শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি—হাতিরাও নিজেদের ত্বককে রোদ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। যদিও বাইরে থেকে দেখতে হাতির চামড়া শক্ত মনে হয়, কিন্তু আসলে তা বেশ সংবেদনশীল। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ঠেকাতে তারা শরীরে মাটি বা কাদা মাখে। বড় হাতিরা ছোটদেরও ধুলায় মাখিয়ে সুরক্ষা দেয়। নদী থেকে উঠে আসার পর কাদামাটির এই স্তরই প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের কাজ করে।
হাতি মানুষের কথা গভীরভাবে লক্ষ্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, তারা শুধু শব্দই শোনে না—বরং বক্তার কণ্ঠস্বরের ভেতর বিপদের আভাসও ধরতে পারে। কেনিয়ার অ্যাম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্কে এক পরীক্ষায় হাতিদের সামনে দুটি আলাদা দলের কণ্ঠস্বর বাজানো হয়—যার মধ্যে একটি দল হাতিদের শিকার করে এবং অন্যটি করে না। হাতিরা যখন শিকারী দলটির কণ্ঠস্বর শোনে, তখন তারা ভয়ে আঁটসাঁট হয়ে দাঁড়ায়। আশ্চর্যের বিষয়, এক এশিয়ান হাতি আবার কোরিয়ান ভাষার শব্দও নকল করতে শিখেছিল!
আমরা হয়তো বন্ধুর জন্মদিন বা কাজের তারিখ ভুলে যাই, কিন্তু হাতি কখনো কিছু ভোলে না। তাদের মস্তিষ্ক স্থলচর প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড়, আর তথ্য মনে রাখার ক্ষমতাও অসাধারণ। শুধু তা-ই নয়, গবেষণায় দেখা যায়, তাদের মস্তিষ্কে পিরামিডাল নিউরনের সংখ্যা মানুষের মস্তিষ্কের চেয়ে বেশি৷ কোথায় জলাশয় আছে, কবে কার সঙ্গে দেখা হয়েছিল—বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও তারা সব মনে রাখে। এমনকি এই তথ্য পরবর্তী প্রজন্মকেও জানিয়ে দেয়।
হাতিরা নাক ডাকা, কান্না করা,গর্জন করাসহ নানা ধরনের শব্দ করে থাকে। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে হাতি পা দিয়ে শুধু হেঁটেই চলে না, বরং তারা শুনতেও পায় পায়ের সাহায্যে । তাদের পায়ের তলায় থাকা স্নায়ুকোষ ২০ মাইল দূরের কম্পনও টের পায়। তাই দূরে বিপদ এলে হাতিরা আগেই সতর্ক হয়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, হাতি সংখ্যা বুঝতে পারে। এমনকি প্রশিক্ষণ দিয়ে কম্পিউটার টাচস্ক্রিনেও সঠিক উত্তর বেছে নিতে সক্ষম হয়েছে তারা। জাপানের গবেষকেরা একবার এশিয়ান হাতিদের কম্পিউটার টাচস্ক্রিন ব্যবহার শেখানোর চেষ্টা করেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিন হাতির মধ্যে একটি সহজেই বিভিন্ন জিনিসের সংখ্যা গুনে সঠিক উত্তর বেছে নিতে পেরেছিল। গবেষণায় আরও জানা গেছে, এশিয়ান হাতির গড় আইকিউ ২.১৪ আর আফ্রিকান হাতির ১.৬৭—যা তাদের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ।
ছবি: পেকজেলসডটকম