পেয়ারা বাড়িতেই ফলে; আবার দেশে বাণিজ্যিক ফলনের কারণে সহজেই পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ছাদবাগানের কারণে পেয়ারা এখন অনেক বাড়ির ছাদে হয়। এতে কোনো ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ করতে হয় না। দেশের সর্ববৃহৎ পেয়ারা বাগান ঝালকাঠির ভিমরুলিতে। বিখ্যাত এই পেয়ারা বাগানে কোন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার হয় না। এ ছাড়া বরিশাল ও বরগুনা জেলার পেয়ারা দেশের বিশাল চাহিদা পূরণ করে।

আমাদের আবহাওয়ায় আপেল নয় পেয়ারাই শ্রেয়
আমাদের আবহাওয়ায় আপেল নয় পেয়ারাই শ্রেয়

আপেল বিদেশি ফল, গাছ থেকে পাড়ার কত দিন পরে আপনার হাতে পৌঁছাবে, সেটি জানা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে সময়টি বছরও হতে পারে, এতে কৃত্রিম রাসায়নিক দেওয়া থাকে, এর সঙ্গে ওপরে মোমের প্রলেপ থাকে, যে কারণে আপেল দীর্ঘদিন সতেজ দেখায়। আর পুষ্টিগুণে আপেল ভালো হলেও পেয়ারার চেয়ে অনেক কম।  
পেয়ারায় ভিটামিন সি, ফোলেট, পটাশিয়াম ও আঁশের পরিমাণ আপেলের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভিটামিন সি এবং ফোলেটের ঘাটতি সাধারণ, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। পেয়ারা এই ঘাটতি পূরণে বেশি কার্যকর।

সহজলভ্যতা ও দাম: বাংলাদেশে পেয়ারা স্থানীয়ভাবে প্রচুর উৎপন্ন হয় এবং সারা বছর এটি সহজলভ্য। এটি আপেলের তুলনায় সাশ্রয়ী এবং স্থানীয় বাজারে সহজে পাওয়া যায়। আপেল আমদানি করা হয়, যা এর দাম বাড়ায়।

আবহাওয়ার উপযোগিতা: বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় পেয়ারার চাষ সহজ এবং ফলটি দ্রুত পাকে। আপেলের জন্য শীতল আবহাওয়া প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

পুষ্টিগুণ, সহজলভ্যতা এবং বাংলাদেশের আবহাওয়া ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পেয়ারা আপেলের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের জন্য বেশি উপকারী। তবে আপেলও স্বাস্থ্যকর এবং এর মাঝারি শর্করা এবং আঁশ ডায়েটে বৈচিত্র্য আনতে পারে। সুতরাং পেয়ারাকে প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে, তবে উভয়ই সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হতে পারে। তাই এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়—পুষ্টি বিবেচনায় পেয়ারা খাবেন, নাকি বিদেশি বলে আপেলই খাবেন।

লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

ছবি: পেকেজলসডটকম

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন