আমাদের দেহের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা বলে শেষ করা যাবে না। হাইড্রেটেড থাকতে এবং ক্লান্তি দূর করতে পানির কোনো বিকল্প নেই। তাই ক্লান্তি দূর করতে এবং হাইড্রেটেড থাকতে সবাই বেশি বেশি পানি পান করতে চেষ্টা করেন। তবে শুধু পানি পান না করে, তাতে সামান্য একটু লবণ মিশিয়ে নিলেই কিন্তু পাওয়া যায় অনেক উপকার। আর এগুলোর কথা অনেকেই জানেন না। পানিতে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পান করলে শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, পানির সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে পান করলে কী কী উপকার হয়।
দেহে পানির ভারসাম্য রক্ষা
লবণের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো সোডিয়াম, যা দেহের পানির ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঘাম, মূত্র বা অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পানি আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। বিশেষ করে প্রচণ্ড গরমের সময় বা ব্যায়ামের পর শরীরের তরল দ্রুত কমে যেতে পারে। এক্ষেত্রে, সামান্য লবণযুক্ত পানি পান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। কারণ, সোডিয়ামের মতো খনিজ উপাদানগুলো শরীরের পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পূরণে সহায়ক
শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে শুধু পানি নয়, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইট যেমন সোডিয়াম ও পটাসিয়ামও বেরিয়ে যায়। আর শুধু পানির সাহায্যে এই ঘাটতি পূরণ সম্ভব নয়। তবে সামান্য লবণযুক্ত পানি পান করলে এই ইলেকট্রোলাইটগুলো দ্রুত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। কোষে শক্তি উৎপাদনের জন্য সঠিক ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য অত্যন্ত জরুরি। সামান্য লবণযুক্ত পানি পান করলে কোষে শক্তি সরবরাহের প্রক্রিয়া উন্নত হয়, যা শরীরকে সারাদিন চাঙ্গা থাকতে সাহায্য করে। সোডিয়াম স্নায়ুর সংকেত আদানপ্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পেশি সংকোচন ও প্রসারণের জন্য অপরিহার্য। পর্যাপ্ত পরিমাণে সোডিয়াম না থাকলে পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এমনকি খিচুনিও দেখা দিতে পারে।
হজমে সহায়তা করে
হজমের জন্য লবণ খুবই জরুরি। কারণ এটি হজমপ্রক্রিয়ার প্রাথমিক দিকেই কাজে লাগে। লবণ লালার নিঃসরণ বাড়ায়, যা খাবার ভেঙে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়া, লবণ পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রিক রসের নিঃসরণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যা খাবার সহজে পরিপাকে সহায়ক। ফলে সামান্য লবণযুক্ত পানি হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে
প্রায় সবাই জানি, অতিরিক্ত লবণ উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই অনেকেই লবণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। তবে সঠিক মাত্রায় লবণ খেলে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। এমনকি সামান্য পরিমাণ লবণ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রেও সাহায্য করতে পারে। শরীরে পানির ভারসাম্য ঠিক থাকলে, রক্তের পরিমাণও সঠিক মাত্রায় থাকে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেক জরুরি।
শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সহায়ক
লবণের প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এক চিমটি লবণ পানির সঙ্গে পান করলে, লিভারের কার্যকারিতা বাড়ে।
ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক
জেনে অবাক হবেন, পানির সঙ্গে সামান্য একটু লবণ মিশিয়ে পান করলে ঘুম ভালো হয়। লবণের সোডিয়াম কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য লবণযুক্ত পানি পান করলে শরীর শিথিল থাকে, দুশ্চিন্তা কমে এবং অনেক ভালো ঘুম হয়।
ত্বকের জন্য উপকারী
ত্বক ভালো রাখতেও পানি পানের সময় সামান্য লবণ মেশাতে পারেন। লবণের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এগুলো ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। ফলে ত্বক আরও উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর দেখায়।
তবে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এতে উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনির সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যাঁরা উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লবণপানি পান করা উচিত।
সূত্র: ভেরি ওয়েল ফিট
ছবি: পেকজেলস ও ইন্সটাগ্রাম