শিশুদের লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটি ও আলঝেইমার কি অভিন্ন
শেয়ার করুন
ফলো করুন

পাঠকদের অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ে মূল্যবান মতামত দেওয়ার জন্য। আগের পর্ব সম্পর্কিত বেশ কিছু প্রশ্ন আমার কাছে এসেছে। এর মধ্যে একটি ছিল শিশুদের কি আলঝেইমার বা ভুলে যাওয়া রোগ হতে পারে?

২০ বছর আগেও আলঝেইমার বলতে বয়স্কদের রোগই বোঝানো হত
২০ বছর আগেও আলঝেইমার বলতে বয়স্কদের রোগই বোঝানো হত

আজ থেকে ২০ বছর আগেও ধারণা ছিল যে আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়া কেবল বৃদ্ধদের হয়ে থাকে। যদিও এরই মধ্যে বদলে গেছে প্রেক্ষাপট। ২০২৩ সালে চীনে ১৯ বছর বয়সী একজন তরুণ আলঝেইমার রোগী শনাক্ত হয়। এর আগে তিনি বহু বছর ধরে ভুলে যাওয়া রোগে ভুগছিলেন। এ ছাড়াও ২০১৮ সালে ২৩ বছর বয়সী আরও একজনের আলঝেইমার ধরা পড়ে। তিনিও বহু বছর ধরে ভুলে যাওয়া রোগে ভুগছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আরও একটি প্রশ্ন ছিল: আলঝেইমার আর শিশুদের লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটি কি একই?

এ প্রসঙ্গে বলি, আলঝেইমার হলে মানুষ যা কিছু শিখেছে, সবকিছু সে ভুলে যায় আর শিশুদের লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটি হলো শিশুর মস্তিষ্ক ঠিকমতো গঠনই হতে পারে না; ফলে সে কোনো কিছু সহজভাবে শিখতে পারবে না।

লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটির অনেকগুলো স্তর আছে
লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটির অনেকগুলো স্তর আছে

লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটির অনেকগুলো স্তর আছে। আমি এখানে বলছি বেসিক লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটির কথা। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে আমি কেন লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটির কথা লিখতে গিয়ে শিশুদের আলঝেইমারের প্রসঙ্গ তুলেছি?  কারণ, উভয় ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ঘুমের ভেতর মস্তিষ্কের পরিচ্ছন্নতা প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না হওয়ায় মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আলঝেইমার রোগীদের মাথার সামনের দিকের অর্থাৎ মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্সে এমিলয়ডস প্লাকস পাওয়া গেছে, যা হলো মস্তিষ্কের সামনের অংশে জমা হওয়া ক্যালসিয়াম। মস্তিষ্কের এই অংশেই বুদ্ধি এবং স্মৃতি জমা থাকে। কিন্তু এর পরিবর্তে ক্যালসিয়াম বা এমিলয়ডস প্লাকস জমা হলে মস্তিষ্ক নতুন করে কিছু শেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। পাশাপাশি আগের স্মৃতিও মুছে যায়।

এখন যেসব শিশুদের লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটি আছে, তাদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তাদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কর্টেক্সে আলঝেইমার রোগীদের মতো ক্যালসিয়াম বা এমিলয়ডস প্লাকস জমা হয়। আর সেটা এত ছোট বয়সে হলে সেই শিশুর যে মস্তিষ্ক পরিণত হয়ে ওঠার সুযোগই পায় না। ফলে তার মস্তিষ্কের সংরক্ষণক্ষমতা, স্মৃতি জমা রাখার ক্ষমতা এবং কোনো কিছু শেখার ক্ষমতা তৈরি হওয়ার সুযোগই পায় না। এতে করে এসব শিশু সারা জীবন ধরে লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটিতে ভোগে।

এ জন্য রাত ৯টার ভেতর শিশুদের ঘুমাতে যাওয়া খুবই জরুরি। যদিও হালের শিশুরা বিভিন্ন কারণে দেরিতে ঘুমাতে যায়; এতে করে তাদের ঘুমের স্তরগুলো ঠিকমত পূরণ হতে না পারায় মস্তিষ্কের গঠনও ঠিকমতো হয় না। এ বিষয় নিয়ে আমি আগের পর্বগুলোতে বিস্তারিত লিখেছি। সেখানে উল্লেখ হয়েছে, কীভাবে রাতের প্রহরগুলোর সঙ্গে মানুষের ঘুমের স্তরগুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

লেখক: একাধারে নেচারোপ্যাথিক ডাক্তার, পুষ্টিবিদ, কিনেজিওলজিস্ট, ট্রমা রিলিজ থেরাপিস্ট, অটিজম স্পেশালিস্ট, মাইন্ড সেট ট্রেইনার। তিনি কাজ করছেন লন্ডনের ১০, হারলে স্ট্রিট ক্লিনিক এবং অনলাইনেও আছে তাঁর উপস্থিতি।
ই–মেইল: [email protected]
ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৬: ০০
বিজ্ঞাপন