যেকোনো বয়সের মানুষের সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা দূর করার ক্ষেত্রে তুলসীপাতা দারুণ কার্যকর। শিশুদের দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদের সর্দি–কাশির ক্ষেত্রে আধা চা–চামচ মধুর সঙ্গে তুলসীপাতার রস মিশিয়ে খাওয়ালে কাশি কমে যাবে। বুকে কফ বসে গেলে সকালবেলায় এক গ্লাস পানিতে তুলসীপাতা, আদা ও চা–পাতা ভালো করে ফুটিয়ে তাতে মধু ও লেবু মিশিয়ে পান করলে আরাম পাওয়া যাবে। এ ছাড়া মাথাব্যথা কমাতে তুলসীর চা অনেক কার্যকর। গলাব্যথায় তুলসীপাতা ফুটিয়ে গড়গড়া করলেও আরাম পাওয়া যায়।
মানসিক চাপমুক্ত থাকার ক্ষেত্রেও তুলসীপাতা বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তুলসীর অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি ও অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। উপাদানগুলো শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং নার্ভ শান্ত করে। তুলসী শরীরে কর্টিসলের মাত্রা কম রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত উত্তেজনা ও মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়।
বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে তুলসীপাতায়। এ ছাড়া সিজনাল সর্দি–কাশি ও জ্বরে তুলসীপাতা খুব উপকারী। শীতকালে তুলসীপাতা ও এলাচ দিয়ে ফুটানো পানি নিয়মিত পান করলে খুব সহজে নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার ক্ষতস্থানে তুলসীপাতা বেটে লাগালে তাড়াতড়ি ক্ষত শুকিয়ে যায়।
তুলসীপাতা ওজন বৃদ্ধির সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কারণ, এটি রক্তের সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে খুব সহজে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
জেনে বিস্মিত হবেন যে ক্যানসার প্রতিরোধে তুলসীপাতা উপকারী। তুলসীপাতায় রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান, যা টিউমারের কোষগুলো মেরে ফেলে। তুলসীপাতায় থাকা ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক অ্যাসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করতে খুবই কার্যকর। অগ্ন্যাশয়ে যে টিউমার কোষ দেখা দেয় তা দূর করতে তুলসী উপকারী। ব্রেস্ট ক্যানসার রোধ করতে তুলসীপাতা খুব কার্যকর।
শুধু রোগবালাই দূর করতে নয়, সৌন্দর্যচর্চায় তুলসীপাতা বেশ কার্যকর। ত্বকের যত্নে তুলসীপাতা ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন তুলসী পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। এ ছাড়া ত্বকের কোনো অংশ পুড়ে গেলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগালে জ্বালা কমবে ও পোড়া দাগ চলে যায়।
কেউ কেউ আবার তুলসীপাতাকে যৌবন ধরে রাখার টনিক মনে করেন। তুলসীপাতায় থাকা ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেনশিয়াল অয়েলগুলো চমৎকার অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কাজ করে, যা বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
তুলসীপাতা রক্তের জমাট বাঁধা সমস্যা দূর করে হার্ট অ্যাটাক রোধে সাহায্য করে। হার্টের অন্যান্য সমস্যা সহজে রোধ করতে পারে তুলসীপাতা। তাই বলা যায়, হার্টের রোগীদের জন্য তুলসীপাতা অনেক উপকারী।
তুলসীতে থাকা অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলো চোখের চুলকানি, আঞ্জনি, জল পিচুটি কাটা–জাতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পুষ্টিগুণে ভরপুর তুলসীপাতা, দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ছানি ও গ্লুকোমার মতো চোখের রোগ দূরে রাখতে সাহায্য করে।
রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে প্রতিদিন খাবার গ্রহণের আগে তুলসীপাতা খাওয়ার অভ্যাস করুন। নিয়মিত তুলসীপাতা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতাও বাড়ে। ফলে শরীরে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। এ ছাড়া তুলসীতে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি–ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান শরীরের ভেতর থেকে নানা রকম বিষক্রিয়ার পদার্থ বের করে আনতে সাহায্য করে। ফলে ডিহাইড্রেশন কমে যায় ও কিডনির কার্যকারিতা সচল অবস্থায় থাকে। এর ফলে কিডনির স্টোন রোধ করা যায়।
পেটের সমস্যায় তুলসীপাতা মহৌষধ। পেটব্যথা, অম্বল, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে তুলসীপাতা দারুণ কার্যকর। পেটে আলসারের সমস্যায় তুলসীপাতা ভালো কাজ করে। পেটে ব্যথা হলে ২০ মিলি পানিতে তুলসীপাতা ভালো করে ফুটিয়ে ১০ মিলি কমিয়ে পান করুন। এতে পেটব্যথা ও হাইপার অ্যাসিডিটি খুব সহজে কমে যায়।
ছবি: উইকিপিডিয়া ও পেকজেলসডটকম