মন খারাপ থাকলে কি মানুষ মোটা হয়
শেয়ার করুন
ফলো করুন

খাবারের ওপর প্রভাব

মন খারাপ হলে অস্থিরতা অনুভব হয়। অনেকে নিজেকে ভারী অনুভব করে। এসব থেকে স্বস্তি পেতে অনেকেই নিজের পছন্দের খাবার, কখনো জাংক ফুডের দ্বারস্থ হয়। কেননা খাবার অনেক সময় মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দিতে পারে। বিশেষত চিনি বা চর্বি-সমৃদ্ধ খাবার এই আরাম এনে দেয়।

এই ধরনের খাওয়া সাময়িকভাবে আরাম দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি আমাদের ওজন ও খাওয়ার অভ্যাসে প্রভাব ফেলে।

করণীয়:

• খাওয়ার প্যাটার্ন লক্ষ্য করুন। কখন আপনি বেশি খাচ্ছেন। কোন অনুভূতিগুলো তখন কাজ করছে ইত্যাদি।

• স্বস্তির বিকল্প উপায় খুঁজুন। যেমন গান শোনা, সিনেমা দেখা, গরম পানিতে গোসল, ছবি আঁকা বা শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নেওয়া।

• খাওয়ায় মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে খাবার খান। এতে মস্তিষ্ক ক্ষুধা ও তৃপ্তির সংকেতগুলো সঠিক ভাবে গ্রহণ করতে পারে।

• মন খারাপের জন্য নিজেকে দায়ী করবেন না।

ক্লান্তি ও উদ্যমহীনতা

মন খারাপ বা বিষণ্নতা শরীর থেকে শক্তি শুষে নেয়। অনেকে সাধারণভাবে হাঁটাহাঁটি এমনকি বিছানা থেকেও উঠতে পারে না। এর ফলে শরীরচর্চা কমে যায়, যা শুধু ওজন নয়, আত্মসংযোগের অভাবও তৈরি করে।

করণীয়:

• শরীরচর্চার ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করা। যেমন বাড়ির সামনের গলি পর্যন্ত হাঁটা, বসে বসে স্ট্রেচিং, কিংবা গান শুনে নাচা।

• তবে নিজেকে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে শরীরচর্চা মানে নিজের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা।

• শরীরচর্চার ক্ষেত্রে সময় না গুনে নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিন।

• ক্লান্ত লাগলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।

ঘুমের  ওপর প্রভাব

মন খারাপ বা বিষণ্নতায় কেউ অতিরিক্ত ঘুমান, কেউ বা একদমই ঘুমাতে পারেন না। ঘুমের এই অনিয়ম ক্ষুধা ও তৃপ্তির হরমোনকে প্রভাবিত করে। ফলে খাওয়ার স্বাভাবিক নিয়মে ব্যাঘাত ঘটে। এতেও ওজন বাড়তে পারে।

করণীয়:

• মন খারাপের সময়ও ঘুমের রুটিন ঠিক রাখতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগতে হবে।

• ঘরের পরিবেশে পরিবর্তন আনুন। যেমন হালকা আলো, পছন্দের গান বা প্রিয় বই সঙ্গে রাখুন। এতে সহজে ঘুম আসবে।

• ঘুমজনিত সমস্যায় অতিরিক্ত মাত্রায় চলে গেলে চিকিৎসকের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।

• মনে রাখতে হবে। ঘুম একটি জটিল প্রক্রিয়া। সুতরাং ধৈর্য ধরুন।

বিজ্ঞাপন

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

মন খারাপ বা বিষণ্নতায় অনেকে ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এতে ক্ষুধা, বিপাকক্রিয়া বা ঘুমের নিয়মে পরিবর্তন ঘটতে পারে। ফলে সে অনুযায়ী খাওয়ার অভ্যাস পাল্টাতে হবে।

করণীয়:

• ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ওষুধ পরিবর্তন বা ডোজ কমানোর মতো বিকল্প থাকতে পারে।

• খাবারে ভারসাম্য রাখুন।

• নিজের শরীরকে প্রাধান্য দিন।

দৈনন্দিন রুটিনে ব্যাঘাত

মন খারাপ অনেক সময় দৈনন্দিন কাজের রুটিন ভেঙে দেয়। অফিস, রান্না, বাজার, খাবার সময়মতো খাওয়া, কিংবা চলাফেরার মতো অভ্যাসগুলো হঠাৎ অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

করণীয়:

• নিজেকে গুছিয়ে রাখতে ছোট ছোট অভ্যাস তৈরি করুন। যেমন প্রতিদিন এক কাপ চা, বা দুপুরে পাঁচ মিনিট হাঁটা ইত্যাদি।

• সবজি বা ফলমূল বেশি খান।

• ফোন রিমাইন্ডার বা চেকলিস্ট ব্যবহার করুন।

• রুটিন পুরোপুরি মানতে না পারলে মনের ওপর অধিক চাপ দিয়া যাবে না। সবদিন একরকম যায় না, সেটাই স্বাভাবিক।

একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতা

অতিরিক্ত বিষণ্নতা নিঃসঙ্গতা তৈরি করে। এতে খাওয়া, ঘুম ও দৈনন্দিন রুটিনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।

করণীয়:

• যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বন্ধুদের সঙ্গে।

• কথা বলতে ভালো লাগে এমন মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিন।

• আনন্দে থাকুন।

• প্রয়োজনে থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।

মনে রাখতে হবে মন খারাপ বা বিষণ্নতার সময় ওজন বৃদ্ধি একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এটি শরীরের একটি আত্ম-রক্ষার উপায়। ধীরে ধীরে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন সহজ হাঁটা, সুষম খাবার বা দিনের একটি ছোট রুটিন। মনে রাখবেন প্রতিটি পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। এত কিছুর পরও যদি সবকিছু খুব কঠিন মনে হয়, একজন থেরাপিস্টের সহায়তা নিতে হবে।

সূত্র : হেলথ লাইন

ছবি: পেকজেলসডটকম

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন