
শীতকালে নাক বন্ধ হওয়া খুব সাধারণ সমস্যা। এটি সাধারণত অ্যালার্জি নয়, বরং পরিবেশগত ও শারীরিক কারণে হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে নন-অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বা ভাসোমোটর রাইনাইটিস বলা হয়, যা ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাসের কারণে নাকের ঝিল্লি বা মিউকাস মেমব্রেন জ্বালাপোড়া করে এবং ফুলে যায়। ফলে নাকের প্যাসেজ সংকুচিত হয়ে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই সমস্যা প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক এই পরিস্থিতি কেন হয় সে সম্পর্কে—
শীতে বাইরের বাতাস ঠান্ডা ও শুষ্ক হয়। এটা নাকের অভ্যন্তরীণ ঝিল্লিকে অস্বস্তিতে ফেলে, ফলে নাকের রক্তনালি ফুলে যায় এবং অতিরিক্ত মিউকাস (শ্লেষ্মা) উৎপাদন হয়।
নাকের কাজ হলো শ্বাসের বাতাসকে উষ্ণ ও আর্দ্র করা। ঠান্ডা বাতাসে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা কোল্ড এয়ার-ইনডিউসড রাইনাইটিস সৃষ্টি করে।
ইনডোর হিটিং (হিটার বা রুম হিটার) বাতাসকে আরও শুষ্ক করে, যা নাকের ঝিল্লি শুকিয়ে মিউকাস ঘন করে তোলে এবং বন্ধ করে দেয়।
শীতে কমন কোল্ড বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে। এগুলো নাকের ঝিল্লিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে কনজেশন বা ব্যাঘাত ঘটায়।
ঘরে বেশি সময় কাটানোর কারণে ভাইরাস ছড়ানো সহজ হয়।
জানালা-দরজা বন্ধ থাকায় ঘরে ধুলো, পোষা প্রাণীর খুশকি থেকেও হয়, মাইট জমে।
এগুলো অ্যালার্জিক বা নন-অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ট্রিগার করে নাক বন্ধ করে।
তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন (গরম ঘর থেকে ঠান্ডা বাইরে যাওয়া) নাকের রক্তনালি সংকুচিত করে।
কিছু ক্ষেত্রে সাইনাস ইনফেকশন বা নাকের গঠনগত সমস্যা (যেমন ডিভয়েটেড সেপটাম) শীতে আরও খারাপ হয়।
শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায় এবং ইনডোর হিটিং এটিকে আরও খারাপ করে। ফলে নাকের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল হয় এবং কনজেশন বাড়ে। এটি অ্যালার্জির মতো লাগলেও প্রায়শই নন-অ্যালার্জিক হয়।

তাৎক্ষণিক উপশম (৫ থেকে ১৫ মিনিটে কাজ করে)
স্টিম ইনহেলেশন (সবচেয়ে কার্যকরী): গরম পানিতে ২-৩ ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অয়েল/মেন্থল/ভিক্স দিয়ে তোয়ালে মাথায় দিয়ে ১০ মিনিট নাক-মুখ দিয়ে ভাপ নিন। এতে মিউকাস পাতলা হয় ও রক্তনালি খুলে যায়। দিনে ৩-৪ বার করুন।
গরম পানির সেক: গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে নাক-গালের ওপর ৫ থেকে ১০ মিনিট রাখুন। সাইনাস খুলে যায়।
চা পান করা: ঘরোয়া প্রাকৃতিক চা বানিয়ে পান করতে পারেন। তার মধ্যে আদা, তুলসী, মধু চা বেশ জনপ্রিয়।
এককাপ পানিতে এক টুকরা আদা ছেঁচে দিন, সঙ্গে ৫/৬টি তুলসী পাতা দিয়ে চায়ের মতো জ্বাল দিন, তারপর গরম অবস্থায় একটু কমে গেলে সেটাতে মধু মিশিয়ে পান করবেন।
স্যালাইন স্প্রে বা নাক ধোয়া: ১ গ্লাস কুসুম গরম পানি, ১/৪ চা চামচ লবণ, এক চিমটি বেকিং সোডা মিশিয়ে নাক ধুবেন, এতে নাকের ভেতর জমে থাকা মিউকাস বের হয়ে যায়। দিনে ৪ থেকে ৬ বার ব্যবহার করতে পারেন।
প্রাকৃতিক নিয়মে স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি নিয়ম আপনার ধারণা পাল্টে দিতে পারে—সেটা হলো রাতে শোবার আগে দুই ফোঁটা ঘি (অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে) নাকে দিয়ে শোবেন। ঘি সাধারণত ঘন হয়। এটি একটি চামচে হালকা গরম করে তেলের মতো হয়ে গেলে সেটাকে ঠান্ডা করে একটি ড্রপার দিয়ে দুই ছিদ্রে একফোঁটা করে দেবেন। এতে করে নাকে ছিদ্রে এই ঘি নিরাময়ে কাজ করবে। শুধু রাতে একবারই ঘি দেবেন। এতে ধীরে ধীরে নাক খোলা থাকবে, ঘুম ভালো হবে, সকালে হাঁচি কমবে। সকালে কফ বের হবে। এতেই স্থায়ী সমাধানে যেতে পারবেন।
এমন সমস্যা থাকলে যে খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন তার মধ্যে ঠান্ডা খাবার, বাসি খাবার, বিশেষ করে ফ্রিজে রাখা খাবার গরম করে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, সেই সঙ্গে দুধ ও দুধ দিয়ে তৈরি খাবার পরিহার করতে হবে।
আমাদের দেশ পৃথিবীর অন্যতম দূষণের দেশ, যে দূষণে আপনি আমি কারও ভালো বা সুস্থ জীবনযাপন করা একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়, এটা একক কোনো বিষয় নয়, রাষ্ট্রের কাজ; কিন্তু আমরা এমন সমাজে থাকি যা মানুষ হিসেবে ভালো থাকতে চাইলে আপনাকে নিজে থেকেই কিছু করতে হবে। তাই আপনার সুস্থতা নিশ্চিত করতে আপনি নিজ থেকে কিছু নিয়ম মেনে চলুন। তাতে আপনি সুস্থ থাকবেন।
লেখক: খাদ্য ও পথ্য বিশেষজ্ঞ<bha>;</bha> প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: এআই ও পেকজেলসডটকম