বন্যায় সহজে পানি বিশুদ্ধকরণে যেভাবে ব্যবহার করবেন ফিটকিরি ও ব্লিচিং
শেয়ার করুন
ফলো করুন

কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী ও পার্বত্য চটগ্রামের বন্যাকবলিত অঞ্চলের নলকূপগুলো ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পানি ফোটানো ও ফিল্টার করার সুযোগও নেই। যদিও ত্রাণ সহযোগিতায় সারা দেশের মানুষ চেষ্টা করছে বানভাসিদের সাহায্য করতে। বিশুদ্ধ পানি আর পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হচ্ছে তাঁদের কাছে। কিন্তু এ সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। তাই পানিবন্দীদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। ঘরোয়া কিছু পদ্ধতিতেই পানি বিশুদ্ধ করা যায়।

পটাশ, আয়োডিন ও ক্লোরিন পানি বিশুদ্ধ করার কাজে বহুল ব্যবহৃত কেমিক্যাল। এ উপাদানগুলো পাওয়া যায় খুব সহজে আর অল্প খরচে। পটাশের সবচেয়ে সহজলভ্য উৎস হলো ফিটকিরি। আর ক্লোরিন ট্যাবলেট পাওয়া যায় ফার্মেসিগুলোতে। তা না পাওয়া গেলে ব্যবহার করা যেতে পারে ব্লিচিং।

বিজ্ঞাপন

ফিটকিরি

ফিটকিরির সাহায্যে পানি পরিশোধন করা যেতে পারে
ফিটকিরির সাহায্যে পানি পরিশোধন করা যেতে পারে

ফিটকিরি হলো সোডিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের একটি যৌগ লবণ। এর রাসায়নিক নাম পটাশ অ্যালাম। ইংরেজিতে এটি অ্যালাম (Alum) নামে পরিচিত। অ্যালুমিনিয়ামের ধনাত্মক আয়ন পানিতে থাকা ছোট কঠিন কণাগুলোকে একসঙ্গে করে কলয়েড তৈরি করে। ছোট কণাগুলো একসঙ্গে ভারী হয়ে তলানি হিসেবে নিচে জমা পড়ে আর পানিকে পরিষ্কার করে। এক কলসি বা জগ বা পাতিল পানিতে সামান্য পরিমাণ ফিটকিরি মিশিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা রেখে দিলে পানির ভেতরে থাকা ময়লা তলানিতে স্তর হয়ে জমে। এ ক্ষেত্রে পাত্রের ওপর থেকে পরিশোধিত পানি সংগ্রহ করে তলানির পানি ফেলে দিতে হবে। অথবা পানি ছেঁকে নিয়ে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
পানিতে ফিটকিরি ব্যবহার করলে পানিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট ধ্বংস হয়। ফিটকিরির সাহায্যে পরিশোধিত হওয়া পানি খেলে তাই টাইফয়েড, ডায়রিয়া, আমাশয় ও কৃমির সংক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

ক্লোরিন ট্যাবলেট

ক্লোরিন ট্যাবলেট দিয়ে পানি পরিশোধন করা যায় সবচেয়ে সহজে। সাধারণত প্রতি তিন লিটার পানিতে একটি ট্যাবলেট বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন খবরে জানা যাচ্ছে, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের ঘাটতি আছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয়। এ ক্ষেত্রে ব্লিচ ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্লিচিং

১০ লিটার পানিতে ব্লিচিং গুলিয়ে রেখে দিলে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাবে, যা ছেঁকে নিয়ে পান করা যাবে। ব্লিচে থাকা ক্লোরিন পানি বিশুদ্ধকরণে সাহায্য করে। ক্লোরিন পানিতে থাকা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। ব্লিচ বাজারে ক্লোটেক, ক্লোরেক্স ও ক্লোরক্স ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলিগ্রাম (১ লিটারের জন্য ১ মিলিগ্রাম) ব্লিচিং গুলিয়ে রেখে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করলেই খাওয়ার উপযুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।
ব্লিচিং দিয়ে পাওয়া নিরাপদ পানির সমস্যা হলো এ পানিতে ব্লিচিংয়ের একটি গন্ধ থেকে যায়। এ সমস্যা দূর করতে ঢাকনা খুলে পাত্রে রাখা পানি কাঠি দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়লে গন্ধ খানিকটা কমে আসে।
বন্যা–পরবর্তী সময়েও নলকূপের পানি বিশুদ্ধ করতে ব্লিচিং ব্যবহার করা হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর অনেকক্ষণ চেপে নলকূপের পানি ফেলে নিতে হবে। এরপর ব্লিচ মেশানো পানি টিউবওয়েলের ভেতরে ঢেলে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপর টানা আধঘণ্টা চেপে চেপে পানি ফেলে দেওয়ার পর বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায়।

ছবি: পেকজেলস ও উইকিপিডিয়া

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৬: ০০
বিজ্ঞাপন