কালিজিরা আর কালিজিরার তেলের আছে অনেক স্বাস্থ্যগুণ। এই তেল ২০০০ বছরের বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যগতভাবে ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই তেলের বেশ কিছু উপকারী দিক রয়েছে। আর কালিজিরার তেল নিয়মিত সেবন করলে তা আমাদেরকে বাঁচাতে পারে বিভিন্ন রোগ থেকে। বয়স ও শরীরের ওজন ভেদে দিনে ১ থেকে ২ চা–চামচ কালিজিরার তেল গ্রহণ করা যথেষ্ট। এবার একনজরে কালিজিরার তেল নিয়মিত সেবন করলে যেসব রোগ থেকে বাঁচা যাবে, সেগুলো দেখে নেওয়া যাক।
১. ক্যানসার
কালিজিরার তেলে উচ্চমাত্রায় অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে। এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এমন একটি যৌগ, যা কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যালের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি প্রদাহ কমাতে পারে এবং ক্যানসারের মতো রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে। বিশেষ করে কালিজিরার তেল থাইমোকুইনোন-সমৃদ্ধ, যার শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে যে এই যৌগ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
২. হাঁপানি বা অ্যাজমা
হাঁপানি হলে শ্বাসনালিগুলোর ভেতরের দিকের দেয়াল ও ঝিল্লি ইনফ্ল্যামেশন হয়ে ফুলে যায় এবং এর চারপাশের পেশিগুলো সংকুচিত হয়। এতে শ্বাসকষ্ট হয়। গবেষণায় দেখা গেছে কালিজিরার তেল, বিশেষ করে তেলে থাকা থাইমোকুইনোন শ্বাসনালিতে প্রদাহ কমিয়ে এবং পেশি শিথিল করে হাঁপানির চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।
৩. ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের শর্করার উচ্চমাত্রা কিডনি রোগ, চোখের রোগ, স্ট্রোকসহ নানা রোগের জটিলতা ও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে নিয়ে করা বেশ কয়েকটি গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে প্রতিদিন ২ গ্রাম করে কালিজিরার তেলের ডোজ ফাস্টিং অবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
৪. রক্তচাপ ও অতিরিক্ত কোলেস্টেরল
কালিজিরার তেল উচ্চ রক্তচাপ ও অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে পারে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে। উচ্চ রক্তচাপ ও ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরলের আধিক্য হৃদ্রোগের জন্য ঝুঁকির কারণ। দুটি গবেষণায় দেখা যায়, ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ গ্রাম কালিজিরার তেলের ক্যাপসুল গ্রহণ করলে এলডিএল আর সেই সঙ্গে মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ৬ সপ্তাহের জন্য রাতে খাওয়ার পর ২ চা–চামচ বা ১০ গ্রাম কালিজিরার তেল গ্রহণ করলে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। এ ছাড়া আধা চা–চামচ কালিজিরার তেল দিনে দুবার চার সপ্তাহের জন্য গ্রহণ করলে রক্তচাপের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেতে পারে। তবে এ ব্যাপারে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
৫. আলঝেইমার ও পারকিনসন্স
মস্তিষ্কের টিস্যুর প্রদাহকে নিউরো ইনফ্ল্যামেশন বলা হয়। এটি আলঝেইমার ও পারকিনসন্সের মতো রোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে মনে করা হয়। গবেষণা বলছে, কালিজিরার তেলের থাইমোকুইনোন এই নিউরো ইনফ্ল্যামেশন কমাতে পারে। তাই এটি আলঝেইমার বা পারকিনসন্স রোগের মতো মস্তিষ্কের ব্যাধি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে।
আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর কালিজিরার তেলের আরও অনেক উপকারী ভূমিকা থাকতে পারে, যেগুলো নিয়ে এখন বিস্তর গবেষণা হচ্ছে আর আশানুরূপ ফলও মিলছে। যেমন:
* কালিজিরার তেল রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো হ্রাস করে।
* এই তেল নিয়মিত সেবনে পুরুষের ফার্টিলিটি রক্ষা ও বৃদ্ধি পায়।
* কালিজিরার তেল অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
* কালিজিরার তেল ত্বক ও চুলের জন্য ভালো হতে পারে।
এটি বিভিন্ন ত্বকের সমস্যায় ওষুধের মতো কাজ করে। যেমন: ব্রণ, একজিমা শুষ্ক ত্বক, সোরিয়াসিস ইত্যাদি।
ছবি: পেকজেলস ডট কম