শুধু একটি ছোট পরিবর্তন আনলেই রোজকার হাঁটায় হবে ফুল বডি ওয়ার্কআউট
শেয়ার করুন
ফলো করুন

কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হাঁটলে শুধু পা নয়, একসঙ্গে কাজ করে পিঠ, কোমর, পেটের কোর মাংসপেশি ও কাঁধ। শরীরকে বাড়তি ভার বহন করতে হয় বলে হৃৎস্পন্দন বাড়ে, ক্যালরি পোড়ে বেশি, শক্তিশালী হয় হাড় ও পেশি। এককথায় সাধারণ হাঁটা তখন রূপ নেয় একটি ফুল-বডি ওয়ার্কআউটে। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হাঁটার এই পদ্ধতিকে বলা হয় রাকিং (ড়ুচকিং) অর্থাৎ ওজনযুক্ত ব্যাকপ্যাক বা ভেস্ট পরে হাঁটা। সামরিক প্রশিক্ষণ থেকে আসা এই ব্যায়াম এখন বিশ্বজুড়ে একটি জনপ্রিয় ফিটনেস ট্রেন্ড।

রাকিং আসলে কী

রাকিং এখন স্বাস্থ্য, ফিটনেস ও মানসিক শক্তি বাড়ানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি
রাকিং এখন স্বাস্থ্য, ফিটনেস ও মানসিক শক্তি বাড়ানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি

রাকিং মানে হলো পিঠে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন বহন করে হাঁটা। সেনাবাহিনীতে এটি প্রয়োজনের তাগিদে করা হলেও সাধারণ মানুষের জন্য এটি এখন স্বাস্থ্য, ফিটনেস ও মানসিক শক্তি বাড়ানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি। তবে যারা পর্বতারোহী কিংবা দুর্গম জায়গায় ট্র্যাকিং করে থাকেন তাঁরা ভারী ব্যাগ নিয়ে হেঁটে থাকেন। ফিটনেস বিশেষজ্ঞদের মতে, রাকিং হাঁটাকে বদলে দেয় একটি মডারেট-টু-ইনটেন্স ফুল-বডি ওয়ার্কআউটে।

রাকিংয়ের আছে দারুণ সব বৈজ্ঞানিক সুফল

১. ক্যালরি বার্ন বাড়ায়

সাধারণ হাঁটার তুলনায় ওজন নিয়ে হাঁটলে শরীরকে বেশি শক্তি খরচ করতে হয়। ফলে ক্যালরি পোড়ার হার বাড়ে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তবে মনে রাখতে হবে এই বাড়তি ক্যালরি বার্ন খুব বিশাল নয়। ৩০ মিনিট হাঁটায় যেখানে প্রায় ১২০–১৬৮ ক্যালরি পোড়ে, সেখানে রাকিং যোগ করলে মাত্র ১৫–২২ ক্যালরি বেশি পোড়াতে পারে।

২. কোর ও পেশি শক্তিশালী করে

রাকিংয়ের সময় পা, কোমর ও পিঠ পেটের কোর, মাংসপেশি, কাঁধ সবকিছু একসঙ্গে কাজ করে। ধীরে ধীরে এটি শরীরের স্থিতিশীলতা ও সহনশীলতা বাড়ায়।

রাকিং হাঁটাকে বদলে দেয় একটি মডারেট-টু-ইনটেন্স ফুল-বডি ওয়ার্কআউটে
রাকিং হাঁটাকে বদলে দেয় একটি মডারেট-টু-ইনটেন্স ফুল-বডি ওয়ার্কআউটে

৩. হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে

ওজন বহন করা ব্যায়াম হাড়ে স্বাস্থ্যকর চাপ তৈরি করে, যা বোন মিনারেল ডেনসিটি বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি বয়স বাড়ার সঙ্গে অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ।

