করলা একেবারে অন্য রকম একটি সবজি। কারণ, এর স্বাদ পুরোপুরি তেতো। এ কারণে অনেকেই এটি খেতে ভীষণ অপছন্দ করেন। আবার এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের প্রিয় সবজির তালিকায় রয়েছে করলা। তবে এর স্বাদ যেমনই হোক না কেন, এর রয়েছে অনন্য সব স্বাস্থ্য উপকারিতা। করলায় আছে যথেষ্ট ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফোলেট, পটাশিয়াম ও আয়রনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব পুষ্টি উপাদান। চলুন জেনে নেওয়া যাক করলার ছয়টি অনন্য স্বাস্থ্য উপকারিতা।
প্রাচীনকাল থেকে অনেকেই এই সবজিকে ডায়াবেটিক রোগীর পথ্য হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, করলা সত্যিই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ২৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে ৩ মাসের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২ হাজার মিলিগ্রাম করলা গ্রহণের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। সেই সঙ্গে করলা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিনের নিঃসরণকেও উৎসাহিত করে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিয়মিত করলার রস খেলে দেহে ক্যানসারের কোষগুলো বিনষ্ট হয়ে যায়। কারণ, করলার রসে রয়েছে ক্যানসারবিরোধী উপাদান। গবেষকদের মতে, করলার ঘনীভূত নির্যাস ক্যানসারের কোষগুলোকে বিস্তার লাভ করতে দেয় না। এটি শরীরকে সতেজ রাখে। তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় করলাকে অন্তর্ভুক্ত করে পেতে পারেন ক্যানসারের হাত থেকে রক্ষা।
করলা বিভিন্ন প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করে। এমনকি এটি শরীরে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রবেশ করতে বাধা দিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলো শরীরের ঢাল হিসেবে কাজ করে। সেই সঙ্গে টিউমার ও ক্যানসারের কোষগুলোকেও বিনষ্ট করে।
করলায় রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও অন্যান্য শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। এগুলো বলিরেখা, অল্প বয়সে ত্বকে বয়সের ছাপ ও চর্মরোগের মতো সমস্যাগুলোর হাত থেকে রক্ষা করে। এমনকি এই সবজি ত্বককে ব্রণের হাত থেকেও বাঁচায়। এ ছাড়া সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুনরায় ত্বকের জেল্লা ফিরে পেতে পান করতে পারেন করলার জুস। এই জুস ত্বক ও চুল—উভয়কেই হাইড্রেটেড ও সুন্দর রাখে।
ওজন কমাতে করলা বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কারণ, এতে ক্যালোরির মাত্রা কম থাকে। অন্যদিকে ফাইবার থাকে বেশি মাত্রায়, যা শরীরে অবাঞ্ছিত চর্বি জমতে বাধা দেয়। এ ছাড়া এই ফাইবার হজমপ্রক্রিয়াকেও সহজতর করে শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি অতিরিক্ত ক্ষুধা হ্রাস করে। তাই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সমস্যায় থাকলে খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন করলা কিংবা করলার জুস।
চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করতে করলা খাওয়া যায়। কারণ, এতে ভিটামিন এ আর বিটা ক্যারোটিনের মতো বেশ কিছু যৌগ রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি চোখের ছানি, দেখতে সমস্যা ও চোখ লাল হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি দেয়। এমনকি এই সবজি আপনার চোখের ডার্ক সার্কেল কমিয়ে আনতেও সাহায্য করে।
সূত্র: হেলথলাইন