আধুনিক সমাজে মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা এখন অনেক তুঙ্গে; বিষয়টা এমন একটি রূপক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে মানুষ সচেতন হয়ে অনেক কিছু খান না, নতুন কিছু খান। দেশি বিষয়গুলো বাদ দিয়ে বিদেশি পণ্যের ওপর ঝোঁক বেশি। যদিও হাসপাতালে মানুষের ভিড় মোটেও কমেনি। সারা দিন স্বাস্থ্যবিষয়ক রিলগুলো দেখে খাদ্য নির্ধারণ করার মতো এমন ‘সচেতন’ মানুষের কমতি নেই। অনেকেই জানেন সুপারফুড সম্পর্কে। তেমনি একটা সুপারফুড চিয়া সিড! অথচ আমাদের দেশীয় একটি সুপারফুড আছে, যা দিয়ে তাক লাগানো উপকার পাওয়া সম্ভব। কিন্তু দেশি হওয়ায় প্রশ্ন করেন কোথায় পাব? হ্যাঁ সুপারশপগুলোতে এটা খুব একটা পাওয়া যায় না, ভালো কোনো প্যাকেজিং নাই, ব্র্যান্ড ভ্যালু নাই। এমনই একটা সুপারফুড তিসি বীজ বা ফ্ল্যাক্সসিড।চিয়া সিড ভালো কিছু; কিন্তু তিসি অনেক ক্ষেত্রে চিয়ার চেয়ে অনেক বেশি ভালো। দামে কম, দেশীয়, সেই সঙ্গে খাওয়া সহজ। কিন্তু কদর কম।
চিয়া সিড এবং তিসি বীজ এই দুটি বীজই সুপারফুড হিসেবে পরিচিত এবং দুটোই অত্যন্ত পুষ্টিকর। আপনি আপনার প্রয়োজনে কখন চিয়া, কখন তিসি খাবেন, এটা জানা থাকলে আপনার প্রয়োজনটা সহজ হয়ে উঠবে। কোনটা ‘ভালো’ তা নির্ভর করে আপনি কী উদ্দেশ্যে খাচ্ছেন তার একটি তুলনামূলক চিত্র যদি চিন্তা করি তাহলে মোটের ওপর—ওজন কমানো, হজম, ওমেগা–৩, হরমোন ব্যালান্স ইত্যাদি নিয়েই বেশি ভেবে থাকি।
চিয়া সিড
• পানি শোষণ করে জেল তৈরি করে, যা হজমে সাহায্য করে ও পেট ভরে রাখে।
• ওজন কমাতে সাহায্য করে।
• হাড়ের জন্য উপকারী (উচ্চ ক্যালসিয়াম)।
• সহজে হজম হয়, পিষে না খেলেও চলে।
তিসি বীজ
• হরমোন ব্যালান্সে বিশেষ উপকারী, বিশেষ করে নারীদের জন্য (লিগনান থাকে)।
• প্রোস্টেট ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
• কোষ্ঠকাঠিন্যে কার্যকর (মল নরম রাখে)।
• তিসি বীজ পিষে খেতে হয়, না হলে পুষ্টি ঠিকমতো শোষিত হয় না।
প্রয়োজনে বেছে নিন
• ওজন কমানো চিয়া সিড
• হরমোন বা মেয়েদের পিরিয়ড সমস্যা তিসি বীজ (পিষে খাওয়া ভালো)
• হজম সমস্যা/কোষ্ঠকাঠিন্য দুটোই উপকারী, তবে তিসি বীজ বেশি
• হৃদ্রোগ/কোলেস্টেরল তিসি বীজ কিছুটা বেশি কার্যকর
• হাড় মজবুত করতে চিয়া সিড (ক্যালসিয়াম বেশি)
• চিয়া সিড: শুধু পানিতে ভিজিয়ে বা জেলে পরিণত করে খাওয়া যায়। দই, স্মুদি, পানি বা ওটসে মেশানো সহজ।
• তিসি বীজ: অবশ্যই পিষে খেতে হবে (তাহলে তেল ও উপকারী উপাদান শরীরে শোষিত হবে)। রান্নায়, রুটিতে, লাড্ডুতে মেশানো যায়।
‘চিয়া সিড ও তিসি বীজ— দুটোই ভালো, কিন্তু উদ্দেশ্য অনুযায়ী একেকটি ভালো কাজ করে।’
যদি আপনি হরমোনের সমস্যায় ভোগেন তাহলে তিসি হতে পারে একটি সঠিক পথ্য, কারণ তিসিতে থাকা লিগনান হলো একটি প্রাকৃতিক ফাইটোইস্ট্রোজেন, অর্থাৎ উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রাপ্ত এমন একটি যৌগ, যা মানবদেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মতো আচরণ করে। এটি প্রধানত তিসি বীজে পাওয়া যায়। যাঁরা পিওসিডি সমস্যায় ভুগছেন তাঁরা নিয়মিত তিসি বীজ খেয়ে উপকার পাবেন। শরীর ব্যথাজনিত সমস্যা থাকলেও তিসি ভালো উপকার দেবে।
তিসি যেভাবে খাবেন: ১০০ গ্রাম পরিমাণে তিসি হালকা টেলে নিন, গরম তিসি ঠান্ডা হলে গুঁড়া করে একটি কাচের পাত্র রেখে দেবেন। সেখান থেকে প্রতিদিন ২৮ গ্রাম পরিমাণে (দুই টেবিল চামচ) ভাতের সঙ্গে, কোনো স্মুদির সঙ্গে অথবা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাবেন। মনে রাখা প্রয়োজন, তিসি পুরোটাই তেল, যার কারণে বেশি করে গুঁড়া করবেন না, এতে তিসি তেল গলে যাবে।
তাই শুধু বিদেশি খাবারের আস্থা না রেখে দেশিয় সুপারফুড তিসিতে আস্থা রাখতে পারেন। যা আপনার পথ্যের উপকারিতা আপনার স্বাস্থ্য সচেতনতার ধারণা পাল্টে দেবে।
লেখক: খাদ্য ও পথ্য বিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: পেকেজেলসডটকম