জেনে নিন চিয়া সিড কারা খেতে পারবেন আর কারা পারবেন না
শেয়ার করুন
ফলো করুন

আমাদের বর্তমান সমাজে খাবার নিয়ে নানা পরিবর্তন এসেছে। অনেক ধরনের বৈচিত্র্যও এসেছে। খাবারের নানা গুণ জেনে নতুন নতুন খাবার খাচ্ছেন অনেকে। এতে করে ভালো–মন্দ মিলিয়ে নতুন একটা ট্রেন্ড চালু হয়েছে। এই ট্রেন্ডে আছে চিয়া সিডও, এটা এখন বেশ জনপ্রিয়। ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে অবশ্যই বর্তমান সময়ের একটা জনপ্রিয় সাপ্লিমেন্ট এই চিয়া সিড।

চিয়া সিড খাওয়ার জন্য স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে
চিয়া সিড খাওয়ার জন্য স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে

চিয়া সিড কখন খেতে হবে আর কখন নয়, সেটা নিয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এতে করে অনেক অযাচিত ও নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করা যাবে।
চিয়া সিড সাধারণত স্বাস্থ্যকর আর পুষ্টিকর হলেও নির্দিষ্ট কিছু রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে এটি খাওয়া ক্ষতিকর হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এমন কিছু অবস্থার উল্লেখ করা হলো, যেখানে চিয়া সিড খাওয়ার আগে সতর্কতা প্রয়োজন বা এড়িয়ে চলা উচিত:
নিম্ন রক্তচাপ: চিয়া সিডে থাকা ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অন্যান্য উপাদান রক্তচাপ কমাতে পারে। যাঁদের ইতিমধ্যে রক্তচাপ কম (হাইপোটেনশন), তাঁরা চিয়া সিড খেলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা অজ্ঞান হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
রক্ত পাতলাকারী ওষুধ গ্রহণকারী রোগী: চিয়া সিডে ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় এটি রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারে। যাঁরা রক্ত পাতলাকারী ওষুধ (যেমন: ওয়ারফারিন, অ্যাসপিরিন, ক্লোপিডোগ্রেল) গ্রহণ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়া রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

চিয়া সিডে ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে
চিয়া সিডে ওমেগা–থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে

অ্যালার্জি প্রবণতা: কিছু মানুষের চিয়া সিডে অ্যালার্জি হতে পারে, বিশেষ করে যাঁদের শর্ষে, তিল বা অন্যান্য বীজে অ্যালার্জি রয়েছে। এর লক্ষণ হতে পারে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট বা পেটের সমস্যা। প্রথমবার চিয়া সিড খাওয়ার সময় অল্প পরিমাণে খেয়ে পরীক্ষা করুন। অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিলে খাওয়া বন্ধ করে দিন।
পাচনতন্ত্রের সমস্যা: চিয়া সিডে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, গ্যাস বা পেটব্যথার কারণ হতে পারে। যাঁদের ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস), ক্রোন’স ডিজিজ বা অন্যান্য পাচনতন্ত্রের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত চিয়া সিড ক্ষতিকর হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

খাদ্যনালির বাধা বা গিলতে সমস্যা: শুকনা চিয়া সিড সরাসরি খেলে এটি পানি শোষণ করে ফুলে যেতে পারে, যা খাদ্যনালিতে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। যাঁদের গিলতে সমস্যা (ডিসফ্যাজিয়া) বা খাদ্যনালির সংকীর্ণতা আছে, তাঁদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে।

প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি: কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে চিয়া সিডে থাকা অ্যালফালিনোলেনিক অ্যাসিডের (এএলএ) অতিরিক্ত গ্রহণ পুরুষের প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। প্রোস্টেট ক্যানসারের ইতিহাস বা ঝুঁকি থাকলে সতর্ক থাকা উচিত।

গর্ভাবস্থা ও স্তন্যপান: গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের চিয়া সিড খাওয়ার নিরাপত্তা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা নেই। অতিরিক্ত ফাইবার বা ওমেগা–থ্রি গর্ভাবস্থায় পেটের সমস্যা বা অন্যান্য জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

সাইনাসের সমস্যা থাকলে চিয়া সিড খাওয়া উচিৎ হবে না
সাইনাসের সমস্যা থাকলে চিয়া সিড খাওয়া উচিৎ হবে না

অস্ত্রোপচারের আগে: চিয়া সিড রক্ত পাতলা করতে পারে, তাই অস্ত্রোপচারের আগে (সাধারণত দুই সপ্তাহ আগে) এটি খাওয়া বন্ধ করা উচিত। কারণ, এটি অস্ত্রোপচারের সময় রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

এ ছাড়া

• যখন নাক বন্ধ থাকে, সাইনাসের কনজেশন থাকে, মাথা ও শরীর ভার থাকে, তখন চিয়া সিড খাওয়া উচিত নয়। কারণ, একটি পিচ্ছিল জেলের মতো মিউসিলেজ তৈরি করে; এ থেকে ঠান্ডাজনিত সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
• যাঁদের ক্ষুধা কম লাগে, তাঁদের ক্ষেত্রে এটি ক্ষুধা আরও কমিয়ে দিতে পারে। কারণ, অতিরিক্ত ফাইবার থাকার কারণে সহজে হজম হয় না।
• যাঁদের স্লো মেটাবলিজমের কারণে ওজন বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে মেটাবলিজম আরও স্লো করে দিতে পারে। ফলে যাঁরা স্লো মেটাবলিজমে ওজন কমাতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে ওজন বরং বেড়ে যেতে পারে।
• যাঁদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা থেকে অ্যাজমাজনিত সমস্যা হয়, তাঁদের ক্ষেত্রেও কনজেশনের কারণে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
• যাঁদের জিবে সাদা আস্তরণ পড়ে, তাঁদের সাধারণত হজমশক্তি কম থাকে। তাঁদের ক্ষেত্রেও হজমক্ষমতা ঠিক না করে চিয়া সিড খাওয়া উচিত নয়।
• শরীর ঠান্ডা রাখে বিধায় পিত্তপ্রধান রোগীদের জন্য এটি নিয়মিত দারুণ খাবার হতে পারে। কিন্তু কাফাপ্রধান রোগীদের জন্য চিয়া সিড ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কখন চিয়া সিড খাওয়া ভালো
• ওজন কমানোর জন্য: সকালে স্মুদি, দই বা পানিতে ভিজিয়ে খেলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
• ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে পারে।
• শক্তিবৃদ্ধির জন্য: ব্যায়ামের আগে বা পরে এনার্জি বুস্টার হিসেবে।
• হজমশক্তি উন্নত করতে: প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া।
• ভেগান ডায়েটে: ডিমের বিকল্প হিসেবে চিয়া সিড জেল বেকিং বা রান্নায় ব্যবহার করা যায়।

কীভাবে খাবেন

ভিজিয়ে খান: ১ টেবিল চামচ চিয়া সিড ১ কাপ পানিতে ১৫-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এটি পানীয়, স্মুদি, দই বা ওটমিলে মিশিয়ে খেতে পারেন।
পরিমাণ: দিনে ১-২ টেবিল চামচের বেশি না খাওয়াই ভালো।

চিয়া সিড স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী; বিশেষ করে হজম, হৃদ্‌রোগ, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য। তবে অতিরিক্ত খাওয়া, অ্যালার্জি বা নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। যদি আপনার কোনো বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তবে চিয়া সিড খাওয়ার আগে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।
লেখক: খাদ্য ও পথ্যবিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
ছবি: পেকজেলসডটকম

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ০১: ০০
বিজ্ঞাপন