পরিবেশদূষণ, ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি, কেমিক্যালসমৃদ্ধ প্রসাধনী আর হেয়ারস্টাইলিং টুল ব্যবহার করে আমরা প্রতিনিয়ত চুলের ক্ষতি করছি। এতে চুল দুর্বল হয়ে ভেঙে যায়। আর চুলের বৃদ্ধিও কমে যায়। তখন হন্যে হয়ে খুঁজতে হয় এ সমস্যাগুলোর সমাধান। অথচ প্রতিটি বাসাবাড়িতেই পাওয়া যায় একটি প্রাকৃতিক সমাধান; আলু।
সুস্থ ও সুন্দর চুল পেতে মাথার ত্বকের পিএইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আলুর রস এই পিএইচের মাত্রা ঠিক রাখে। এ ছাড়া আলুতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ চুলকে ঝলমলে রাখে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য প্রয়োজনীয় কোলাজেন তৈরিতেও আলুতে এই ভিটামিন কাজ করে। এককথায় বলতে গেলে পুষ্টিগুণে ভরপুর আলুর রস চুলকে মজবুত, চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা ও চুল পড়া কমায়।
• আলু প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ, যা চুলকে সুস্থ ও সুন্দর করে তুলতে পারে।
• আলুতে ভিটামিন বি৬ লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে, যা মাথার ত্বক ও চুলের ফলিকলে অক্সিজেন ও পুষ্টি বহন করে।
• আলুতে থাকা ভিটামিন সি অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা চুলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। আর কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়। কোলাজেন চুলকে মজবুত করে।
• আলুতে থাকা পটাশিয়াম মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। এই পুষ্টি উপাদান মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে আর চুলকেও হাইড্রেটেড রাখে।
• চুলের ফলিকলে অক্সিজেন পরিবহনের জন্য অপরিহার্য আরেকটি উপাদান হলো আয়রন। এটিও আলুতে থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ।
চুলের বৃদ্ধির জন্য আলুর রস ব্যবহারের নিয়ম
আলুর রসের সঙ্গে আরও কিছু উপকরণ মিশিয়ে সহজে তৈরি করা যায় একটি ঘরোয়া টোটকা।
২/৩টি মাঝারি আলুর রস
১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
১ টেবিল চামচ মধু
আলু ধুয়ে ও খোসা ছাড়িয়ে ছোট টুকরা করে নিতে হবে। তারপর আলুর টুকরাগুলো ব্লেন্ডের পর একটু পানি মিশিয়ে হালকা করে নেওয়া যেতে পারে। সেই রস ছেঁকে তাতে অলিভ অয়েল আর এক টেবিল চামচ মধু যোগ করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে জাদুকরি একটি হেয়ার প্যাক। এতে থাকা অলিভ অয়েল শুষ্ক চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে আর মধু চুলকে ঝলমলে করে তোলে।
আলুর রসের এই মিশ্রণ সরাসরি মাথার ত্বকে ও চুলে ম্যাসাজ করুন। যেখান থেকে বেশি চুল পড়ছে বা চুলের ঘনত্ব কমে গেছে, সেখানে ভালোভাবে এই মিশ্রণ ব্যবহার করতে হবে। চুলের গোড়ার দিকে ভালোভাবে লাগানোর পর অবশিষ্ট রস চুলের দৈর্ঘ্যে লাগাতে হবে। এরপর ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন। চাইলে এই মিশ্রণ ব্যবহারের পর একটি শাওয়ার ক্যাপ পরে নিতে পারেন, যা স্ক্যাল্পের শোষণক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এরপর কুসুম গরম পানিতে চুল ধুয়ে শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার ব্যবহার করে নিতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে এভাবে আলুর রস সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করুন।
• চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে: আলুর রসের পুষ্টিগুণ চুলের ফলিকলকে পুষ্ট করে, বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে ও চুল ঘন করে।
• চুল পড়া রোধ করে: চুলের গোড়া মজবুত করে, মাথার ত্বকের পুষ্টি উন্নতি করে ও আলুর রস চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
• উজ্জ্বলতা ও শক্তি যোগ করে: আলুর রসের নিয়মিত ব্যবহার আপনার চুলকে চকচকে, নরম ও ক্ষতির বিরুদ্ধে কাজ করে।
লেখক: খাদ্য ও পথ্য–বিশেষজ্ঞ; প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র
অনুলিখন: কানিজ ফাতেমা
ছবি: পেকজেলসডটকম