৪. হার্ট ও ফুসফুসের সক্ষমতা বাড়ায়

রাকিং সাধারণ হাঁটার চেয়ে হৃৎস্পন্দন একটু বেশি বাড়ায়, ফলে এটি একটি মডারেট-ইনটেনসিটি কার্ডিও এক্সারসাইজ হিসেবে কাজ করে।

৫. মানসিক শক্তি ও ফোকাস বাড়ায়

গ্রুপে রাকিং করলে সামাজিক যোগাযোগ তৈরি হয়, স্ট্রেস কমে এবং দীর্ঘ হাঁটার সময় মানসিক দৃঢ়তাও বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, দলবদ্ধভাবে ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে।

বিজ্ঞাপন

রাকিং শুরু করবেন কীভাবে?

শরীরকে মানিয়ে নিতে সময় দিলে পিঠে ব্যথা বা ইনজুরি হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে
শরীরকে মানিয়ে নিতে সময় দিলে পিঠে ব্যথা বা ইনজুরি হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে

শুরু করুন ১০ পাউন্ড বা নিজের ওজনের ১০% দিয়ে

প্রতি কিলোতে ১৫ মিনিট গতিতে হাঁটা ভালো লক্ষ্য

প্রথম দিকে এক দিন পরপর বা সপ্তাহে ২–৩ দিন

ওজন ধীরে ধীরে বাড়ান, হঠাৎ নয়

ব্যাকপ্যাকে ওজন সমানভাবে রাখুন

পিঠ সোজা রেখে হাঁটুন, ঝুঁকে নয়

বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরকে মানিয়ে নিতে সময় দিলে পিঠে ব্যথা বা ইনজুরি হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে।

ওজন নিয়ে হাঁটা: কোনটা নিরাপদ, কোনটা নয়?

সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, ওয়েটেড ভেস্ট বা ব্যাকপ্যাক নিয়া হাঁটা
সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, ওয়েটেড ভেস্ট বা ব্যাকপ্যাক নিয়া হাঁটা

গোড়ালি, হাত বা কবজির ওজন নিয়ে হাঁটবেন না। এতে জয়েন্ট ও টেনডনে চাপ পড়ে। যা ইনজুরির ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো হাঁটার জন্য নয়, বরং স্টেশনারি স্ট্রেন্থ এক্সারসাইজের জন্য ভালো।

সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, ওয়েটেড ভেস্ট বা ব্যাকপ্যাক নিয়া হাঁটা। এতে করে ওজন সমানভাবে শরীরে পড়ে। ভারসাম্য নষ্ট হয় না। জয়েন্টে চাপ কম পড়ে। শরীরের ৫% দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে ১০–১৫% পর্যন্ত নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।

কারা রাকিং করতে পারবেন না?

যাদের পিঠ বা ঘাড়ের সমস্যা, হৃদ্‌রোগ বা জয়েন্টের জটিলতা আছে, তাদের অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত
যাদের পিঠ বা ঘাড়ের সমস্যা, হৃদ্‌রোগ বা জয়েন্টের জটিলতা আছে, তাদের অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত

যাদের পিঠ বা ঘাড়ের সমস্যা, হৃদ্‌রোগ বা জয়েন্টের জটিলতা আছে, তাদের অবশ্যই আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সহজ করে বললে রাকিং কোনো জাদুকরি সমাধান নয়। চাইলে দ্রুত হাঁটা, ঢালু বা পাহাড়ি পথে হাঁটা কিংবা ইন্টারভ্যাল ট্রেনিং করেও একই ফল পাওয়া যায়। তবে যাঁরা হাঁটার নিয়মিত অভ্যাসে নতুন চ্যালেঞ্জ, মানসিক শক্তি আর একটু বাড়তি ইনটেনসিটি যোগ করতে চান, তাঁদের জন্য রাকিং হতে পারে একটি কার্যকর ও উপভোগ্য বিকল্প।

সূত্র: হাউডি হেলথ

ছবি: এআই

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন