বিশ্বজুড়ে নতুন উপদ্রবের নাম মাঙ্কিপক্স
শেয়ার করুন
ফলো করুন

এমপক্স একটা সময় মাঙ্কিপক্স নামেই পরিচিত ছিল। মাঙ্কিপক্স একটি সংক্রামক ভাইরাল রোগ, যা মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীকে সংক্রমিত করতে পারে। আর সেটাই ঘটেছে বর্তমানে। আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কারণে বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মাঙ্কিপক্সকে বিশ্বজুড়ে ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কমিটির বৈঠকের পর এই ঘোষণা আসে।

এমপক্সের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই
এমপক্সের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই
ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

এমপক্স একটি ভাইরাল অসুস্থতা, যা মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট; এটি পক্সভিরিডে গোত্রের একটি প্রজাতি, অর্থোপক্সভাইরাস। ১৯৫৮ সালে বানরদের মধ্যে ‘পক্সের মতো’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিজ্ঞানীরা প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত করেন। বেশির ভাগই মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে দেখা গেছে, যাঁদের প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।

অনেকের ধারণা, যৌন সংক্রমণে এই রোগ ছড়ায়। তবে এই ধারণা ভুল বলা হলেও বেশির ভাগ সমকামী ও উভকামী পুরুষদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। যদিও এই রোগ যৌন সংক্রমিত নয়।

সরাসরি কোনো ওষুধ নেই এই রোগের
সরাসরি কোনো ওষুধ নেই এই রোগের
ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

চিকিৎসকদের মতে, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলে বেড়ে যায় সংক্রমণের আশঙ্কা। শ্বাসনালি, ক্ষতস্থান, নাক, মুখ কিংবা চোখের মাধ্যমে এই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে সুস্থ ব্যক্তির দেহে। বিশেষজ্ঞদের মত, আক্রান্তের ব্যবহার করা পোশাকের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। মাঙ্কিপক্স বা এমপক্সের নতুন স্ট্রেন আরও ভয়ংকর, যার প্রকোপে ঘটছে শিশুমৃত্যু এবং গর্ভপাতের মতো ঘটনা।

এমপক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে খুব ব্যথা হয়; এই ব্যথা জলবসন্তের চেয়েও বেশি হয়। পায়ের সন্ধিস্থল, গলা, বগলের নিচে থাকা লসিকাগ্রন্থি ফুলে যায়, ব্যথা হয়। প্রচণ্ড ব্যথা ও ফুলে যাওয়ার কারণে জ্বর হয়। ত্বকে পানিভর্তি ফুসকুড়ি বা ফোসকা হয় এবং সেখানে চুলকানি ও ব্যথা হয়।

বিজ্ঞাপন

রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রগুলোর (সিডিসি) মতে, ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ২১ দিনের মধ্যে এমপক্সের লক্ষণগুলো শুরু হয়। এমপক্সের ইনকিউবেশন পিরিয়ড ৩ থেকে ১৭ দিন। এ সময়ের মধ্যে কোনো ব্যক্তির লক্ষণ থাকে না এবং ভালো বোধ করতে পারে।

এমপক্সের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। সরাসরি কোনো ওষুধ নেই এই রোগের। ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। তবে পরীক্ষামূলক কিছু ওষুধ আছে। রোগীকে আইসোলেশনে রেখে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হবে। ফুসকুড়ি বা ফোসকার ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যথার ওষুধ দিতে হবে, পুষ্টিকর খাবার ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। জলবসন্তের রোগীর মতো করেই এমপক্সের রোগীর যত্ন নিতে হবে। রোগীর অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে। যেহেতু এমপক্স ছোঁয়াচে, তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে ভাইরাস না ছড়ায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫% সুরক্ষা প্রদান করতে পারে; তবে এ টিকা ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য সম্পূর্ণ কার্যকর থাকে। তারপর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পায়। কোনো ব্যক্তি তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে গুটিবসন্তের টিকা দিয়ে থাকলে তিনি সুরক্ষা পাবেন।

গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫% সুরক্ষা প্রদান করতে পারে
গুটিবসন্তের টিকা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫% সুরক্ষা প্রদান করতে পারে
ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স

গবেষণায় আরও জানা গেছে, মাঙ্কিপক্সের উভয় ক্লেড ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ মিনিটের কম সময়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়; আর ৭০ ডিগ্রিতে এটি নিষ্ক্রিয় হয় পাঁচ মিনিটের কম সময়ে। তাই মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা বা জিনিস গরম পানি এবং নিয়মিত ডিটারজেন্ট দিয়ে পরিষ্কার করা হলে ভাইরাস নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে না। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস নির্দিষ্ট কিছুর ওপরে ১৫ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এ জন্য ভাইরাসের বিস্তার বন্ধ করার জন্য পরিষ্কার করা, জীবাণুমুক্ত করা এবং নিয়মিত পোশাক–আশাক পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১৩: ৩৮
বিজ্ঞাপন