
'লাভ হরমোন' শব্দটি মূলত বহুল আলোচিত হরমোন অক্সিটোসিনের জনপ্রিয় নাম। এটি একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে তৈরি হয় এবং পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। সামাজিক বন্ধন তৈরি, যৌন প্রজনন এবং বিশ্বাস, সহমর্মিতা ও প্রশান্তির অনুভূতির সঙ্গে এর গভীর সম্পর্ক আছে বলে এতদিন একে ফিল গুড বা হ্যাপি হরমোন বলা হতো। তবে এখন গবেষকেরা বিভিন্ন স্টাডির ফলফল থেকে জানাচ্ছেন, লাভ হরমোন অক্সিটোসিনের কাজের ক্ষেত্র আসলে আরও ব্যাপক আমাদের শরীরে।

অক্সিটোসিন কী কাজ করে
অক্সিটোসিনকে শুধু ভালোবাসার হরমোন বললে বিষয়টি পুরো বোঝা যায় না। এর কাজ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে। সন্তান, বন্ধু, আত্মীয় বা সঙ্গীর কাছাকাছি এলে স্পর্শ, আলিঙ্গন ও আদরের সময় আর ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলে এই হরমোন নিঃসৃত হয়। এটি বিশ্বাস, আবেগীয় সংযোগ, নিরাপত্তা ও প্রশান্তি বাড়ায়।

মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে এর আছে সরাসরি যোগাযোগ। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা, স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করা, ভালো স্মৃতি জোরদার করতে পারা অক্সিটোসিনের বড় গুণ। তবে এ ছাড়াও অন্যান্য ডায়মেনশনে কাজ করতে পারে অক্সিটোসিন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে গবেষকরা অটিজম, উদ্বেগ ও বিষণ্নতাসহ নানা মানসিক সমস্যায় অক্সিটোসিনের চিকিৎসাগত ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছেন। তবে মস্তিষ্কে এর সম্পূর্ণ ভূমিকা এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। চলুন আমরা দেখে নিই কোন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও শারীরবৃত্তীয় তন্ত্রে সুস্বাস্থ্যের জোয়ার আনে এই হরমোনটি।
জরায়ু: সন্তান জন্ম ও প্রসবের পর সংকোচনে সাহায্য করে অক্সিটোসিন
স্তনগ্রন্থি: বুকের দুধ নিঃসরণে সহায়ক এই হরমোন

ডিম্বাশয় ও অণ্ডকোষ: ডিম্বাণু ও টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে প্রভাব ফেলে লাভ হরমোন
মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র: এখানেও অক্সিটোসিন অনেকগুলো কাজ করে। যেমন:সামাজিক বন্ধন, মাতৃত্ববোধ ও বিশ্বাস বাড়ায়। স্ট্রেস, ব্যথা ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। যৌন অনুভূতি ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে

হৃদযন্ত্র: রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন কমাতে সাহায্য করে অক্সিটোসিন
হজমতন্ত্র: হজম ও ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে এটি
হাড়: এই হরমোন হাড়ের গঠন মজবুত করতে সহায়ক
অগ্ন্যাশয়: রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে অক্সিটোসিনের সঠিক প্রবাহ
ইমিউন সিস্টেম: প্রদাহ কমাতে সহায়ক হতে পারে অক্সিটোসিন
প্রাকৃতিকভাবে অক্সিটোসিন বাড়ানোর উপায়
শারীরিক স্পর্শ
আলিঙ্গন (২০–৩০ সেকেন্ড হলেও উপকারী)
হাত ধরা
শারীরিকভাবে প্রিয় মানুষের কাছে থাকা
ম্যাসাজ বা আরামদায়ক স্পর্শ
প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো

কথা বলার সময় চোখে চোখ রাখা
মনের কথা শেয়ার করা ও মন দিয়ে শোনা
একসঙ্গে মজা করা ও হাসা
বন্ধন তৈরি হয় এমন কাজ
পোষা প্রাণীর সঙ্গে খেলা বা তাদের স্পর্শ

শিশু বা বয়স্কদের যত্ন নেওয়া
মন ও আবেগের যত্ন
প্রতিদিন কৃতজ্ঞতা জার্নাল রাখা বা মনে মনে এই বিষয়ে ভাবা
ভালোবাসা ও সহমর্মিতার চর্চা
গভীর শ্বাস নেওয়া ও নিজেকে শান্ত রাখা
নিজেকে নিরাপদ ভাবা ও ইমোশোনাল সাপোর্ট দেওয়া
অন্যকে সাহায্য করা
স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করা
কারও আন্তরিক প্রশংসা করা
সঙ্গীর সঙ্গে আবেগী ঘনিষ্ঠতা ও শারীরিক নৈকট্য
ভালোবাসার কথা মুখে প্রকাশ করা
মনকে শান্ত করে এমন সঙ্গীত, পডকাস্ট, অডিও বুক ইত্যাদি শোনা
গান গাওয়া

হালকা ব্যায়াম, যেমন যোগব্যায়াম বা হাঁটা
ধ্যান, প্রার্থনা করা
যেসব কারণে অক্সিটোসিন কমে
দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ
একাকীত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
ভয় ও আবেগগত অনিরাপত্তা
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
সুত্র: হেলথলাইন
ছবি: এআই ও পেকজেলস