তীব্র গরমের মৌসুম চলছে। যেখানেই যাবেন গরম আর গরম। দিনের বেলায় ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা উঠে যাচ্ছে। শরীরে অনুভূত হচ্ছে আরও বেশি। গরমের কারণে আমাদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে অতি গরমে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ছে, প্রয়োজনীয় মিনারেল বের হয়ে যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটজনিত সমস্যা হচ্ছে। শরীরে যদি পানিশূন্যতা বেড়ে যায়, তাহলে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
গরমের কারণে শরীরে যে প্রভাব পড়ে তার মূলেই হচ্ছে পানির ঘাটতি। অনেকে মাথা ঘোরা থেকে মূর্ছা যেতে পারেন। হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, যার কারণে শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায়। ত্বক থেকে প্রয়োজনীয় তরল বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ফুসকুড়ি, চুলকানি দেখা দেয়। রক্তে পানির প্রবাহ সঠিক না হওয়ার কারণে অনেকের গোড়ালি ফুলে যায় আর হাঁটতে কষ্ট হয়। রাতে ঘুমের সময় কারও কারও পেশিতে টান পড়ে। এই গরমে যাঁদের আগে থেকেই কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে, যেমন হৃদ্রোগ বা বক্ষব্যাধি রয়েছে, তাঁদের শরীর আরও খারাপ হতে পারে। কারণ, গরম আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের হৃদ্পিণ্ড ও শ্বাসযন্ত্রের কাজ বেড়ে যায়।
প্রথমে এই চরম আবহাওয়া যাতে শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি না করতে পারে, তার জন্য কয়েকটি দিক খেয়াল রাখা জরুরি। বিশেষ করে এই গরমে শসা হতে পারে পানির ঘাটতির একটি আদর্শ পরিপূরক। আপনি সকালে নাশতার আগে একটি শসা এক গ্লাস পানিতে কয়েকটি পুদিনাপাতা দিয়ে ব্লেন্ড করে স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন। এই শসার সঙ্গে দুই টুকরা আনারস যোগ করেও খেতে পারেন। এতে পানি ঘাটতির সঙ্গে মিনারেল ঘাটতিও পূরণে কাজ করবে। এই স্মুদি ডায়াবেটিক রোগীরাও খেতে পারবেন।
সকালে পান্তা ভাত খেতে পারেন। যাঁদের পেটে সমস্যা আছে, তাঁরা এ সময় ভালো উপকার পাবেন এতে। যাঁদের আইবিএসজনিত সমস্যা আছে, তাঁদের এই গরমে সমস্যা বেড়ে যায়। আবার লাল চালের পান্তা ভাত ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ঘাটতি পূরণে একটি আদর্শ পথ্য।
মাঝ দুপুরে যখন গরমের তীব্রতা বেড়ে যায়, তখন কাঁচা আমের শরবত গুড় মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার শরীর ঠান্ডা থাকবে, ঘাম কমবে, শরীরে তাপ শোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।তীব্র গরমে লেবুর শরবত শরীরের ক্লান্তি দূর করে। সে ক্ষেত্রে একদম সাধারণ পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। গরমে ক্লান্ত হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়, তাই ক্লান্তি দূর করতে লেবুর শরবতে গুড় মিশিয়ে পান করতে পারেন।
গরমে শরীর ঠিক রাখতে কিছু ফল খুবই কার্যকর। তার মধ্যে বাঙ্গি হচ্ছে শরীরে তোপ শোষণ করার জন্য সবচেয়ে ভালো। বাঙ্গি আপনি জুস বানিয়ে গুড় মিশিয়ে খেতে পারেন।
গরমে পানি বেশি পান করতে হবে। কিন্তু কিডনি বা হৃদ্যন্ত্রের দুর্বলতাজনিত কারণে দেহে পানি আসার প্রবণতা থাকলে পানি পানে সতর্ক থাকতে হবে। আর সবার ক্ষেত্রেই পানি পান করতে হবে ধীরে ধীরে। একবারে দুই-তিন গ্লাস পানি পান করে দুই-তিন ঘণ্টা পানি পান না করে থাকা চলবে না। প্রতি আধা ঘণ্টা অন্তর আধা গ্লাস করে পানি পান করলে শরীর পানিশূন্য হবে না।
ঠান্ডা পানি বা আইসক্রিম! অনেকে মনে করেন, আইসক্রিম ও ঠান্ডা পানি, ঠান্ডা বোতলজাত কোমল পানীয় খেলে বা পান করলে গরম কম লাগবে। কিন্তু এতে শরীরে উল্টো পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে জন্যই ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম কিংবা কোমল পানীয় গ্রহণ করার পরপরই তৃষ্ণার্ত বোধ করে মানুষ।
চা ও কফি গরমে পান করা উচিত নয়। চা-কফির ক্যাফেইন দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে।