বাংলাদেশের শীতের সবজির সম্ভারে এক অনন্য সংযোজন ব্রকলি। সঁতে, স্টার ফ্রাই, স্যুপ বা চাইনিজ পদে তো বটেই, বিগত এক দশক ধরে দেশে বড় পরিসরে ব্রকলি চাষ হওয়ায় ভাতের পাতে ব্রকলিভাজি, ব্রকলিভর্তা এখন ঘরে ঘরেই খাওয়া হয়। সবুজ ফুলকপি বলা যায় একে; যদিও ফ্লেভার অনেকটাই আলাদা। বাধাকপি, ফুলকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউটের মতো ব্রকলিও অত্যন্ত উপকারী ক্রুসিফেরাস–জাতীয় সবজির মধ্যে পড়ে।
ব্রকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, আয়রন, পটাশিয়াম আর অন্যান্য সবজির তুলনায় বেশ পরিমাণ প্রোটিন। তবে কাঁচা বা অল্প রান্না করে খেলেই পুষ্টি বেশি মেলে ব্রকলি থেকে। কাঁচা ব্রকলির ৯০ শতাংশই জলীয় অংশ। এ ছাড়া রয়েছে ৭ শতাংশ শর্করা, ৩ শতাংশ আমিষ। এদিকে ফ্যাট নেই এতে কোনো রকম। আবার এক কাপ ব্রকলি মানে মাত্র ৩১ ক্যালরি। সেই সঙ্গে মিলবে ২ দশমিক ৪ গ্রাম খাদ্য আঁশ, যা হজমশক্তি বাড়ায় আর ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। আধা কাপ ব্রকলিতেই পাওয়া যায় দিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন কে ওয়ানের ৭০ শতাংশ। বর্তমান গবেষণার ফলাফল বলে, রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় আর হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এই পুষ্টি উপাদান। অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফোলেট বা ভিটামিন বি নাইনের ভালো উৎস ব্রকলি। আবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হৃদ্রোগ প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর পটাশিয়াম আছে এতে প্রচুর। সেই সঙ্গে ব্রকলির আয়রন রক্তে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়ক।
ব্রকলির ফাইটোনিউট্রিয়েন্টগুলোর মধ্যে সালফোরাফেন সবচেয়ে বেশি পরিমাণ থাকে। এ নিয়ে গবেষণাও বেশি। বলা হয়, এই পুষ্টি উপাদানের বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। ইনডোল থ্রি কার্বিনোলেরও একই ধরনের স্বাস্থ্যগুণের কথা গবেষণায় উঠে এসেছে। ব্রকলিতে আরও আছে লুটেইন, জ্যান্থিন আর বিটা ক্যারোটিনের মতো ক্যারোটিনয়েড। এগুলো আবার চোখ ভালো রাখতে দারুণ কার্যকর। ব্রকলির ক্যাম্পফেরল নামের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হৃদ্রোগ, ক্যানসার, বিভিন্ন রকমের প্রদাহ আর অ্যালার্জির বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। আবার এতে আছে কোয়েরসেটিন নামের আরেকটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
ব্রকলিতে থাকে সালফোরাফেনের মতো আইসোথায়োসায়ানেট গোত্রের যৌগ, যা যকৃতের এনজাইমের স্বাভাবিক নিঃসরণ নিশ্চিত করে, প্রদাহ কমায়, রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। সবচেয়ে বড় কথা, এই উপাদান আণবিক পর্যায়ে ক্যানসারের কোষ তৈরি আর ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করতে পারে। তবে অপেক্ষাকৃত কচি ব্রকলিতে সালফোরাফেন বেশি পাওয়া যায়।
ব্রকলি খেলে পরিপাকতন্ত্রে পিত্তরস তৈরি হয় যথেষ্ট। আর এই পিত্তরসই চর্বি হজম করে ভালোভাবে। যকৃৎ থেকে উৎপন্ন হয়ে পিত্তথলিতে জমানো এই পিত্তরস চর্বি–জাতীয় খাবার পেটে ঢুকলেই কাজ শুরু করে। ব্রকলির পুষ্টি উপাদানগুলো কোলেস্টেরল থেকে নতুন করে পিত্তরস তৈরি করতে সহায়তা করে। ফলে কোলেস্টেরল কমে আসে। স্টিম করা ব্রকলিই এ ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর।
এমনিতে ব্রকলিতে অ্যালার্জি হয় বলে জানা যায়নি। তবে কাঁচা বা অর্ধসেদ্ধ ব্রকলি খুব বেশি খেলে থাইরয়েড হরমোনের কম-বেশি হতে পারে এ ক্ষেত্রে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য। যাঁরা রক্ত তরল রাখতে ব্লাড থিনার গ্রহণ করে থাকেন, ব্রকলির ভিটামিন কে তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। কারও কারও ক্ষেত্রে ব্রকলি বেশি খেলে পেট ফাঁপা বা হজমে সমস্যা হতে পারে।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, ভেরি ওয়েল হেলথ।
ছবি: পেকজেলসডটকম